আজ চুনারুঘাটে অবহিতকরণ সভা ॥ বঞ্চিত শিশুর জন্য কাজ করছে প্রত্যয়
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
মোহাম্মদ নুর উদ্দিন ॥

মুনিয়া। পেশায় একজন নারী শ্রমিক।  মুখে সামনের দিকে দু-একটি ছাড়া প্রায় সব দাঁত পড়ে গেছে। ছানি পড়ে প্রায় ঝাপসা দুই চোখ। সেই চোখের পানি মুছতে মুছতে বললেন”যে হাজরী পাই ঐ পয়সা কি চলবেক! লেড়কা-লেড়কিকে লিখা পড়া শিখাবো কি খাওয়াবো কি! কন হালতে আছি। কনোরকম একবেলা খাইয়ে বাঁইচে আছি বাবু।”যে মজুরি পাই এই টাকায় কি চলবো! বাচ্চা কাচ্চারে পড়ালেখা করাইবো কি! কোনো অবস্থায় আছি। দুই-একবেলা খাই। একবেলা উপাস করি। কষ্টের কথা কইয়া কোনো শেষ নাই।’ এই কথাগুলো বললেন চুনারুঘাট উপজেলার আদিবাসী পল্লী নাসিমাবাদ চা-বাগানের নারী শ্রমিক মুনিয়া গোড় (৫০)।

অথচ সকল শিশুর প্রতিবন্ধী শিশুসহ) শিক্ষা ও যতেœর অধিকার আছে। এ কথাকে মাথায় রেখে কারিতাস সিলেট অঞ্চল স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত অবহেলিত জনপদসহ চা বাগানের শিশু (Hard to Reach Children) বিশেষ করে প্রতিবন্ধিতাগ্রস্থ বা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন প্রকল্প গ্রহন করে। যা শিশুদের জন্য মানসম্মত একীভূত শিক্ষা ও যতেœ বেড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি করবে। এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করে প্রত্যয় প্রকল্প (Prattay : A Project on Child Care and Education in Disabilities) তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। যার দাতাসংস্থা কর্ডএইড (Cordaid Netherlands)। এই প্রকল্পের অবহিতকরণসভা চুনারুঘাট উপজেলা মিলনায়তনে আজ অনুষ্ঠিত হবে।

প্রকল্প অফিস সুত্রে জানা যায়, পারকুল ড্রপ-ইন সেন্টার, চান্দপুর ড্রপ-ইন সেন্টার,লস্করপুর ড্রপ-ইন সেন্টার, চন্ডীছড়া ড্রপ-ইন সেন্টার, চুনারুঘাট ড্রপ-ইন-সেন্টার নির্মাণ করা হয়। যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের আবাসিক সুবিধা দিয়ে মূলধারার বিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করানো হবে। হাতিমারা চা বাগান, জঙ্গলবাড়ি চা বাগান, পারকুল চা বাগান, নাসিমাবাদ চা বাগান, গাইবাথান চা বাগান, চন্ডীছড়া চা বাগান, সাঁওতাল লাইন চা বাগান, দোলনা চা বাগান, সাতছড়ি চা বাগান, শায়েস্তাগঞ্জ মিশন হাউজ এই ১০টি চা বাগানে প্রতিবন্ধি শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রকল্পের সমন্বয়কারী প্রহল্লাদ রায় বলেন, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ সকল শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিতকরণ। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা, যতœ ও সম্পূরক খাদ্য সরবরাহে সহায়তা করা। চা বাগানে বসবাসরত ৪-১৮ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুসহ দুর্গম এলাকার ৫টি ড্রপ ইন সেন্টার ও ১০টি শিক্ষাকেন্দ্রে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের, স্কুলে যায়নি এমন শিশু, শ্রমিক শিশু, ঝরে পড়া শিশু, পিছিয়ে পড়া শিশুরা  শিক্ষা ও যতেœর সুযোগ পাবে।

এই প্রকল্পের এলাকার ৮৫০ টি পরিবার উপকৃত হবে। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে ড্রপ ইন সেন্টারের জন্য প্রতিটিতে ১৫ জন করে ৫টি সেন্টারে মোট ৭৫জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে আবাসিক সুবিধা দিয়ে মূলধারার বিদ্যালয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান পিউস নানোয়ার, আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক, প্রত্যয় প্রকল্প । তিনি বলেন, সেই সাথে উপজেলার দুর্গম এলাকায় ১০টি শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে মোট ৬০০ জন শিশু শিক্ষার সুযোগ পাবে। এর মধ্যে স্বল্প মাত্রার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু থাকবে ৬০ জন।

কারিতাস সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক জন মন্টু পালমা বলেন, একীভূত শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ শিশুর পাশাপাশি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরাও আমাদের শিক্ষাকেন্দ্রে আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষা লাভের সুযোগ পাবে। অন্যথায় ড্রপ-ইন-সেন্টারে অবস্থানকারী শিশুরা পাশে অবস্থিত সরকারি শিক্ষাকেন্দ্রে সবল শিশুর সাথে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা।

চুনারুঘাট উপজেলার চেয়ারম্যান মোঃ আবু তাহের বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে চা জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কীত বিরাজমান কুসংস্কার দূর হবে এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে।

শেষ পাতা