শহরে আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক সুশান্ত ও তার লোকজনের সাথে একদল যুবকের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ \ ওসি তদন্ত দৌস মোহাম্মদসহ আহত ২০ \ ১১ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ফেইসবুকে ভাইরাল কে এই অস্ত্রধারী যুবক? গুলির শব্দে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক
তারিখ: ২০-এপ্রিল-২০২১
স্টাফ রিপোর্টার \

দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সুশান্ত দাস গুপ্তসহ তার লোকজন ও একদল যুবকের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। টানা দুই ঘন্টাব্যাপি রক্তক্ষয়ী এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষ ও পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে হবিগঞ্জ শহরের নোয়াবাদস্থ মাঠে সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে মাদক বিরোধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ চলাকালে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সুশান্ত দাশ গুপ্তের লোকজনের সাথে সমাবেশকারী একদল যুবকের কথা কাটা-কাটি হয়। এরই জের ধরে  বেলা দেড়টার দিকে শহরের চিড়াকান্দিস্থ সুশান্ত দাশ গুপ্তের শ্বশুড়ের বাসার সামনে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়। ঘটে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা।

খবর পেয়ে পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির পৃথকদল ঘটনাস্থলে পৌছে। এছাড়াও ঘটনাস্থলে পৌছে বিক্ষোব্ধ ছাত্র-জনতাকে নিবৃত করার চেষ্টা করেন হবিগঞ্জ পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র আতাউর রহমান সেলিম। এ সময় সুশান্ত দাশ গুপ্তের শ্বশুড়ের বাসার ছাদে কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনা যায়। এতে আশপাশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে ১১ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

এ ঘটনায় হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদ ও কয়েকজন পুলিশসহ উভয়পক্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসা এবং রিপন, হাসান ও ইয়াকুব নামে ৩ ব্যক্তিকে সিলেট ওসমানি মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

একাধিক এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, নোয়াবাদ মাঠে সমাবেশ চলাকালে সুশান্ত দাশ গুপ্ত তার নিজের ফেইসবুক আইডিতে আক্রমনাত্বক স্ট্যাটাস দেন। তিনি তার ফেইসবুক আইডিতে লেখেন ‘দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল কি শুরু হইছে? আইও, অপেক্ষা কররাম।’ এতে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সমাবেশকারী ছাত্র-যুবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে। এছাড়াও সংঘর্ষ চলাকালে নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে লাইভের মাধ্যমে ‘অশ্লীল ও অকথ্য’ ভাষায় গালি-গালাজ করেন সুশান্ত দাশ গুপ্ত। যে কারনে আরো বেশি উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে, সংঘর্ষের পর আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এক যুবকের ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ছবিতে দেখা যায়, সুশান্ত দাশ গুপ্ত যে ছাদ থেকে লাইভ দিয়েছেন, অস্ত্র হাতে সেই ছাদেই দাঁড়িয়ে আছে ওই যুবক। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কে এই অস্ত্রধারী যুবক?

ঘটনার পর সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিজ্ঞপ্তিতে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক সুশান্ত দাশ গুপ্ত অভিযোগ করে জানান, ‘সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একদল নেতা-কর্মী বিক্ষোভ মিছিল শেষে অতর্কিত ভাবে দৈনিক আমার হবিগঞ্জ পত্রিকা কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা পত্রিকা কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র আতাউর রহমান সেলিম বলেন, ‘একদল বিক্ষোব্ধ ছাত্র-জনতার সাথে সুশান্ত দাশ গুপ্তের লোকজনের সংঘর্ষের খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছুটে যাই এবং বিক্ষোব্ধ ছাত্র-জনতাকে নিবৃত করার প্রাণপন চেষ্টা করি। কিন্তু ফেইসবুক লাইভে এসে সুশান্ত দাশ গুপ্ত যেভাবে অশ্লীল ও অশোভন ভাষায় গালি-গালাজ করেছেন, তা কখনো একটি পত্রিকার সম্পাদকের মুখের ভাষা হতে পারে না। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।’

হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুক আলী বলেন, ‘খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রন করতে ওসি (তদন্ত) দৌস মোহাম্মদসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়। পরে ১১ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এ ঘটনায় কোন মামলা দায়ের হয়নি।’

প্রথম পাতা