কেরানী আশিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ॥ হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র রিয়াজের এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চিত!
তারিখ: ১-ফেব্রুয়ারী-২০১৫
স্টাফ রিপোর্টার ॥

হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের কেরানী আশিক আলী’র বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার কারণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে রিয়াজ আহমেদ নামে এক ছাত্রের আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা এবং শিক্ষা জীবন। অভিযোগে প্রকাশ, শহরের রাজনগর এলাকার আমীর আলী ওরফে জিতু মিয়ার পুত্র রিয়াজ আহমেদ হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিগত ২০১২ সালে যথা নিয়মে ‘ব্যবসায় শিক্ষা’ বিভাগে রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ করে। এরপর সে ২০১৩ সালে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হয়। যে কারণে ২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি রিয়াজ। পরবর্তীতে আবারো সে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয় এবং যথারীতি পরীক্ষা ফি-প্রদান করে। পরীক্ষার মাত্র দেড় মাস পূর্বে হঠাৎ হবিগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের কেরানী আশিক আলী জানান, রিয়াজ আহমেদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ কথা শোনার পর যেন আকাশ ভেঙ্গে মাথায় পড়ে রিয়াজের পিতা আমীর আলীর। এর উপায় কি জানতে চাইলে, কেরানী আশিক সমস্যাটির সমাধানের জন্য তার কাছে ৭ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কেরানী আশিকের দাবি মত টাকা পরিশোধ করেন তিনি। কিন্তু তাতেও রক্ষা পাননি আমীর আলী। পরীক্ষার দুই দিন পূর্বে অর্থাৎ গতকাল শনিবার রিয়াজ আহমেদকে বুঝিয়ে দেয়া হয় ভুলে ভরা রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র। যার রেজিঃ নং- ১১১৬৪৩০১৭১ ও রোল নং- ৫০২৬৪৭। যেখানে রিয়াজ আহমেদকে দেখানো হয়েছে ‘নিয়মিত’ ছাত্র হিসেবে। অথচ সে ২০১৩ সালের নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে ‘অনিয়মিত’ পরীক্ষার্থী হিসেবে গণ্য হওয়ার কথা।

শুধু তাই নয়, একদিকে, তাকে নিয়মিত ছাত্র হিসেবে দেখানো হলেও তার প্রবেশপত্রে পুরাতণ সিলেবাস অনুযায়ি ‘ব্যবসায় পরিচিতি’ বিষয়টি যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে বাদ দেয়া হয়েছে নতুন বিষয় ‘শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা।’ এ অবস্থায় পরীক্ষার সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ১৮ ফেব্র“য়ারি বুধবার সকাল ১০টা থেকে ১টার মধ্যে রিয়াজকে একই সাথে দিতে হবে দুটি পরীক্ষা। এর একটি হচ্ছে নুতন বিষয় ‘ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং’ আর অপরটি হচ্ছে পুরাতন বিষয় ‘ব্যবসায় পরিচিতি’। রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র হাতে পাওয়ার পর অবাক রিয়াজ ও তার পিতা আমীর আলী আবারো দ্বারস্থ হন কেরানী আশিকের। এবার আশিক নতুন করে দাবি করেন আরো ৫ হাজার টাকা। উপায়ান্তর না দেখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল লেইছ-এর দ্বারস্থ হন আমীর আলী। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাকে পরামর্শ দেন কেন্দ্র সচিব আব্দুল গাফফার-এর নিকট লিখিত অভিযোগ দেয়ার। সে অনুযায়ী লিখিত অভিযোগ দেয়া হলে কেন্দ্র সচিব তাকে বোর্ডে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের মধ্যে মাত্র ১ দিন (আজ) সময় হাতে নিয়ে সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য কি করবেন তাই ভেবে দিশেহারা এখন আমীর আলী। বিষয়টির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য গতকাল শনিবার রাতে দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচারের পক্ষ থেকে কেরানী আশিক আলীর সাথে মোবাইল ফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উল্লেখ্য, শিক্ষা বোর্ডের নতুন নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছর থেকে বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক বিষয় মিলিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ১২টি বিষয়ের উপর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। যেখানে প্রত্যেকটি বিষয়ই নতুন করে সাঁজানো হয়েছে। এ অবস্থায় প্রবেশপত্রে কর্তৃপক্ষের ভুলের জন্য রিয়াজ আহমেদকে ‘পুরাতন বই’ পড়ে ‘নতুন বই’-এর পরীক্ষা দিতে হবে। বিষয়টি তার পরীক্ষা ও শিক্ষা জীবনের জন্য চরম এক অনিশ্চয়তা বয়ে নিয়ে এসেছে।

প্রথম পাতা
শেষ পাতা