লাখাইয়ে হাজারো ঢাকা ফেরতের অবাধ বিচরণ ॥ বাড়ছে করোনা ঝুঁঁকি
তারিখ: ৩-এপ্রিল-২০২০
কাজল সরকার ॥

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস রোধে সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন চলছে। লকডাউন ব্যবস্থা সফল করতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে তৎপর রয়েছে পুলিশ বাহিনী। এছাড়াও মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী।

এরপরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মানুষের অবাধ বিচরণ। জেলা ও উপজেলা শহরগুলো অনেকটা লকডাউনের আওতায় থাকলেও সরগরম গ্রামীণ হাটবাজার। ফলে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকি।

সম্প্রতি বিদেশফেরত অনেকে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করলেও অর্ধেকেরও বেশি বিদেশফেরত মানুষকে খুঁজে পাচ্ছে না প্রশাসন। পরিচয় গোপন করে তারা জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পাশাপাশি উদ্ভূত করোনা পরিস্থিতিতে সরকার ঘোষিত ছুটি পেয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে আসা মানুষের অবাধ বিচরণকেও করোনা ঝুঁকির অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করছে স্থানীয় সচেতন মহল।

লাখাই উপজেলায় ঢাকা থেকে এসেছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। যদিও কতজন ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরেছেন সেই হিসেবে নেই প্রশাসনের কাছে। তবে স্থানীয়দের দাবি শুধু লাখাই উপজেলাতেই কয়েকশ’ মানুষ ঢাকা থেকে ফিরেছেন।

সম্প্রতি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরা মানুষদেরও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কিন্তু সেই নির্দেশনা মানছেন না কেউই। এখন পর্যন্ত ঢাকা থেকে গ্রামে ফেরা একজনও নেই কোয়ারেন্টাইনের আওতায়। প্রশাসনকেও এ বিষয়ে কোন নজরধারি করতে দেখা যায়নি।

ঢাকাফেরতরা প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রামীণ হাটবাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি শিশু-যুবকরা গ্রামের মাঠে বিভিন্ন খেলার আয়োজন করছেন। একে অপরের সাথে হাত মেলানোসহ করছেন কোলাকুলিও। তারা ঠিক মতো ব্যবহার করছে না মাস্কও।

লাখাই উপজেলার লাখাই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতোই জমজমাট হয়ে উঠেছে বাজারটি। ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত বাজারের চারপাশ। বাজারটি মূলত গ্রামীণ হাট হলেও হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ দুই জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেশ জমজমাট থাকে। লাখাই ছাড়াও কিশোরগঞ্জের দুটি উপজেলায় কয়েকশ’ ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা এই হাটে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করেন।

স্থানীয়দের দাবি- এই বাজারের ব্যবসায়ীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দোকান খোলা রেখে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। মাঝে মধ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনী অভিযান চালালে তারা দোকান বন্ধ করে দেন। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও খুলে ফেলেন দোকানপাট।

এছাড়া ওই বাজারে ঢাকা থেকে আসা কয়েকশ’ লোকের সমাগম ঘটে প্রতিদিন। যার ফলে সেখান থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি রয়েছে।

এ ব্যাপারে লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা কর্মকার বলেন, প্রতিদিন লাখাই বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন যাওয়ার খবর পেলেই ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে দেন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চলে গেলেই আবারও তারা দোকান খুলে ফেলেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, সারা উপজেলায় অভিযান চালাতে হচ্ছে, লাখাই বাজারে ২৪ ঘণ্টা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর মানুষ সচেতন না হলে কোন কিছুই সম্ভব না। আমরা মানুষকে সচেতন করতেও বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছি।

প্রথম পাতা