মন্তব্য প্রতিবেদন---------- ॥ মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে ধুলিয়াখাল এলাকাবাসী ॥ পরিবেশ অধিদপ্তর নিরব ॥ প্রমিনেন্ট লুব লিমিটেড কর্তৃপক্ষের খুঁটির জোর কোথায়?
তারিখ: ১৬-সেপ্টেম্বর-২০১৪
॥ রাসেল চৌধুরী ॥

পত্রিকায় প্রকাশ, মারাত্মক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়েছেন শহরতলীর ধুলিয়াখাল এলাকাবাসী। এখানকার বিসিক শিল্পনগরীতে স্থাপিত “প্রমিনেন্ট লুব লিমিটেড” নামক একটি কথিত মবিল তৈরীর কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জের কারণে ক্রমেই বিরান ভূমিতে পরিণত হতে যাচ্ছে ওই এলাকাটি। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার এলাকাবাসী করেছেন বিক্ষোভ মিছিল-প্রতিবাদ সভা। 

কিন্তু এতকিছুর পরও টনক নড়ছেনা পরিবেশ অধিদপ্তরের। স্থানীয় পরিবেশ কর্মীরাও রয়েছে নিরব। সংবাদ প্রকাশের দায়ে উল্টো মামলা দায়ের হয়েছে দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার বিরুদ্ধে। পাশাপাশি হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে প্রতিবাদকারী ব্যক্তিদের। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে “প্রমিনেন্ট লুব লিমিটেড” কর্তৃপক্ষের খুঁটির জোর কোথায়?

পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়,  ২০১০ সালে হবিগঞ্জ বিসিক শিল্প এলাকায় “প্রমিনেন্ট লুব লিমিটেড” নামক একটি মবিল কারখানা গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠার পর কারখানাটি থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হতে থাকে মারাত্মক বিষাক্ত বর্জ। ফলে আশংকাজনক হারে হ্রাস পায় এলাকার ফসলী জমির উৎপাদন ক্ষমতা। বিনষ্ট হয় মূল্যবান গাছপালা। ব্যাপক হারে মারা যায় হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন প্রকার গৃহপালিত পশু-পাখি। শুধু তাই নয়, শারীরিক ভাবে চরম ক্ষতির সম্মূখীন হন এলাকার শিশু-কিশোর ও স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীসহ পথচারী মানুষ। এ বিষয়ে ভূক্তভোগীরা পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দায়ের করলে মাঝে কিছুদিন কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অদৃশ্য কারণে পুণরায় তা সচল হয়।

জানা যায়, কর্তৃপক্ষ কারখানাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই করে আসছে পরিবেশ আইন অমান্য। তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পুরনো মবিল ক্রয় করে তা প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে একটি বিশেষ ধরণের “মেশিন অয়েল” তৈরী এবং বাজারজাত করছে। কারখানাটিতে নেই দুষণ নিয়ন্ত্রণের পর্যাপ্ত প্রযুক্তি। যে কারণে পরিবেশ দুষণের বিষয়টি চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে মারাত্মক ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন এলাকাবাসী।

তবে ভয়াবহ উদ্বেগের বিষয় হল, বিসিক শিল্পনগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মহসিন কবির খান নির্লজ্জের মত সাফাই গাইছেন কারখানার পক্ষে। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন এলাকাবাসীর দাবি সঠিক নয়। কারখানাটি থেকে নাকি এখন আর দুর্গন্ধ ছড়ায় না।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে জলন্ত একটি সত্যকে যখন মিথ্যা বলে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা হয়, তখন দিবালোকের মত স্পষ্ট হয় দুর্নীতির বিষয়টিও। তা না হলে এতদিনে পরিবেশ ছাড়পত্র বাতিল হয়ে যেত কারখানাটির। সচেতন মহলের ধারণা, বিসিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা  মিলে-মিশেই কারখানাটি রক্ষায় পালন করছেন নেপথ্য ভূমিকা। এ প্রেক্ষাপটে সচেতন পরিবেশ কর্মীদের সোচ্চার ভূমিকা না থাকাটাও এলাকাবাসীর দুর্ভাগ্য।

শেষ কথা ঃ তথ্য নির্ভর, বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্রের মঙ্গল সাধনই সাংবাদিকের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে নূন্যতম আপত্তি নেই আমাদের। কিন্তু উদ্দেশ্য যদি হয় সংবাদপত্র ও সাংবাদিকের কন্ঠরোধ করা, তবে তা অবশ্যই জাতির জন্য অশুভ  সংকেত।

প্রথম পাতা
শেষ পাতা