দিদার এলাহী সাজু ॥ তীব্র শীতে বস্ত্র ও চিকিৎসাহীন অবস্থায় হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পড়ে থাকা অসহায় বৃদ্ধা আছমাকে আপদ মনে করে বিদায় করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মহিলা ওয়ার্ডের খাতায় তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে রেফার দেখানো হলেও কারা দায়িত্ব নিল, কিভাবে সিলেটে পাঠানো হল, এসব তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কারো কাছে। এ অবস্থায় ওই মহিলার ভাগ্যে কি ঘটেছে সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ দিকে, অসহায় বৃদ্ধা আছমাকে নিয়ে গত শনিবার দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সাড়া জাগে হৃদয়বান মানুষের বিবেকে। অনেকেই এগিয়ে এসেছেন ওই মহিলার দায়িত্ব নিতে। গতকাল রবিবার মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই থেকে বাহুবল উপজেলার নন্দনপুর এলাকার প্রবাসী আবদুল বাছিত মোবাইল ফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি ওই মহিলাকে চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা দিতে চান। এ ছাড়াও আয়ারল্যান্ড থেকে এ প্রতিবেদকের কাছে কয়েক দফা ফোন করে বিষয়টি জানতে চান তাসনুভা-শামীম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাগর আহমেদ শামীম। শামীম জানান, ওই মহিলার যাবতীয় দায়িত্ব নিতে তিনি আগ্রহী। এ জন্য তিনি তার এক প্রতিনিধির মাধ্যমে শীত নিবারণের প্রয়োজনীয় কাপড়, খাবার ও চিকিৎসা খরচের ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু গতকাল রবিবার দুপুর ২টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় সেখানে নেই বৃদ্ধ আছমা। এ সময় দায়িত্বরত নার্স জানান, গত শনিবার ৩টার দিকে সিলেট মেডিকেলে রেফার করা হয়েছে তাকে। কে দায়িত্ব নিল, তার কোন স্বজন এসেছিল কি-না, কিভাবে তাকে সিলেটে পাঠানো হল এমন তথ্য সংরক্ষণে আছে কি-না জানতে চাইলে দায়িত্বরত নার্স বলেন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ মবিন উদ্দিন আখঞ্জির সাথে যোগাযোগ করার জন্য। নার্সের কথামত ডাঃ মবিন উদ্দিন আখঞ্জির সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি রেফার করার বিষয়টি স্বীকার করে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ইমতিয়াজের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। গতকাল রাতে ডাঃ ইমতিয়াজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তথ্যটি তার জানা নেই। তবে তিনি বলেন, আজ অফিস চলাকালীন সময়ে যোগাযোগ করার জন্য।
এ অবস্থায় ওই মহিলা এখন কোথায় আছেন, কি ঘটেছে তার ভাগ্যে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণীর এক কর্মকর্তা জানান, যে সমস্যা নিয়ে বৃদ্ধা আছমা হাসপাতালে এসেছেন তার চিকিৎসা এখানেই করা সম্ভব ছিল। অহেতুক বাড়তি ঝামেলা এড়াতে ও আপদ মনে করে আছমাকে অন্যত্র পাঠানো হয়ে থাকতে পারে। উল্লেখ্য, বৃদ্ধা আছমা সপ্তাহখানেক ধরে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রায় বস্ত্রহীন ও চিকিৎসাহীন হিসেবে পড়ে ছিলেন। এ নিয়ে দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকায় একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয়।