বাহুবল উপজেলার মিরপুরে সংরক্ষিত নারী এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর উপর হামলা মামলায় নব-নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান তারা মিয়া ও জেলা পরিষদের সদস্য আলাউর রহমান শাহেদকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে হবিগঞ্জের একদল ডিবি পুলিশ ঢাকা ডিবি পুলিশের সহযোগিতায় ঢাকার কদমতলী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে। গতকাল বুধবার বিকেলে তাদেরকে আদালতে প্রেরণের পর ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে তাদেরকে হাজির করে এ আবেদন জানায় ডিবি পুলিশ। পরে তাদেরকে হবিগঞ্জ কারাগারে প্রেরন করা হয়। আগামী রোববার রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়েছে। এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। তিনি জানান, তারা মিয়া ও শাহেদ কয়েকদিন ধরে উচ্চ আদালতে জামিনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। ইতিমধ্যে একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করেন আদালত। এরপরও তারা ঢাকায় অবস্থান নিয়ে আত্মগোপন করেছিল। পুলিশ গোয়েন্দা তথ্য এবং সব ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হয়। মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কদমতলীর একটি বাসা থেকে হবিগঞ্জ ডিবি’র ওসি শাহ আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অনুষ্ঠানে তারা ও শাহেদের নেতৃত্বে সংসদ সদস্য কেয়া চৌধুরীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়েছে। তার সাথে ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে। যে কোন নারীর সাথেই এ ধরণের আচরণ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া কেয়া চৌধুরী একজন সংসদ সদস্য। মামলা দায়েরের পর থেকেই তাদেরকে গ্রেফতারে কাজ করছিল গোয়েন্দারা। বিষয়টি তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে অনেক আলামতই উদ্ধার করা হয়েছে। তারা মিয়ার মোবাইল ফোনটিও উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় যতগুলো অপরাধ সংগঠিত হয়েছে প্রত্যেকটি অপরাধই আমলে নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ১০ নভেম্বর বিকেলে মিরপুর বেঁদে পল্লীতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের উদ্যোগে সরকারী সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে এমপি কেয়া চৌধুরীর একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করে সমাজসেবা অফিস। অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ পরই উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান মো. তারা মিয়া ও জেলা পরিষদ সদস্য আলাউর রহমান শাহেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠানে হামলা করে তার সমর্থকরা। এ সময়  এমপি কেয়া চৌধুরীকে অবরুদ্ধ করে লাঞ্ছিত করে তারা মিয়ার লোকজন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এমপি কেয়া চৌধুরীর অনুসারীসহ উপজেলাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। এমপির সমর্থনে লোকজন ঘটনাস্থলে পৌছলে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর তাৎক্ষনিকভাবেমিরপুর বাজারে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে এমপি কেয়া চৌধুরীর সমর্থকরা। তখন এমপি কেয়া চৌধুরী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে প্রথমে বাহুবল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। হামলায় অনুষ্ঠানে আসা উপজেলা মহিলা লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাহেলা আক্তার ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি তৈয়ব আলী আহত হন। পরে রাতে এমপি কেয়া চৌধুরীর অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর মিরপুর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে খবর পেয়ে র‌্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তেজিত সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ঘটনার পর দিন থেকে এমপি কেয়া চৌধুরীর উপর হামলার ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে বাহুবল। জেলার বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ১৮ নভেম্বর এ ঘটনায় বাহুবল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন উপজেলার লামাতাসী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী পারভিন আক্তার। মামলায় ভাইস চেয়ারম্যান মো. তারা মিয়া, উপজেলা পরিষদের সদস্য আলাউর রহমান সাহেদ ও তারা মিয়ার গাড়ি চালক মো. জসিম উদ্দিনকে আসামী করা হয়।