মেয়র আনিসুল হক এর বাংলাদেশ এবং লন্ডনে চিকিৎসা
তারিখ: ৮-ডিসেম্বর-২০১৭

দেওয়ান কাইউম

সুপ্রিয় পাঠক, গত কয়েকদিন আগে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হক সাহেব মারা গিয়াছেন। কোথায় কিভাবে মারা গেছেন দেশবাসী সে কথা জেনে গেছেন কিন্তু আমি অধম এর পক্ষ থেকে সর্বপরি ভাল লোক, সৎ ও ন্যায়পরায়ন লোক ছিলেন বলে কথা না বাড়িয়ে সরাসরি কথা বলতে চাই নিতান্ত মনের তাগিদে। মরহুম মেয়র আনিসুল হকও সোজাসোজি কথা বলতেন। এখন ইন্টারনেটেও তাহার বক্তিৃতা প্রকাশ হচ্ছে যা আমার জানা ছিলনা। বাঙ্গালীদের জীবন মরলে দাম বাড়ে, জীবিত থাকতে কোন মূল্যায়ন হয়না। মরহুম মেয়রের বেশ কিছু সুনাম বিভিন্ন মাধ্যমে দেশবাসী জানতে পেরেছেন। মরহুম মেয়র সাহেব যে হাসপাতালে মারা গেছেন সেই হাসপাতালে আমি বিগত ত্রিশ বছর যাবৎ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য যাই। এই হাসপাতালের নাম ইউনিভারসিটি কলেজ হাসপাতাল সংক্ষেপে ইউসিএইচ (টঈঐ). এই হাসপাতালটিতে নানা রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য প্রসিদ্ধ। এমন কোন রোগ নাই যে এখানে চিকিৎসা করা হয়না। আল্লাহ ছাড়া মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব নয় কিন্তু একটি পুরোপুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা করা সম্ভব। এই হাসপাতালটি একটি ট্রাষ্টের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। সেই ট্রাষ্টের নাম ইউসিএইচ ফাউন্ডেশন ট্রাষ্ট। দুই যুগ আগে যখন এই হাসপাতালটি ট্রাষ্টের অধীনে নেহওয়া হয় তখন আমার মত একজন নগন্য লোক ট্রাষ্টির পরিচালনা কমিটিতে সদস্য পদ অধিষ্টিত হই। আমরা যারা সদস্য আমাদের কাজ হল প্রতি বছর ভোট দিয়ে একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা। আর এই কমিটির প্রধানকে বলা হয় গভর্নর। এই হাসপাতালটিতে কিভাবে রোগীর সেবা করা হবে কিংবা নতুন কি কি সুবিধা রোগীরা পাবেন তা গবেষনা করে প্রস্তাব করা হয়। আমরা যারা কমিটিতে আছি আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মতামত দেই এবং সম্ভব হইলে রোগীদের ভাল সার্ভিসের জন্য উপদেশও দেই। গবেষণার ফলে নতুন ঔষধ বাজারজাত করার আগে আমাদের মতামত নেয়া হয় এবং ট্রাষ্টের সদস্য হিসেবে ঐ ঔষধগুলি বিনা মূল্যে আমাদেরকে দেওয়া হয়। মাঝে মধ্যে আমাকে হাসপাতালে আমন্ত্রন করে নিয়ে বড় বড় কনসালটেন্টরা আমাকে দেখিয়ে বলেন যে, এই লোকটি দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ ডায়াবেটিসে ভুগছেন, আমরা তাকে চিকিৎসা করে আসছি এবং আমাদের নিয়ম অনুযায়ী চিকিৎসা করায় দীর্ঘ ৩৫ বছর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে তাহার কোন ক্ষতি হয়নি। ঐ সময় আমি প্রশ্ন করে চিকিৎসা সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান লাভ করি। গবেষণায় আলাপ আলোচনা এবং প্রতিনিয়ত তথ্যাদি জানার কারনে এখন পর্যন্ত আমি যে জ্ঞান লাভ করেছি আমার মনে হয় বাংলাদেশের একজন ডাক্তারও এতকিছু জানেনা। মরহুম মেয়র আনিসুল হক সাহেবের যে রোগ তা দেশে থাকতেই লক্ষণ ছিল। দেশে যে চিকিৎসা হয়েছে তা ছিল ভুল। লন্ডনে অজ্ঞান হয়ে পড়ার পর যে পরীক্ষায় মাধ্যমে তার আসল রোগ ধরা পড়ে সে পরীক্ষার নাম হল নিউকিয়ার। আল্লাহর রহমতে নিউকিয়ার স্কেনের মাধ্যমে জঠিল ও লুকানো রোগ ধরা পড়ে। বাংলাদেশে এই পরীক্ষাটি এখনও সর্বত্র চালু হয়নি। বাংলাদেশের ডাক্তার সাহেবরা শুধুমাত্র এনজিও গ্রাম এবং সিটি স্কেনের উপর ভরসা রাখেন। সুপ্রিয় পাঠক, আমি একজন হার্টের রোগী হিসেবে বছরে দুইবার হার্ট স্পেশালিষ্ট আমাকে দেখেন। গত বছর একজন ডাক্তার বললেন, আমার সন্দেহ আপনার হার্টের এক সাইটে ব্ল্যাট সার্কোলেশন কম হয়। এই সাইেটে ব্লক হয়েছে কি না তা এসজিও গ্রামের মাধ্যমে জানতে হবে। আমি বললাম, এসজিও গ্রাম একটি জঠিল বিষয় আর কি কোন মাধ্যম নাই পরীক্ষা করার? ডাক্তার বললেন, যারা মরানাপন্ন রোগী তাদেরকে বেশী নাড়াচাড়া করা যায়না বিধায় আমরা নিউকিয়ার স্কেনের মাধ্যমে পরীক্ষা করতে পারি। এই পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিত করা যায় আর এনজিও গ্রামের মাধ্যমে শুধু পরীক্ষা নয় হার্টের ছোটখাটো ব্লকে রিং বসানো যায়। জনাব আনিসুর রহমান সাহেব এই হাসপাতালে ঘুমিয়ে থাকাকালীন সময় আমারও একটা এপায়ানমেন্ট আসলো নিউকিয়ার স্কেন করতে। হাসপাতালে যাওয়ার পর আমি বিভিন্ন মাধ্যমে বুঝলাম যে, এই ডিপার্টমেন্টে কোন এক  নিবীর স্থানে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। কথা বলে জানতে পারলাম, নিজে থেকে না জাগলে মেয়র সাহেবকে জাগানো হবে না। আমি হাসপাতালে সারাদিন ছিলাম নিউকিয়ার স্কেন করতে। কিছুটা চেষ্টা করেছিলাম মরহুম মেয়র আনিসুল হক সাহেবকে দেখার জন্য। এই হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির একজন আমাকে বললেন, ইনফেকশন এর ভয়ের কারনে আমাকে দেখতে দিবেনা। এই হাসপাতালে সংক্রামন হয় বেশী বিধায় অনেক পদ্ধতি করে ডুকানো হয়, আবার জীবাণুমুক্ত বের হতে হয়। যখন আমাদেরকে এপায়নমেন্ট দেওয়া তখন এপায়নমেন্ট উল্লেখ করা হয় আপনার যদি কোন সংক্রামন হয় তাহলে আপনাকে আরেকটি এপায়নমেন্ট দেয়া হবে তবুও দয়া করে সংক্রামন নিয়ে আসবেন না। হাসপাতালে প্রবেশ মুখে লেখা আছে আপনি যদি হাসপাতালে প্রবেশ করতে চান তাহলে সংক্রামন জনিত রোগ যেমন সর্দি, কাশি, ডায়রেরিয়া, আমাশয় ইত্যাদি আক্রান্ত হন দয়া করে অন্যের জীবন ঝুঁকির মুখে না ফেলে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করুন এবং জরুরী হলে ফোন করে কথা বলুন। লন্ডনের চিকিৎসা বিজ্ঞান ও পদ্ধতি সম্পর্কে লিখার আমার একটি উদ্দেশ্য হল, ধনী গরীব সবাই যাহাতে চিকিৎসা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে চিকিৎসা নিতে পারে এবং একজন থেকে আরেক জনের কাছে পৌছে দেওয়া। মরহুম মেয়র আনিসুল হক সাহেব কিছু সুস্থ্য হওয়ার পর দীর্ঘদিন ঘুমিয়ে থাকার কারনে কিছুটা ব্যায়ামের জন্য অন্য একটি জায়গায় পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে সংক্রামন মধ্যে পরেন। মেয়র সাহেবের রক্তে সংক্রামন দেখা দেয়। মেয়র সাহেবকে ইউসিএইচ হাসপাতাল থেকে ব্যায়ামের জন্য অন্যত্র নেওয়া একেবারেই উচিৎ হয়নি। এজন্য মেয়রের পরিবার উক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন। মেয়র আনিসুল হকের গুনাবলী লিখে শেষ করা যাবেনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে মেয়রের সাথে পরিচিত ছিলাম। বর্তমানে পত্রপত্রিকায় জনাব মেয়র সম্পর্কিত লেখা আসছে কিন্তু জীবিত থাকতে সাংবাদিকরা তেমন গুরুত্বসহকারে লিখত না। দুঃখের বিষয় মরহুম মেয়রের লাশ লন্ডন থেকে বাংলাদেশে যাবার পর সে সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ ও টকশোতে লন্ডন থেকে সাংবাদিক তানভীর ভাই টেলিকনফারেন্সে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের সাথে লন্ডনের চিকিৎসা ব্যবস্থার নিয়ম ও বিধি নিষেধ নিয়ে ব্যাখ্যা করছিলেন। কিন্তু ঐখানে উপস্থিত মহিলা সাংবাদিক টকশোতে ইচ্ছাকৃতভাবে তানভীর ভাইকে থামিয়ে দিচিছলেন। ইহা আমরা কোনভাবেই পছন্দ করিনি। ঐ মহিলার চেহারা বা বাক ভঙ্গী দেখার জন্য আমরা টিভির সামনে বসিনা। বাংলাদেশের মানুষ তার স্বার্থের প্রয়োজনীয়তাতে কথা বলবে কিন্তু কিছু বিষয় আছে যেখানে বললে অন্য মানুষের উপকার সেই কাজটি করতে আমরা বাঙ্গালীরা রাজি নই। সর্বত্র শুধু টাকা কেমনে কামানো যায় সেই চিন্তা। এইসব মানুষ লন্ডনেও আছে কিন্তু লন্ডনে শুধু টাকা পয়সা কামানো নয় তারা তার পাশাপাশি জনস্বার্থে কাজও করে। যা হোক প্রিয় পাঠক, আমি একজন প্রতিবাদী সহজ ও সাধারন লোক। আমারও যে কখন মেয়রের মতো ঐ হাসপাতালের হিম ঘরে প্রবেশ করতে হবে তা জানিনা। শুধু জানি এ জীবন একদিন শেষ হয়ে যাবে আর অন্ধকার কবরে শুরু হবে কঠিনতম সময়। ঐ অন্ধকার কবরে আল্লাহ ও রাসুল ছাড়া কেহই সাহায্য করতে পারবেনা। মরহুম মেয়রের অসংখ্য গুণাবলী দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র করতে যখন ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন তখন মরহুম মেয়র তিনি তার পিতার কাছে জানতে চাইলেন আমি মেয়র নির্বাচন করব কি না। উনার পিতা বললেন, তোমার মায়ের কাছে জিজ্ঞাসা কর। মেয়র বললেন, আমার মা তো অন্ধকার কবরে শুয়ে আছেন। উনার পিতা বললেন, কবরে পাশে দাড়িয়ে তোমার মায়ের দোয়া নিয়ে আস। জনাব মেয়র সাহেব তাই করলেন। মরহুম মেয়র মা বাবার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তাদের দোয়ায় তিনি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছিলেন। অন্য দিকে ছয় মাস আগে একজন পাপী ডাক্তার এর বাবা অনাথ হিসেবে একটি হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। মারা যাওয়ার পর ঐ হাসপাতালের ডাক্তাররা সে লোকের পরিচয় পেয়ে ফোনে ঐ পাপীষ্ঠ ডাক্তার দোজখী বান্দাকে তার বাবার লাশ নেওয়ার জন্য বললে সে বলে আমার সময় নাই, আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দিয়ে দেন। এই ডাক্তার যে তার বাবার লাশ গ্রহণ না করে বেওয়ারিশ করে দেও সে ডাক্তারের কাছে আমরা যাই চিকিৎসা নিতে। প্রিয় পাঠক আপনারাই ভেবে দেখুন ঐ সব পাপী দোজখী ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা নিলে আপনী কতটুকু সুস্থ্য হতে পারবেন। প্রিয় পাঠক আজ থেকে বিশ বছর আগে স্থানীয় পত্রিকায় লিখেছিলাম যে, আমাদের যাবতীয় কার্যক্রম হাতের আঙ্গুলে চলে আসবে। তখন অনেকে আমাকে পাগল বলেছিল। বাস্তবে আপনারা দেখুন আজ প্রত্যেকের হাতে মোবাইল যা দিয়ে অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রন করা যায়। এমনও দিন সামনে আসতেছে হাতের ঐ ছোট যন্ত্রটি আরো ছোট হয়ে আঙ্গুলের অগ্রভাবে ছোট্ট ডিভাইস হয়ে চলে আসবে। ঐ সময় কম্পিউটার হাতের আঙ্গুল দিয়ে আর চালাতে হবেনা। তখন মনের ইচ্ছায় বা ইশারায় কম্পিউটার বা আষ্কিৃত যন্ত্রগুলো চলবে। সেই দিন হয়তো আমি থাকবোনা। তখন আমি পাগলের কথা মনে পড়বে নিশ্চই। যাই হোক সর্বশেষে মরহুম মেয়র আনিসুল হক সাহেবকে আল্লাহ বেহেস্তবাসী করুন এই প্রার্থনা করি।

লেখক, গবেষক, যুক্তরাজ্য।

প্রথম পাতা