প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য ॥ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা করলেন হবিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ অধ্যক্ষ
তারিখ: ২০-অগাস্ট-২০১৪
স্টাফ রিপোর্টার ॥

হবিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের  স্টেপ প্রকল্পের  দুর্নীতির বিষয়ে দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদের নামে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা করলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান। তিনি গতকাল মঙ্গলবার সংবাদপত্রে প্রেরিত এক প্রতিবাদ বার্তায় নিজেকে কলংকমুক্ত করতে এ অপচেষ্টা চালান।
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, “যথাযথ নিয়মে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় এবং নির্ধারিত একটি ভর্তি কমিটি থাকায়  অবৈধ বানিজ্য ও অনিয়ম হওয়ার সুযোগ নেই”। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, সমাচারে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তৈরী করা হয়। এ বিষয়ে ভর্তি বঞ্চিত একাধিক যুবকের অভিযোগ এ প্রতিবেদক-এর কাছে সংরক্ষিত আছে।
প্রতিবাদে বলা হয়েছে, “কোন প্রশিক্ষনার্থী সত্যিকার সনদ ও আর্থিক অবস্থার বিবরণ গোপন করিয়া ভর্তি হয়ে থাকলে তা প্রতিষ্ঠানের অগোচরেই হয়েছে।” এ বক্তব্যের মধ্যেমে প্রকৃতপক্ষে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার বিষয়টিই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং অধ্যক্ষ পরোক্ষভাবে এর দায়ভার নিজেই গ্রহণ করছেন।  আর এখানেই প্রমাণিত হয়েছে সমাচারের প্রকাশিত প্রতিবেদনের সত্যতা।
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, “নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমেই মাসিক ভাতার টাকা পরিশোধ করা হয়”। প্রশ্ন হচ্ছে, নিজ নিজ ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করাটাই কি দুর্নীতি না হওয়ার রক্ষাকবচ? এ প্রতিবেদকের কাছে একাধিক প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী অভিযোগ করে জানিয়েছেন ঠিকমত তারা মাসিক ভাতার টাকা পাননি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন চল-চাতুরীর আশ্রয় ও ভাল সার্টিফিকেট দেয়ার আশ্বাস দিয়ে কারো-কারো আংশিক  এবং কারো কারো পুরো টাকাই  আত্মসাত করা হয়েছে।
প্রতিবাদে বলা হয়েছে, “প্রকল্পে আর্থিক অনিয়ম হয় কিনা তা যথাসময়ে সরকারী- বেসরকারী ‘সি.এ’ দ্বারা অডিট হয়।” কিন্তু প্রতিবাদে সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়নি কোন সরকারী-বেসরকারী ‘সি.এ’ দ্বারা অডিট হয়েছে। স্বচ্ছতার স্বার্থে “চার্টার একাউন্ট” প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিল।
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, “যথানিয়মে প্রশিক্ষনার্থীদের শিল্প কারখানা পরিদর্শন করানো হয়।” কিন্তু প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী অনেক যুবকই এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে জানিয়েছেন তাদেরকে কোথাও পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়নি।  তারা জানান, শিক্ষকরা নাকি তাদের বলেছেন  ভ্রমণ খরচের টাকা বাঁিচয়ে অফিসের জন্য কম্পিউটার কেনা হয়েছে।
প্রতিবাদে বলা হয়েছে, “ভর্তির পূর্বে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।” কিন্তু হবিগঞ্জের স্থানীয় কোন কোন বহুল প্রচারিত পত্রিকায় কখন বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, “ মসজিদের জন্য ৫০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়েছে, ভর্তির জন্য নয়।” কিন্তু বিপুল সংখ্যক ভর্তিইচ্ছুক প্রশিক্ষণার্থী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন স্বেচ্ছায় নয়, বাধ্যতামূলকই তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে।
প্রতিবাদে বলা হয়েছে, “ ২৫০ থেকে ৩০০ ফরম ভর্তির জন্য ছাড়া হয়।” প্রকৃতপক্ষে অফিসিয়াল বিশ্বস্থ সূত্রের তথ্য অনুযায়ী ও এ প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে বছরে ২ হাজারেরও বেশি ভর্তি ফরমের অস্থিত্ব পাওয়া গেছে।
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, “ প্রকল্পের সার্বিক বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট করার জন্য একটি ওয়েব সাইট খোলা হয়েছে।” কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানের কথিত ওয়েব সাইট  “িি.িংঃবঢ়.ফঃব.মড়া.নফ” এ রিপোর্ট লিখার সময় গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত অকার্যকর ছিল।
প্রতিবাদে বলা হয়েছে, “স্থানীয় শিল্প কারখানার প্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ওগঈ  নামে একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে।” কিন্তু কথিত এই কমিটিতে কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও কোন কর্মকর্তারা জড়িত আছেন তা সুষ্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি। এটাই প্রেরিত প্রতিবাদের দুর্বলতা।
প্রতিবাদে উল্লেখ করা হয়েছে, “উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত জনৈক নামধারী সাংবাদিক ভর্তির সুযোগ না পেয়ে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশ করে প্রকল্পের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করার পাঁয়তারা করতেছে।” প্রকৃত পক্ষে এটি একটি “আষাঢ়ে গল্প” ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারে  প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সুনির্দিষ্ট দু‘জন সিনিয়র প্রতিবেদকের নামে প্রকাশিত হয়েছে। কাজেই নামধারী সাংবাদিক কথাটি মুর্খতার শামিল।
শেষ কথা ঃ সংবাদপত্রকে বলা হয় জাতির আয়না আর সাংবাদিকরা হলেন জাতির বিবেক। বলা হয়, রাষ্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভের নাম গণমাধ্যম। সাংবাদিকরা দেশ-জাতির উন্নয়নে কাজ করেন নৈতিক দায়িত্ববোধের কারণে, উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ করার জন্য নয়। মুখোশধারীদের প্রকৃত মুখোশ উন্মোচন করা সাংবাদিকের কাজ। হবিগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ হাবিবুর রহমান আত্মসমালোচনা না করে উল্টো সাংবাদিকদের দুষারোপের মাধ্যমে দুর্নীতিকে আঁড়াল করার অপচেষ্টা করেছেন মাত্র। পাশাপাশি স্টেপ প্রকল্পকে বাধাগ্রস্থ করার দিকে নিজেই নিয়ে গেলে একধাপ এগিয়ে।

প্রথম পাতা
শেষ পাতা