রিচি গ্রামের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ॥ সালিশানদের উপর হামলায় জড়িতদের শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ॥ সৈয়দ সাব-কে অসম্মান করার মনমানষিকতা রিচি গ্রামের নেই
তারিখ: ২৮-জুলাই-২০১৪
স্টাফ রিপোর্টার ॥

গত ২৪ জুলাই শহরের কোর্ট স্টেশন এলাকায় রিচি এবং সুলতান মামদপুর গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ও পরবর্তী ঘটনার সম্পর্কে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন রিচি গ্রামবাসী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিচি গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ওই দিন মোতালিব চত্বর এলাকায় সুলতান মামদপুর গ্রামের দু’জনের বিরোধ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় রিচি গ্রামের জনৈক টমটম ম্যানেজার তাদের বিরোধ মিমাংসায় এগিয়ে গেলে তার সাথে সুলতাম মাহমুদপুর গ্রামের কয়েকজনের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে সুলতানমামদপুর গ্রামের কয়েকজন রিচি গ্রামের টমটম ম্যানজারকে মারতে এগিয়ে আসে। ঘটনার আকস্মিকতায় রিচি গ্রামের টমটম ম্যানেজারের পক্ষ নেয় কোর্ট স্টেশন এলাকায় উপস্থিত টমটম চালকরা। এতে করে উভয় পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বাধে। যা এক পর্যায়ে ভয়াবহ রূপ ধারন করে। সংঘর্ষের ঘটনাটি তাৎক্ষনিকভাবে পুলিশকে অবহিত করলেও প্রায় ১ ঘন্টা পর কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ বিনা উস্কানিতে লোকজনকে লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও গুলি ছুড়ে এবং লাটিচার্জ করে। এক পর্যায়ে রিচি ও সুলতান মামদপুর গ্রামের মুরুব্বী এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে। এ সংঘর্ষে রিচি ও সুলতানমামদপুর গ্রামের মুরুব্বীসহ ৫০/৬০ জন আহত হন। এ ঘটনার খবর পেয়ে রিচি গ্রামের লোকজন রাতে রিচি ঈদগা মাঠে জড়ো হয়। এ সময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক এর নেতৃত্বে শহরের বিশিষ্ট কয়েকজন মুরুব্বী রিচি ঈদগা মাঠে উপস্থিত হন। সালিশানরা উপস্থিত রিচি গ্রামের মুরুব্বীদের নিকট সংঘর্ষের ঘটনাটি সালিসে নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেন। এ সময় গ্রামের মুরুব্বীগণ তাদের প্রস্তাব মেনে নেন এবং এ ঘটনার জের ধরে আর কোন অঘটন না ঘটার নিশ্চয়তা দিয়ে মিমাংসার বিষয়টি পরে জানানো হবে বলে সৈয়দ আহমদুল হক সহ শালিসানদের জানানো হয়। রিচি গ্রামের মুরুব্বীদের পক্ষ থেকে জবাব দেবার পর সৈয়দ আহমদুল হক সহ শালিসানগণ সভাস্থল ত্যাগ করে প্রায় ৫শ গজ দুর চলে যান। কিন্তু বানিয়াচঙ্গ উপজেলার মন্দরী ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার জালাল উদ্দিন সভাস্থলের পাশে তার এক পরিচিত লোকের সাথে কথা বলায় তিনি পিছনে পড়ে যান। এ অবস্থায় মন্দরী ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার জালাল উদ্দিনকে সুলতান মামদপুর গ্রামের জনৈক নেতা (যার নির্দেশে পুলিশ রিচি গ্রামবাসীর উপর গুলি চালায়) মনে করে কতিপয় উশৃংখল ব্যক্তি তার উপর হামলা চালায়। সাথে সাথে গ্রামের মুরুব্বীরা খন্দকার জালাল উদ্দিনকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যান এবং চিকিৎসার জন্য গাড়ি দিয়ে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে এসে ভর্তি করেন।
এদিকে ঘটনার সাথে সাথে রিচি মধ্যগ্রামে পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে বসা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক সহ অন্যান্য শালিসানগণের নিকট গ্রামের মুরুব্বীরা ছুটে যান। এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য রিচি গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ মুরুব্বীরা সর্বজন শ্রদ্ধেয় উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হক এর পায়ে ধরে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এতে সৈয়দ আহমদুল হক সহ অন্যান্য সালিশানগণ সন্তুষ্ট হয়ে রিচি গ্রাম থেকে চলে আসেন। এদিকে সৈয়দ আহমদুল হক সহ অন্যান্য শালিসানগণের সাথে যোগাযোগ সাপেক্ষে ঘটনার পরদিন শুক্রবার দুপুরে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে রিচি গ্রামের মুরুব্বী আলহাজ্ব মোঃ রইছ মিয়া, রিচি গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আহসান উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, রিচি যুবসংঘের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ বরকত আলী, সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিতু মিয়া সহ গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বীগণ হাজির হন। সেখানে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে পুণরায় রিচি গ্রামের মুরুব্বী আলহাজ্ব মোঃ রইছ মিয়া, রিচি গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি আহসান উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, বিশিষ্ট মুরুব্বী রিচি যুবসংঘের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিতু মিয়া সহ গ্রামের বিশিষ্ট মুরুব্বীগণ সৈয়দ আহমদুল হক সহ শালিসানদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে ঈদের পরদিন জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে হাজির করার জন্য রিচি গ্রামের মুরুব্বীদের দায়িত্ব প্রদান করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, রিচি ও সুলতান মামদপুর গ্রামের লোকজনের মাঝে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ও আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে। ইতিপূর্বেও একাধিকবার এ দু’গ্রামের লোকজনের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এবং তা উভয় গ্রামের মুরুব্বীদের হস্তক্ষেপে সমাধান হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উল্লেখ করা হয়-সৈয়দ আহমদুল হক এর প্রতি রিচি গ্রামের মানুষ অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। তাকে হত্যা তো দুরের কথা অসম্মান করার মনমানষিকতাও রিচি গ্রামের মানুষের নেই। সংবাদ সম্মেলনে বানিয়াচঙ্গ উপজেলার মন্দরী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খন্দকার জালাল উদ্দিনের উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করা হয়।
আগামী ৪ আগস্ট হবিগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ কর্মসূচির ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিচি গ্রাম পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, আমরা শান্তিপুর্ণ সমাধানে বিশ্বাসী। সৈয়দ আহমুদুল হক একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি। তিনি এমন কোন পদক্ষেপ নিবেন না যার দ্বারা কোন রকম শান্তি শৃংখলা ভঙ্গ হয়। সৈয়দ সাহেবের প্রতি আমাদের পুর্ণ আস্থা রয়েছে।

শেষ পাতা