লাভের গুড় খাইলায় পিঁপড়ায় ॥ হবিগঞ্জে ধানের দামের চেয়ে শ্রমিকের মুজুরি বৃদ্ধি ॥ কৃষকের মাথায় হাত
তারিখ: ২৫-এপ্রিল-২০১৯
স্টাফ রিপোর্টার ॥

‘এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) ক্ষেতে ধান অয়, বেশি অইলে ১৮ মণ। এ থেকে আরেকবার দাওয়ালরে (ধান কাটা শ্রমিক) দেলাইতে অয় চাইর (চার) মণ। তার পরে মাড়াই, ধান বাড়িতে নিতে ট্রলি, পানির বিল ও ক্ষেতের চুক্তিতে আরো চইল্লা (চলে) যায় সাত মণ। আর রোয়া থাইক্কা শুরু খইরা (ধান রোপণ থেকে শুরু করে) সব খরচ মিলাইয়া দেখা যায় কিছুই থাকে না। খইতে (বলতে) গেলে এখন গিরস্থী খইরা (কৃষি কাজ করে) কোনো লাভ নাই, লাভের গুড় খাইলায় পিঁপড়ায়’। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে উপরোক্ত কথা গুলো বলেন আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বিরাট গ্রামের কৃষক রুবেল মিয়া। তার কথায় যেন প্রকাশ পেয়েছে সমগ্র ভাটি বাংলার চিত্র। রুবেল আরো বলেন, ‘গেল বছর অকাল বন্যা আর ফিলে (শিলাবৃষ্টি) আমার সব ক্ষেত নষ্ট অইছলো (হয়েছিল)। ধার-দেনা করে এবার আবার ফলাইছি। কিন্তু দাওয়াল সংকট এবং ধানের দাম কম হওয়ায় লাভে নেই আমি’। সরেজমিনে বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হাওরে দেখা যায়, ধানের কাজে ব্যস্ত কৃষক-কৃষাণীরা। কেউ ধান শুকাচ্ছেন, মাড়াই করছেন, খড় শুকাচ্ছেন, কেউ আবার ধান সিদ্ধ দিচ্ছেন। যে যার মতো করে যা পারছেন, তাই করছেন। ব্যস্ত সময় পার করছেন নারী-পুরুষ, শিশুরসহ সকলেই। ধানের খলায় এ সময় কথা হয় ধান শুকানো কাজে ব্যস্ত আজগর মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, গত বছরের বিপর্যয়ের ফলে এবার আগাম বন্যার ঝুঁকি নিতে চাননি তারা। তাই ধান অনেকটা কাঁচা থাকতেই কেটে ফেলা হচ্ছে। এতে ফলনতো কম হচ্ছেই, যে ধান উঠছে তাতে চিটার পরিমাণও বেশি হচ্ছে। এছাড়া ধানের দামও অন্যান্য বছরের চেয়ে কম। সব মিলিয়ে কৃষকের এখন কোনো লাভ নেই। হারিয়ে গেছে কৃষকের হাসি। শুধু যে খড়গুলো ঘরে ওঠে, সেগুলো দিয়ে সারা বছরের গো-খাদ্য হয়। এটাই তাদের লাভ। সরকার তাদের পাশে না দাঁড়ালে তিনি আগামী বছর ধান চাষ ছেড়ে দেবেন বলেও দুঃখ প্রকাশ করেন।

কথা হয় আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামের তরুণ কৃষক ওয়ারিশ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সারাবছর কষ্ট করে ফসল ফলানোর পর ধান কাটা শ্রমিকদের কাছে জিম্মি থাকতে হচ্ছে কৃষককে। এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। কেননা এখনই অনেক কৃষকের আগ্রহ নেই আগের মতো। আগে যারা বেশি জমি চাষ করতেন, তারা প্রায় অর্ধেকের চেয়েও কম জমি চাষ করেন এখন’।

হবিগঞ্জ জেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এ জেলায় সরকারি হিসেব মতে ৪০ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। হবিগঞ্জ-বানিয়াচং আঞ্চলিক মহাসড়কে ধান শুকানো হচ্ছে। এর মধ্যে বৃ-ধান-২৮ এবং হাইব্রিড জাতের ধান বেশি কাটা হয়েছে। এছাড়া বৃ-২৯ জাতের ধান কাটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। কোন ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগেই ধান কাটা সম্পন্ন হবে আশা করি’। শ্রমিক সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। তবে এবার একটু বেশি’।

প্রথম পাতা