ভিলিজ পলিটিক্স ও গ্রাম্য শালিস বা বিচার ব্যবস্থার প্রতি, মানুষের আস্থার ঘনত্ব একেবারেই নিম্নপর্যায়ে
তারিখ: ৪-জুলাই-২০২০
রফিকুল ইসলাম, লাখাই ॥

যুগে যুগে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সালিশ পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সমাজের নানা অসঙ্গতি অন্যায়-অবিচার দূর করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি সামাজিক বিচার ব্যবস্থা মানুষকে অনেক শান্তি স্বস্থি ও নিরাপদ করেছে। আর এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে সমাজহিতৈষী কিছু সালিশ ব্যক্তিদের জন্যে। স্বেচ্ছাসেবামূলক এসব কাজে নিজের দায়িত্ববোধ ও নৈতিকতার প্রকাশ ঘটিয়ে সালিশিরা নিজেদের গৌরবান্বিত মনে করতেন। কিন্তু সময়ের সাথে মানুষের মানসিকতারও অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আমাদের গ্রামীন জনপদে (ভিলেজ পলিটিক্স) বা গ্রাম্য রাজনীতি নামে একটি প্রথা প্রচলিত আছে। যারা গ্রামে বসবাস করেন অথবা যাদের জন্ম গ্রামে, কিন্তু এখন শহরে বসবাস করছেন তাঁরা প্রত্যেকেই এই শব্দটির সাথে পরিচিত। (ভিলেজ পলিটিক্স) বা গ্রাম্য রাজনীতির ফাঁদে পড়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন এমনকি কাউকে গ্রাম পর্যন্ত ছাড়তে হয়েছে। যার প্রমান রয়েছে অহরহ। এই গ্রাম্য রাজনীতির ফাঁদে পড়ে বহু নারী প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছেন,এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে,সঠিক কথার কোন মূল্য দেওয়া হয় না। উল্টো বংশগতভাবে ঝগড়া লেগে পড়ে লাঠি, সোটা, কুচ, বল্লম ইত্যাদি নিয়ে। কোন কিছু হলেই চলে আবার সালিশের নামে অত্যাচার। এখন এমন এক অবস্থা দাঁড়িয়েছে, গ্রামে যাদের কিছু টাকা আছে বিচারে তাদের পাল্লাটাই ভারি। কারণ, গ্রামের সরদার নামক কিছু লোক আছে, তাঁরা বেশিরভাগ সময়ই তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলে। শুধুমাত্র নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য। সালিশ বিচার এর কার্যক্রম ও পক্ষগণের মধ্যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা নিয়ে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী মহল ও তাদের উত্তরসূরিরা যেভাবে প্রকৃত একটি ঘটনাকে বিকৃত করে মনগড়া বানোয়াট ভাবে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। তা কোন সমাজেই কাম্য হতে পারে না। একটি মহল বিবেক বিবেচনা বিবর্জিত হয়ে অত্যান্ত নির্লজ্জভাবে অতীতের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ঝেড়ে বিষোদগার করে। অপ্রাসংঙ্গিক ঘটনার সাথে ঘটনার রেশ টেনে দুধের তৃপ্তি পানিতে মেঠানোর মত শান্তনা খোঁজে বেড়াচ্ছেন। এই যারা বা যার ইন্দনে এসব করে বেড়াচ্ছেন তারা প্রকৃত পক্ষে অপরাধীদেরকেই আস্কারা দিয়ে ভালমন্দের বিচারে জেনে বুঝেই মন্দকেই বেছে নিয়েছেন তা এই সমাজের সচেতন মহলের আর বুঝতে বাকী থাকে না। (ভিলেজ পলিটিক্স) বা গ্রাম্য রাজনীতি এর নৈপথ্যে সাধরণত সালিশকারক (সরদার) নামক কিছু দুষ্টু লোক থাকেন। যাঁরা গ্রাম পরিচালনার নামে নিজেদের স্বার্থসাধনে নিরলশ প্রচেষ্টায় ব্যস্ত দিন কাটান। তাঁরা এমন লোক যে, মারাত্মক অপরাধ করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান। তাঁদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। আবার কেউ প্রতিবাদ করতে গেলেই তাকে উল্টো ফাঁদে পড়তে হয়। যাঁরা ঘৃনীত এই গ্রাম্য রাজনীতির নায়ক তাঁরা সব সময় সমাজের কাছে ভাল মানুষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে চান। অনেক সময় সেই চেষ্টায় তাঁরা সফলও হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, ওসব লেবাশধারী নায়কদের কেউ সম্মানের চোখে দেখে না। তবুও তাঁরা মিথ্যে অহংকারে নিজেকে নিয়ে গর্ববোধ করে। সমাজের ঐসকল নষ্ট কীটগুলোর অবস্থান নিঃসন্দেহে মজবুদ নয়। এদের ভীত খুবই ক্ষীনকায়। ঠুনকো ভিত্তির উপর দাড়িয়ে। এদের চেচামেচি ফাকা আওয়াজ বড় হলেও শক্তিশালী নয়। আবার এরা সংখ্যায় কম হলেও অভীন্ন স্বার্থের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ। এদের বাহিরের খোলসে খুবই চাকচিক্য, কিন্তু অন্তসারশূণ্য। এরা বাহারী কথাবার্তায় পারদর্শী কিন্তু পুরোটাই সত্যের অপলাপ মিথ্যার বেশাতি। সৎ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের লড়াইটা এদেরই বিরুদ্ধে। সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা। মানুষকে বিচারের নামে অবিচার নামক শাস্তির খড়গ হতে মুক্ত করা। এই লেবাছধারী ছদ্ববেশী মুরব্বীদের অপকর্মের বিষয়ে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিয়ে। এই নষ্টলোকগুলো আর ধাপটের সাথে যা ইচ্ছা তাই করতে না পারায় মনের ভেতর ক্ষোভ জন্মেছে। এরা গোপনে কঠিন এবং দাগী অপরাধীদের উস্কানি দিয়ে সৎব্যক্তিদের এ যৌক্তিক মিশনকে বাধাগ্রস্থ করতে চায়। কিন্তু তারা জানে না তাদের দিন শেষ পর্যায়ে। সুদিন আর বেশী দুরে নয়। সুড়ঙ্গের শেষে আলোর ঝলকানি স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। সত্যে উদম্ভাসিত সত্যের জয় অবশ্যম্ভাবি। এই গ্রাম্য সালিশ এর কবল থেকে গ্রামের নিরীহ, সহজ-সরল, সাধারণ মানুষ কি কখনোই মুক্তি পাবে না? সরকারের যথাযথ উদ্যেগ ও প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ এবং গ্রাম্য সালিশের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলেই এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যাবে, তথাপি মানুষে মানুষে বৈষম্য ও দুর হবে বলে আমরা আশাবাদী। “একটি সুস্থ সমাজ চাই,যেখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য নাই”।

প্রথম পাতা