আজমিরীগঞ্জে কালনী-কুশিয়ারা নদীর তীরে দেখা দিয়েছে ভাঙণ। ভাঙন আতঙ্কে দিনরাত পার করছেন শত শত পরিবারের মানুষজন। ঘুম নেই তাদের চোঁখে মুখে। বিরাজ করছে উদ্বেগ আর আতঙ্কের চাপ। কখন জানি মাথাগোঁজার শেষ সম্বল টুকুও চলে যায় নদী গর্ভে সেই দুশ্চিন্তা তাদের মধ্যে। প্রতি বছরই বর্ষার শুরু এবং শেষের দিকে ভাঙন আতঙ্ক নিয়ে বছরের পর বছর পার করছেন নদী তীরবর্তী অসহায় মানুষগুলো। ইতোমধ্যে গেল তিন দশকে ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছেন সহস্রাধিক পরিবার। নতুন করে ভাঙনের মুখে রয়েছে আরো শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে- নদী ভাঙন রোধে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তবে স্থানীয়রা বলছেন- পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ কোন কাজেই আসছে না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালনী-কুশিয়ারা নদীর তীর ঘেঁষা কয়েকটি গ্রামের আরও শতাধিক পরিবার নদীভাঙনের শঙ্কায় দিনরাত পার করছেন। নদী ভাঙন প্রতিদিনই বাড়ছে। এতে বাস্তুহারা হচ্ছেন উপজেলার নদী তীবরর্তী মনিপুর, সৌলরী ও কালনীপাড়ার, ফিরোজপুরসহ অন্তত ৭/৮টি গ্রামের লোকজন। এরমধ্যে কয়েকটি বসতঘর যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে-এমন শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বাড়ি হারা অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন- বছরের পর বছর দশকের পর দশক ধরে নদী ভাঙন চলে আসলেও কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নেইনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যে কারণে প্রতি বছরই শত শত পরিবারের বসত ভিটা নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে। আর এতে করে অসহায় ও বাস্তহারা হচ্ছে গ্রামের সাধারণ মানুষজন।
সৌলরী গ্রামের রেখা রাণী সূত্রধর বলেন, গেল কয়েকদিন আগে তাঁর বসতবাড়িটি ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন অন্যের বাড়িতে বসবাস করছেন তিনিসহ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। তিনি যে বাড়িটিতে আশ্রয় নিয়েছেন সেই বাড়িটিও যে কোন সময় ভেঙে পড়তে পারে। তিনি বলেন, 'আমরা গরীব মানুষ, নদীতে ভেসে গেলেও আমাদের দেখার কেউ নেই। একই বাসিন্দা বাবুল সূত্রধর বলেন- দিন দিন নদী ভাঙন বেড়েই চলেছে। আমাদের বাড়ির বেশিরভাগই নদী গর্ভে চলে গেছে। বাকী অংশ টুকুও যে কোন সময় ভেঙে যেতে পারে। সুজিত দাস বলেন- নদী ভাঙন বুঝি আমাদের নিয়তি। আমাদের বাপ দাদার ভিটা চোখের সামনে একটু একটু করে নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে আমরা কিছুই করতে পারছি না। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড শুধু লোকদেখানো জিও ব্যাগ ফেলে। কার্যত কোন কাজে আসে না।
এ বিষয়ে আজমিরীগঞ্জের ইউএনও নিবিড় রঞ্জন তালুকদার বলেন, সৌলরীবাজার, মণিপুর, বদরপুর ও কালনীপাড়ার তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারি প্রকৌশলী পরিদর্শন করে রিপোর্ট করেছেন। দ্রæত আপদকালীন জরুরী নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ শুরু হবে।
হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, যেসব স্থানে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে সেইসব স্থানে দ্রæত কাজ শুরু হবে। ইতোমধ্যে সেইসব ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে।