ন্যাশনাল টি কোম্পানীর জেনারেল ম্যানেজার কেরামত আলীসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
তারিখ: ১৩-মে-২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার \

 ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড-এর জেনারেল ম্যানেজার (ফাইনান্স এন্ড একাউন্স) কেরামত আলীসহ ২/৩ জন অজ্ঞাত আসামীর বিরুদ্ধে দূর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোম্পানীর শেয়ারহোল্ডার শাহ মোঃ হুমায়ূন কবীর বাদি হয়ে হবিগঞ্জের সিনিয়র স্পেশাল জজ ও সিনিয়র দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আগামী ৫ জুনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দূর্নীতি দমন হবিগঞ্জের উপ-পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড সরকারের অধীনস্থ একটি লিমিটেড কোম্পানী। যাহার জয়েন্ট স্টক কর্তৃক নিবন্ধিত এবং শেয়ার বাজার অধিনে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করে। উক্ত কোম্পানীটি বাংলাদেশ সরকার ৫১% শেয়ার, ৪৯% শেয়ার উদ্যোক্তা পরিচালক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। ১৯৭৮ সালে ১২টি চা বাগান নিয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড সরকারী কোম্পানী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার জগদ্বীশপুর চা বাগান, তেলিয়াপাড়া চা বাগান, চুনারুঘাট উপজেলার পারকুল চা বাগান, চন্ডিছড়া চা বাগান অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। উল্লেখিত চা বাগান থেকে চা উৎপাদন করে বাজারে বিক্রয় ও রপ্তানী করে অর্জিত অর্থ বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং উল্লেখিত বাগানের শ্রমিকের মজুরী ও বাগান উন্নয়নে অর্থ ব্যয় হয়। উক্ত কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসাবে গণ্য হলেও কোম্পানীতে কর্মরত অসৎ, দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিশেষ করে ১নং আসামী কেরামত আলী গংদের দুর্নীতিমূলক কর্মকান্ডের কারণে কোম্পানীটি ২০১৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হতে থাকে। এমনকি ২০২২-২৩ অর্থ বৎসরে কোম্পানীর প্রায় ৬৮ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় এবং চলতি অর্থ বৎসরেও উল্লেখিত আসামী গংদের দুর্নীতি পরায়ন কর্মকান্ডের কারণে উক্ত কোম্পানী প্রায় শতকোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হবে বলে ধারনা। যার কারণে উল্লেখিত চা বাগানের শ্রমিকের মুজুরী যথাসময়ে পরিশোধ সম্ভবপর হয় না এবং ব্যাংক বা অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট দেনার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ও আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আসামী কেরামত আলী ২০১৬ইং সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড-এ উপ-মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) পদে যোগদানের পর থেকে কোম্পানী অসৎ দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে ক্ষমতাশালী দূর্নীতিপরায়ন কর্মকর্তায় পরিণত হন। ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর কেরামত আলী পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড এর বরাবরে চাকুরী হতে অব্যাহতির পত্র জমা দিয়ে চাকুরী থেকে অব্যাহতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। (যাহার সিরিয়াল নং- ৫৭৫, তাং- ৩১/১২/২০২১ইং)। উক্ত আবেদনটি ন্যাশনাল টি কোম্পানী লিমিটেড এর পরিচালনা পর্ষদ ১১/১১/২০২১ইং তারিখ অনুষ্ঠিতব্য ৬৩২তম বোর্ড সভায় আসামী কেরামত আলীর চাকুরী হইতে পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেন। পত্রে উল্লেখ করেন যে, ৩১/১০/২০২১ইং তারিখে কোম্পানী ব্যবসার সময় বদ্ধ হওয়ার পরে পদত্যাগ পত্র কার্যকর হবে জেনে সাক্ষী আসাদুজ্জামান রাফিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আসামীকে নির্দেশ প্রদান করেন। কেরামত আলীকে যার কপিও প্রদান করা হয়। আসামী কেরামত আলী উক্ত কপি প্রাপ্ত হওয়ার পর ৩১/১২/২০২১ইং তারিখে স্বীয় পদ পত্র অনুযায়ী কোম্পানীর নিয়োজিত লোকের নিকট বুঝিয়ে না দিয়ে পদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোম্পানীর নিয়োজিত অসৎ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের পরস্পর যোগসাজশে সরকারী চাকুরী আইন অনুসারে স্বীয় পদে পুনঃ বহালের আবেদন না করে স্বীয় পদে বহাল থেকে বেআইনীভাবে জি এম পদে পদন্নোতি লাভ করেন। উক্ত কোম্পানীর নিকট থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে প্রায় ২৭ মাসের বেতন অনুমান প্রায় চৌত্রিশ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন। এনটিসিতে যোগদানের সময় আসামী কেরামত আলীর মূল বেসিক ছিল পচিশ হাজার টাকা। কিন্তু সরকারী চাকুরী আইন অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্যান্য অসৎ কর্মকর্তাদের সহায়তায় এক সাথে বেতনে অনুমান ৬/৭টি ইনক্রিমেন্ট যোগ করে বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয় সরকারী চাকুরী বিদ্যমান আইনে কার লোন স্কীম নিতে হলে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ হিসেবে ধারাবাহিকভাবে ৩ বৎসর চাকুরী করলে কার প্রাপ্ত হবেন। কিন্তু কেরামত আলী উক্ত কোম্পানীর অসৎ দুর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তাদের বশিঃভূত করে চাকুরীতে যোগদানের ৪ মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে দশ লক্ষ টাকা কার লোন প্রাপ্ত হন। কোম্পানীর আভ্যন্তরীন অডিট রিপোর্টে প্রকাশ হয় আসামী কেরামত আলী ৩১/১২/২০২০ইং তারিখ পর্যন্ত কোম্পানী থেকে কার লোন, অকটেন ক্রয়, রক্ষনাবেক্ষণ খরচ, টায়ার, টিউব, ব্যাটারী, পরিশোধিত কর ইত্যাদি দেখিয়ে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানের উনিশ লক্ষ চিয়ানব্বই হাজার নয়শত ষাট টাকা উত্তোলন করে সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া কেরামত আলী ১০/১২/২০১৬ইং তারিখ থেকে প্রধান অর্থ কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন এবং একই পদের সমান সাবেক সচিব লোকমান হোসেন উভয়ের মূল বেতন সমান হলেও লোকমান হোসেনের বেতন থেকে প্রতি বৎসর আয়কর কর্তন করা হয় এগার হাজার পাঁচশত টাকা। কিন্তু কেরামত আলীর বেতন হতে প্রতি বৎসর আয়কর কর্তন করা হয়েছে ৬ হাজার টাকা। এ ভাবে কেরামত আলী আয়কর জমা না দিয়ে কর বাবত পাঁচ লক্ষ টাকা রাজস্ব আত্মসাৎ করেছেন। কেরামত আলী বেআইনীভাবে সরকারী চাকুরীতে কর্মরত থেকে বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করে স্ত্রী আত্মীয় স্বজনের নামে বে-নামে ঢাকায় ও দেশের বাড়ীতে প্লট জমিসহ সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া অবৈধ অর্জিত অর্থ বিত্ত ও সম্পত্তির সঠিক কোন আয়কর ও সম্পত্তির সঠিক বিতরনী যথাযথভাবে দাখিল করেননি। ফলে যাহা দূর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ সালের ২৭(১) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত করেছেন। উল্লেখিত অপরাধসহ নানা অপকর্ম নিয়ে সামাজিক সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় ধারাবাহিক একাধিক সংবাদ প্রচার হয়। কেরামত আলী গং প্রভাবশালী ও অবৈধ অর্থে বিত্তমান হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।