রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলের জন্য জেলাবাসীর সাথে প্রতারণা ১০০ শয্যার নামে ৫০ শয্যার হাসপাতাল ॥ শুভঙ্করের ফাঁকি
তারিখ: ২০-মে-২০১৩
দিদার এলাহী সাজু ॥

* ডাক্তার-নার্সের মহাসংকট * ভয়ানক দুর্গন্ধ * নেই বিশুদ্ধ খাবার পানি * স্টাফ-নার্সদের রুঢ় আচরণ * দালাল ও রিপ্রেজেন্টেটিভদের উপাত

শুধুমাত্র সস্তা জনপ্রিয়তা আর রাজনৈতিক ফায়দা হাছিলের জন্য জেলার ২০ লাখ মানুষের সাথে প্রতারণা করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের নাম দেয়া হয়েছে ১শ শয্যার হাসপাতাল। রহস্যজনক কারণে ৫০ শয্যার কৌটা তৈরী করে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মাত্র ৩০ শয্যার জনবল। ফলে দীর্ঘ ১৮ বছর যাবত ডাক্তার-নার্সের মহাসংকটে প্রয়োজনীয় চিকিসা সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন জেলার হত দরিদ্র সাধারণ মানুষ। আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো, জীবন রক্ষার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান বিশুদ্ধ খাবার পানিরও ব্যবস্থা নেই এখানে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেলার একমাত্র বৃহ চিকিসালয় ১শ শয্যার হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয় ১৯৯৫ সালে। তকালীন বিএনপি সরকারের অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ওই বছরের ৬ জানুয়ারী হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। তখন রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ৫০ শয্যার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের কৌটা তৈরী করে তার অনুমোদন দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে মাত্র ৩০ শয্যার প্রয়োজনীয় জনবলের নিয়োগ দেয়া হয়। আর এভাবেই চলে আসছে দীর্ঘ ১৮ বছর। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১শ শয্যার একটি হাসপাতালের জন্য ডাক্তার, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রয়োজন হয় কমপক্ষে সোয়া ৩শ জনবলের। এর মধ্যে প্রয়োজন হয় প্রায় ৯০ জন ডাক্তার এবং শতাধিক নার্সের। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ হাসপাতালটি উদ্বোধনের সময় অনুমোদন দেয়া হয় মাত্র ১৮১টি কৌটার। যার মধ্যে ডাক্তারের পদ রাখা হয় মাত্র ৩৮ এবং নার্স ৬১টি। যা ৫০ শয্যা হাসপাতালের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তবে গোলক ধাঁ ধাঁ এখানেই শেষ নয়; পর্যায়ক্রমে নিয়োগ দেয়া হয় মাত্র ১১৯টি পদের। যার মধ্যে ডাক্তার ৩১ এবং নার্স ২৬। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ জনবল ৩০ শয্যা হাসপাতালের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া নিয়ম মোতাবেক ১শ শয্যার পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে ১টি ক্যান্সার ওয়ার্ড নির্মাণের কথা থাকলেও এ হাসপাতালে তা নির্মাণ করা হয়। এখানে নিয়োগ দেয়া হয়নি ২টি কোয়ার্টার মাষ্টার ও দুটি নার্স সুপার ভাইজার পদের বিপরীতে একজন লোকও। এ অবস্থায় চরমভাবে চিকিসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার ২০ লাখ  অধিবাসী। সচেতন মানুষ বলছেন, “১শ শয্যার নামে ৫০ শয্যার প্রয়োজনীয় জনবলের অনুমোদন দিয়ে, মাত্র ৩০ শয্যার জনবলের নিয়োগ দেয়া সূক্ষ্ম রাজনৈতিক প্রতারণা ও শুভঙ্করের ফাঁকি ছাড়া আর কিছুই নয়। এর মূল উদ্দেশ্য সস্তা জনপ্রিয়তার লক্ষ্যে রাজনৈতিক ফায়দা হাছিল করা সাধারণ মানুষ বলছেন, “ হাসপাতালে ১০০টি শয্যা, প্রতিটি শয্যার বিপরীতে নামকা ওয়াস্তে নিম্নমানের খাবার এবং কিছু সহজলভ্য ঔষুধ ছাড়া আর কিছুই নেই এখানে। আশ্চর্য্যের ব্যাপার হলো, রোগীদের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানিটুকুরও ব্যবস্থা করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। একমাত্র টিউবওয়েলটি অকেজো হয়ে আছে দীর্ঘ প্রায় ২ মাস। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং ড্রেনগুলোতে জমে থাকা ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধের কারণে হাসপাতালে প্রবেশ করাটাই এখন চরম অস্বস্থিকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে হাসপাতালটি এখন নিজেই একটা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত কাজের চাপে ত্যক্ত-বিরক্ত স্টাফ-নার্সদের রুঢ় আচরণ এবং বহিরাগত দালাল ও মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভদের অহেতুক উপাতে অতিষ্ঠ এখন রোগী ও দর্শনার্থীরা। এদিকে, এক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে উদ্ভট কারণে অন্য বিষয়ে নিয়োগ দেয়ায় সৃষ্টি হয়েছে চরম হ-য-বরল অবস্থার। জানা যায়,  শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জিয়াউর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে। এ ছাড়া কার্ডিওলজিস্ট ডাক্তার প্রদীপ কুমারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মেডিসিন ডাক্তার হিসেবে এবং কার্ডিওলজিস্ট হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সার্জারী ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমানকে। যা তুঘলকি কান্ড ছাড়া কিছ্ইু নয়। ইতোমধ্যে ১০০ শয্যার এ হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সম্পন্ন হয়েছে টেন্ডার কার্যক্রম। কিন্তু সাধারণ মানুষের দাবী, নামে মাত্র ২৫০ শয্যা নয়, নয় শুভঙ্করের ফাঁকি। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে যেন পুরো জনবলই থাকে সেই প্রত্যাশা জেলাবাসী। তবে ১০০ শয্যার হাসপাতালের পূর্ণাঙ্গ রূপদানই সবার আগে জরুরী।

প্রথম পাতা