স্টাফ রিপোর্টার \
নবীগঞ্জ সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ, বৈষম্যবিরোধি ছাত্র আন্দোলনের সময় সাবেক ডিবি প্রধান হারুনের রিসোর্টে পিকনিক করার অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এছাড়া কলেজের ব্যাংক হিসাবের টাকার গড়মিল ছাড়াও নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা করছেন না বলেও রয়েছে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্র জানায়, নবীগঞ্জ সরকারি কলেজ সরকারিকরণ হয় ২০১৮ সালে। এরপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান অধ্যাপক ফজলুর রহমান। অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি, সেশন ফি, ফরম পূরণসহ বিভিন্ন ক্লাস টেস্ট, ফরমের ফটোকপির নামে টাকা আত্মসাত ও কলেজ সকল ফ্রি পূর্বে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দেওয়ার নিময় থাকলে ও বর্তমানে তিনি দুই-তিন জন শিক্ষককে নিয়ে গোপনে ট্যাপ এর সাথে চুক্তি করে টাকা আদায় করেন। ডিগ্রির উপবৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র ছাত্রীদের কাছ থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মাসিক বেতন আদায়। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই দেওয়া হয় না কোনো রশিদ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ২০ টাকার স্থলে ২২০-২৫০ টাকা, অনার্সের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৫০০ টাকা। এছাড়াও, সরকারি ক্রয় নীতিমালা অনুসরণ না করেই করছেন কাগজে-কলমে তথা অপরিকল্পিত উন্নয়ন। এমন কি এসব উন্নয়ন কাজে স্টাফ কাউন্সিলের নেই কোনো অনুমোদন।
কলেজ সূত্র জানায়, অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে কলেজের সব কাজে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ করেছেন অনেক শিক্ষক-কর্মচারী। এ স্বেচ্ছাচারিতা বাস্তবায়নের জন্য কলেজে গড়ে তুলেছেন নিজের পছন্দমতো শিক্ষকদের বিশাল সিন্ডিকেট। কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন অবৈধ পরীক্ষা, ফরম ফিলাপ, ভর্তি ও বোর্ড ফেরত টাকার কমিটি। এতে করে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক শিক্ষক। নিয়ম অনুযায়ী অনার্সের সব ক্ষেত্রেই ১১ জন শিক্ষকের অংশগ্রহণ থাকার কথা। অথচ ৩ জন সিন্ডিকেটভুক্ত শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নিজের করে রাখেন সব সময়। বাকী শিক্ষকদের সচরাচর কোনো কমিটিতে রাখেন না বলে জানা গেছে। পছন্দের শিক্ষকদের দিয়ে অনার্সসহ বিভিন্ন শিক্ষাস্তরের কমিটি বানিয়ে সেই কমিটির মাধ্যমে কলেজের উন্নয়নের নামে বিভিন্ন কাজ হাতে নিয়ে তাদের সহযোগিতায় উত্তোলন করেন কলেজ তহবিলের টাকা। একই উন্নয়ন কাজ কয়েকবার বাস্তবায়ন করা, অপ্রয়োজনে উন্নয়ন কাজের নামে অর্থ খরচ, অনুদানের টাকায় নির্মিত স্থাপনা কলেজ তহবিলের টাকায় নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা, ভর্তি, ফরম ফিলাপ, উন্নয়ন কাজ, সবকিছুতেই উনি ৬০% সম্মানী নেন ভুয়া বাউচার করে, সেই সাথে আবার নিয়মিত সম্মানীও নেন। এমন কি কলেজের মাসিক বিলে অফিসের কর্মচারীর সহযোগিতায় ভুয়া বাউচার যুক্ত করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ও অভিযোগ রয়েছে। এসব কাজে সার্বিক সহযোগীতায় করেন প্রভাষক রফিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, অধ্যক্ষ ও উনার বাড়ি একই জেলায়। ইতিমধ্যে প্রভাষক রফিকুল ইসলামকে আহবায়ক করে ১০/১১ টা কমিটি করে দেন। যার প্রমাণ টাকা উত্তোলনের রেজিস্টারে সংরক্ষিত আছে। ক্লাসের পরিবর্তে পরীক্ষা ও বিল নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি নিজে স্বাক্ষর দিয়ে কর্মচারীর কাছ থেকে নগদ টাকা নেন, যার অনেক প্রমাণ সংরক্ষিত আছে বলেও বিশ্বস্থ সুত্রে জানাগেছে। অধ্যক্ষের একক স্বাক্ষরে কলেজ ফান্ড থেকে তোলা, আর্থিক বিষয় উনি নিজ হাতে হ্যান্ডেল করেন। তাঁর এহেন অনিয়ম দূর্ণীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছেন শিক্ষার্থীও অবিভাবক। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তার বিরুদ্ধে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুর রহমান বলেন, ‘অতিরিক্ত টাকা আদায়ের বিষয়ে জবাব দিয়েছি। যা তদন্তাধিন রয়েছে। আমরা পিকনিক করিনি। কলেজের সংশ্লিষ্টদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাৎসরিক শিক্ষা সফর উদযাপন করা হয়েছে। শিক্ষা সফরের বিষয়ে ছাত্র আন্দোলনের ১৫ দিন আগ থেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। আন্দোলন শুরু হলে প্রথমতে ওই শিক্ষা সফর বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরবর্তীতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় সকলের সর্বসম্মতিক্রমে কালারডুবা থেকে নৌকা যোগে আমরা মিঠামইনে শিক্ষা সফর উদযাপন করি’।