পর্ব-৭- নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে টক-ঝাল অভিজ্ঞতা
তারিখ: ৩০-জুন-২০১৬

॥ দিদার এলাহী সাজু ॥

পাঠক, প্রতিবেদনটি লিখতে গিয়ে আরও একবার হোচট খেতে হল। অনিবার্য কারণে গত কয়েকদিন তা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। আমার এ প্রতিবেদন লেখার মূল উদ্দেশ্য কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনকে কটাক্ষ করা নয়। উদ্দেশ্য ছিল, নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে কিছু “টক-ঝাল অভিজ্ঞতা” পাঠকদের সাথে ভাগা-ভাগি এবং আমাদের সমাজে ঘাফটি মেরে থাকা কিছু মুখোশধারীর প্রকৃত মুখোশ উন্মোচন করা। যারা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ভয়ংকর হুমকি স্বরূপ। তাছাড়া, আধুনিক সুশীল-সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে আমাদের সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখনও যে- দুঃখজনক ভাবে চিন্তা-চেতনায় সেকেলে-প্রাচীন ধ্যান-ধারণা পোষণ করেন- প্রতিবেদনে সেই বিষয়টি ফুঁটিয়ে তোলারও একটা উদ্দেশ্য ছিল। যদিও প্রকৃত পক্ষে নানা সীমাবদ্ধতার কারণে আমার পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠছেনা।

প্রতিবেদনের একটি পর্বে নির্বাচনকালীন সময়ে ফদ্রখলা মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা নোমান কবীরের অবস্থান নিয়ে কিছু বক্তব্য প্রকাশিত হয়। এতে তিনি জ্বলে উঠেন “তেলে-বেগুনে”। বেনামে ভিন্ন একটি স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশ করেন প্রতিবাদ লিপি। তিনি হাস্যকরভাবে উল্লেখ করেন, “নির্বাচনে চরমভাবে হেরে গিয়ে আমি নাকি আমার প্রিয় গ্রামবাসী ও মসজিদ-মাদ্রাসার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে প্রতিবেদনটি লিখছি”। অথচ প্রকৃত বাস্তবতা হল, নিশ্চিত ভাবে হেরে যাওয়ার সৎ দুঃসাহস নিয়েই আমি মূলত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। যা আমি নির্বাচনের পূর্বেই প্রকাশ্যে নিজে প্রচার করেছি। তাই নির্বাচনে আমি হেরে গেলেও “হারানোর কিছুই ছিল না”। আমার ফলাফল বিষয়ে আমি খুব স্বাভাবিকভাবে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলাম। এ অবস্থায় কারও প্রতি ক্ষোভ, প্রতিহিংসা কিংবা বিদ্বেষমূলক মনোভাব জাগবে এটা আমার জন্য কাল্পনিক ও অবাস্তব। তাছাড়া আমার প্রতিবেদনটি যারা ভালভাবে পড়েছেন তারা নিশ্চয়ই হলফ করে বলতে পারেন, গ্রামবাসী কিংবা মসজিদ-মাদ্রাসার বিরুদ্ধে আমি একটি শব্দও লিখিনি। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। খুব জানতে ইচ্ছে করে, মাওলানা নোমান কি আমার এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন? তিনি কি প্রমাণ করতে পারবেন?

এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, আমি ছোট বেলা থেকেই ধর্মভীরু, যদিও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ধার্মিক হয়ে উঠতে পারিনি। তবে যখনই সুযোগ হয়েছে সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করেছি মসজিদ, মাদ্রাসার কল্যাণে কাজ করার। সুতরাং আমার কোন কথা কিংবা কাজের দ্বারা শস্যদানা পরিমাণ মসজিদ-মাদ্রাসার ক্ষতি হবে, এটা ভাবতেই পারিনা। তাছাড়া আমার প্রিয় গ্রামবাসীর কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। কারণ, রাজনৈতিক ও সামাজিকসহ নানা সীমাবদ্ধতায় গ্রামের অধিকাংশ মানুষ আমাকে ভোট দিতে না পারলেও প্রচন্ড রকমভাবে উৎসাহ যুগিয়েছেন। করেছেন সার্বিক সহযোগীতা। আমি তাদের নির্মল ভালোবাসায় ধন্য। বিশেষ করে কিছু যুবকের “নিঃস্বার্থ শ্রম-ঘাম” আমাকে চির ঋণের ডোরে আবদ্ধ করেছে। 

আমি খুব খুশি হতাম, প্রকাশিত প্রতিবাদ লিপিতে মাওলানা নোমান যদি তার সম্পর্কে আমার লিখা বক্তব্য গুলোর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতেন। খুশি হতাম, যদি জনসম্মুখে ব্যাখ্যা করতেন নির্বাচনে প্রকৃত পক্ষে তার অবস্থান কি ছিল? তাকে মোবারকবাদ জানাতাম, যদি তিনি স্পষ্টবাদীর মত বলতেন- “নির্বাচনে তিনি শেষ পর্যন্ত ঘোড়া না লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়েছেন”? নাকি আমরা ধরে নেব, জেলা ওলামা দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি শেষ পর্যন্ত (আবারও মত পাল্টিয়ে) বিএনপি’র “ধানের শীষেই” ভোট দিয়েছেন? এ অবস্থায় আমার কাছে মনে হচ্ছে, তিনি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এড়িয়ে গিয়ে তার সম্পর্কে লিখা আমার বক্তব্য গুলোকে সঠিক বলেই প্রমাণ করেছেন? কারণ, একটি সহীহ হাদিসের সার কথা হল, “কোন বিষয়ে কেউ যদি নিরবতা পালন করে, তাহলে ধরে নিতে হবে ওই বিষয়ের প্রতি তার পূর্ণ সম্মতি রয়েছে”।

পাঠক, মুখোশধারী মোনাফেকরা যুগে যুগে ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠেছিল প্রতিবেদনে খুব সংক্ষিপ্ত ভাবে এর একটা বর্ণনা দিতে চাই। শান্তির ধর্ম ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বড় ক্ষতি গুলো করেছে মুখোশধারী মোনাফেক মুসলমানরাই। সারা দুনিয়ার সকল সমরবিদদের সম্মিলিত মত হচ্ছে, সাধারণত মানুষের শত্র“ দু’রকমের হয়। একটা প্রকাশ্য শত্র“ আর একটা গোপন। তবে প্রকাশ্য শত্র“র চেয়ে গোপন শত্র“ই অনেক বেশি ভয়ংকর।

খায়বারের যুদ্ধের পর নবী করিম (স) মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্র“ সম্পর্কে সাহাবীদের স্পষ্ট একটি ধারণা দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ইয়ামেন থেকে ভূমধ্যসাগর অর্থাৎ “জাজীরাতুল আরব” থেকে ইয়াহুদীদের বের করে দিতে হবে”। এর মূল কথা হল, ইয়াহুদিরা মুলসলমানদের প্রকাশ্য শত্র“। এরপর থেকেই ইয়াহুদি নেতারা মুসলমান জাতিকে ধ্বংস করতে সংকল্পবদ্ধ হয়। তারা তখন থেকেই আশ্রয় নেয়, নানা ছল-চাতুরি আর কুট-কৌশলের। এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্র্তীতে তাদের অর্থায়নে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদ্রাসার আদলে কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যেখানে ইয়াহুদিরা গবেষণা করেছে ইসলাম নিয়ে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হাতি দিয়ে হাতি আর পাখি দিয়ে পাখি শিকারের মত, পাগড়ি ওয়ালা নামাজীদের দিয়ে আল্লাওয়ালাদের পাকড়াও করা। যাতে একদিন পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ইসলামের নাম নিশানা। ইয়াহুদিদের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ওই সব মাদ্রাসা থেকে যুগে যুগে সৃষ্টি হয়েছে আলেমের লেবাছধারী কিছু তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ। যারা ভয়ংকর সব ফতোয়া এবং কর্মকান্ডের দ্বারা অত্যন্ত সুকৌশলে ক্ষতি করে যাচ্ছে শান্তির ধর্ম ইসলামের। তারাই মূলত সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছে ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ। এর উদ্দেশ্য, বিশ্ববাসীর কাছে মুসলমানদের সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা। এরাই মূলত মুসলমানদের গোপন শত্র“। তবে এরা গোপন শত্র“ হলেও এদের একটা সুস্পষ্ট পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছেন মহান আল্লাহ। এদের নাম দিয়েছেন “মোনাফেক”। মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনের ২৮তম পারায় এদের নামে একটা সূরা নাযিল হয়েছে। এই সূরাটির নাম “সূরাতুল মোনাফেকুন”। পবিত্র কোরআনের ৬৩ নম্বর এই সূরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। সূরাটির প্রথম আয়াতেই মহান আল্লাহ তাআলা তার প্রিয় হাবীব নবী করিম (স)-এর উদ্দেশ্যে তাকে সতর্ক  করে দিয়ে বলেছেন, “ইযা যাআকাল মুনাফেকুন কালূ নাশহাদু ইন্নাকা লা রাসুলুল্লাহ্.........(বাংলা ভাষায় উচ্চারণগত ত্র“টির জন্য ক্ষমা প্রার্থী)”।

ওই সূরাটির মর্ম কথা হল, “সমাজে একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে। যারা কখনও এদিকে, কখনও ওদিকে থাকবে। যারা মুখে আল্লাহ-রাসূলকে বিশ্বাস করবে। যাদের মুখে দাঁড়ি, হাতে তছবীহ্, মাথায় পাগড়ি থাকবে। কপালে সেজদার দাগ কিংবা চেহারা নুরানীও হতে পারে। তারা রোযা রাখবে, নামাজ পড়বে। এমনকি হজ্ব পালন করে যাকাতও দিবে। কিন্তু এদের থেকে ঈমানদার মুসলমানদের সাবধান থাকতে হবে। কারণ এরা বর্ণ চোরা। এদের ভিতর আর বাহিরের চেহারা এক রকম নয়। এরা মোনাফেক। এদের কথা আর কাজে থাকবে চরম গরমিল। এরা ইসলামের জন্য ভয়ানক”।

বাস্তবতা হল, যুগে যুগে এসব লেবাছধারী হুজুররাই সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে ইসলামের। এরা মূলত ইসলামের বড় শত্র“। ইসলামের সূচনা লগ্নের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, তথাকথিত দাঁড়ি, টুপি, পাগড়ী-পাঞ্জাবী ও তছবীহ ওয়ালা নামাজীরাই করেছে ইসলামের বড় বড় ক্ষতি। (চলবে)

প্রথম পাতা