বরখাস্তকৃত পেশকার হামিদ বেপরোয়া একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনকে হয়রানীর চেষ্টা
তারিখ: ১-জুন-২০১৬
স্টাফ রিপোর্টার ॥

স্ত্রীকে রেখে শ্যালিকাকে বিয়ে করে আলোচনায় আসা হবিগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল আদালতের পেশকার আব্দুল হামিদ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। দুই আদালতের জেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ কর্তা ব্যক্তিদের সমঝোতার উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পর একের পর এক মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিচ্ছেন আব্দুল হামিদ। প্রশ্ন উঠেছে একজন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া পেশকার কিভাবে প্রতিদিন অফিসে অবাধে যাতায়াত করেন। এক অফিস থেকে আরেক অফিসে কিভাবে বরখাস্ত হওয়া একজন পেশকার ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করেন? জানা যায়, ২০০৪ ইং সনে আব্দুল হামিদের সাথে বিয়ে হয় মাধবপুর থানার ভান্ডারুয়া গ্রামের হরমুজ আলীর কন্যা নাসিমার। আব্দুল হামিদের বাড়ি একই উপজেলার আলবক্সপুর গ্রামে। তার পিতার নাম আপ্তাব উদ্দিন। আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল আব্দুল হামিদ বেকার হলেও নাসিমা তখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। এমতাবস্থায় আব্দুল হামিদের স্ত্রী ও শশুর বাড়ির লোকজন বহুচেষ্টা করে আব্দুল হামিদের চাকুরীর ব্যবস্থা করেন। আব্দুল হামিদ হবিগঞ্জ কোর্টে পেশকার হিসাবে যোগদানের পর শহরে ম্যাস ভাড়া করে থাকেন। এক পর্যায়ে আব্দুল হামিদের কন্যা মিমের স্কুলে যাওয়ার বয়স হলে তারা একটি বাসা ভাড়া নেন। সন্তানদের দেখাশুনা করার জন্য নাসিমা আক্তার তার আপন চাচাতো ছোট বোনকেও মাঝে মধ্যে বাসায় এনে রাখতেন। কিছুদিনের মধ্যেই নাসিমা আক্তারের ছোট বোন রুখসানার প্রতি কুদৃষ্টি পড়ে আব্দুল হামিদের। নাসিমা আক্তার স্কুলে চলে গেলে আব্দুল হামিদ রুখসানা সাথে অবাধে মেলামেশা করতেন। এক পর্যায়ে আব্দুল হামিদ তার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীকে রেখেই শ্যালিকা রুখসানাকে এফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে করেন। এরপর সবকিছু জানাজানি হয়। সময়ে সময়ে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে মারপিটও করতেন আব্দুল হামিদ। অবুঝ দুই সন্তান ও স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রীকে রেখে শ্যালিকাকে বিয়ে করায় সামাজিক ও অফিসিয়ালীভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়েন আব্দুল হামিদ। ইতিমধ্যে যৌতুকের জন্য মারপিটের অভিযোগে নাসিমা আক্তার আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পেশকার আব্দুল হামিদ বেশ কিছুদিন জেল হাজত ভোগ করেন। মামলাটি তুলে নিতে অনবরত চাপ প্রয়োগ করে আসছেন আব্দুল হামিদ। তাতে রাজী না হলে নাসিমা  ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার আশ্রয় নেন তিনি। নাসিমা জানিয়েছেন- আব্দুল হামিদ একাধিকবার তাকে মোবাইল ফোনে হুমকি দিয়েছেন, সে কোর্টের লোক, বাংলাদেশের বিভিন্ন কোর্টে কর্মরত স্টাফদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার কোর্টে একের পর এক মিথ্যা মামলায় নাসিমাকে অথবা তার পরিবারের সদস্যদেরকে জড়িয়ে দেয়া তার পক্ষে স্বাভাবিক ব্যাপার। কাজেই মামলা আপোষে প্রত্যাহার করা না হলে হামিদ মিথ্যা মামলার পথই বেছে নেবেন তিনি। গতকাল নাসিমা জানান- আব্দুল হামিদ যে তাকে মামলার হুমকি দিয়েছিল, এর ফল স্বরুপ ইতিমধ্যে সে অন্তত ৪টি মামলা দায়ের করেছে নাসিমা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। নাসিমা আরও জানান- আব্দুল হামিদের ভাই কামাল উদ্দিন তাকে হুমকি দিয়ে বলেছে- মামলার কারণে হামিদের চাকুরী যেতে পারে। তাই তাকেও আর চাকুরি করতে দেবে না। কামাল উদ্দিন প্রায় সময়ই নাসিমার স্কুলে আসা যাওয়ার পথে তাকে অনুসরণ করছে বলেও জানান তিনি। নাসিমার আশংকা কামাল উদ্দিন তাকে মোটর সাইকেলের চাপায় হত্যা করতে পারে অথবা অন্য কোনো অঘটন ঘটাতে পারে। এব্যাপারে কামাল উদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আব্দুল হামিদের মোবাইল ফোনে কল করলে মোবাইল ফোনটি (শেষ ডিজিট ৮৫৩) বন্ধ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সরকারী চাকুরী করেন এমন একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি জানান-কোনো সাময়িক বরখাস্ত কর্মচারীর নিয়মিত অফিস করার কোনো সুযোগ নাই। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জের সিনিয়র একজন আইনজীবি জানান- সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কোনো সরকারী কর্মচারীর জন্য অফিস করার সুযোগ নাই। বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তার অফিসে আসাও নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না। কারণ তার দ্বারা অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বা তথ্য গায়েব হলে তাকে কেউ ধরতেও পারবে না।

প্রথম পাতা