ঘুষের বিনিময়ে চোরা কারবারীদের ছেড়ে দিয়েছে ডিবি? ॥ তেল পাচারের নিরাপদ ঘাটি সাটিয়াজুরী রেলওয়ে স্টেশন
তারিখ: ২৮-মার্চ-২০১৫
স্টাফ রিপোর্টার ॥

রেলওয়ের তেল পাচারের নিরাপদ ঘাটি এখন বাহুবলের সাটিয়াজুরী এলাকা। রেল চালক, স্টাফ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ধারী ব্যক্তিদের সহযোগিতায়  ওই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন পাচার হচ্ছে শত শত  ব্যারেল তেল। অভিযোগ উঠেছে, তেল পাচারের মূল নায়ক স্থানীয় এক প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সাটিয়াজুরী রেল স্টেশন হতে মহাশয়ের বাজার লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত এলাকাটি দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের তেল পাচারের নিরাপদ ঘাটিতে পরিণত হয়েছে। রেল চালক, স্টাফ ও প্রশাসনের সাথে স্থানীয় চোরা কারবারীরা আতাঁত করে প্রতিদিন পাচার করছে শত শত ব্যারেল তেল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মীরপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য  কদ্দুছ আলী ওই পাচারকারীদলের মূল হোতা। তিনি তার ভাই দাস পাড়া প্রকাশিত বার আউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হকের পুত্র সাটিয়াজুরী বাজারের ব্যবসায়ী লেবু মিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে পাচারকৃত তেল বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। আর তাদের এই  অপকর্মকে জায়েজ করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ধারী ব্যক্তিদের  দেয়া হচ্ছে মাসোহারা। শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে মদ-গাঁজা, ফেনসিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্যের বেচা-কেনা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ। জানা যায়, ২০১০ সালে কদ্দুছ আলীর বিরুদ্ধে বাহুবল থানায় তেল পাচারের মামলা হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক এ প্রতিবেদককে জানান, গত মঙ্গলবার বেলা ৩টায় ঢাকা-সিলেট রেল সড়কের সাটিয়াজুরী ষ্টেশন এলাকার  দাসপাড়া ও বার আউলিয়া গ্রামের দিঘীরপাড় নামক স্থানে পাথরবাহী একটি  রেলওয়ের ইঞ্জিন থেকে প্রায় ৩০ ব্যারেল তেল পাচার করে চোরা কারবারীরা। এ সময়  সিএনজিযোগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় ৪ সদস্যের রহস্যময় একদল লোক।  যাদের পোশাকে  লিখা ছিল ‘ডিবি’। তখন ওই লোকগুলো  নিজেদেরকে হবিগঞ্জের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়। প্রায় ২০মিনিট ধরে চোরাকারবারী ও ওই রহস্যময় লোকগুলোর মধ্যে হয় কথোপকথন। একপর্যায়ে তারা সিএনজিযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় অপর ব্যক্তি জানান, ওই লোকগুলো নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে চোরাকারবারীদের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা আদায় করে। বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছে রেলওয়ের অস্থায়ী নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা। পরে ওই তেল স্থানীয় ট্রলি চালক আশিকের মাধ্যমে সাটিয়াজুরী বাজারের ব্যবসায়ী লেবু মিয়ার দোকানে নেয়া হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে ওইদিন সন্ধ্যার পর বাহুবল মডেল থানার ওসি মোশাররফ হোসেন পিপিএম-এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ সাটিয়াজুরী বাজারে যায়। ওসি মোশাররফ হোসেন জানান, ব্যবসায়ী লেবু মিয়ার বাড়ি ও দোকান তল্লাশী করে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, লেবু মিয়া তেল পাচারকারী চক্রের সাথে জড়িত থাকতে পারে।

এ বিষয়ে হবিগঞ্জ ডিবি‘র ওসি মোক্তাদির চৌধুরী জানান, ওইদিন উল্লেখিত স্থানে তাদের  কোন অভিযান পরিচালিত হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন হল, এলাকাবাসীর দেয়া তথ্য সঠিক হলে ডিবি পরিচয়ধারী ওই লোকগুলি তাহলে কারা? এলাকার সচেতন মহলের দাবী, বিষয়টি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

প্রথম পাতা
শেষ পাতা