মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে হবিগঞ্জ পৌরবাসীর ভাগ্য ॥ মেয়র আছেন মেয়র নেই উপ-নির্বাচন কবে?
তারিখ: ১২-জানুয়ারী-২০১৯
দিদার এলাহী সাজু ॥

প্রায় দেড়মাস ধরে অভিভাবকহীন * আর্থিক, প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজে স্থবিরতা * বিঘিœত হচ্ছে নাগরিক সেবা ও হুচট খাচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা

হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। মেয়র আছেন, না-কি নেই; কবে হচ্ছে উপ-নির্বাচন? নিশ্চিত করে কেউই জানেন না এসব খবর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নিরবতায় ঝুলে আছে মেয়রের পদ, পৌরবাসীর ভাগ্য। এ অবস্থায় আর্থিক, প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজে চলছে স্থবিরতা। অনেকটা অরক্ষিত ও  অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের এ নগর। সার্বিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন পৌরবাসী, হুচট খাচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা। জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচনী আইনের বাধ্যবাদকতার কারনে গত ২৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় বরাবর পদত্যাগপত্র প্রেরণ করেন হবিগঞ্জ জেলা বি.এন.পি’র সাধারন সম্পাদক ও হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জি.কে গউছ। কিন্তু পদত্যাগপত্র প্রেরণের প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও ‘মেয়র পদ শূন্য’ হয়েছে কি-না এ সংক্রান্ত কোন ঘোষণা আসেনি মন্ত্রণালয় থেকে। যে কারনে ‘মেয়র আছেন, না-কি নেই’ এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধুম্রজাল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন অনুযায়ী পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে ‘মেয়র পদ শূন্য’ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনকে চিঠির মাধ্যমে জানাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। চিঠি প্রাপ্তির ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে নির্বাচন কমিশন। আর পদত্যাগপত্র গ্রহন না করলে স্বপদেই বহাল থাকবেন মেয়র জি.কে গউছ।

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) মোঃ সফিউল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জি.কে গউছ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে আবেদন করে পদত্যাগ করেছেন। নিয়ম মাফিক তা গৃহীত হবে। তবে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তের চিঠি আমাদের কাছে আসেনি। আশা করি শীঘ্রই মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্তের চিঠি আসবে। তখনই নিশ্চিত হতে পারব ‘মেয়র পদ শূন্য’ হয়েছে কি-না’’।

তিনি বলেন, ‘‘জি.কে গউছের পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে মন্ত্রণালয় থেকে নির্বাচন কমিশনকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হবে। এরপর নির্বাচন কমিশন ‘মেয়র পদ শূন্য ঘোষণা’ করে ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন’’।

এদিকে, মেয়র জি.কে গউছের পদত্যাগপত্র প্রেরণের পর এখনো পর্যন্ত কাউকেই দেয়া হয়নি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব। এ অবস্থায় প্রায় দেড় মাস যাবত মেয়র বিহীন অবস্থায় চলছে ঐতিহ্যবাহী হবিগঞ্জ পৌরসভা। বলা যায়, দৃশ্যত পৌরসভাটি অরক্ষিত ও অভিভাবকহীন। যে কারনে আর্থিক, দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজে চলছে স্থবিরতা। কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী। তবে এ ব্যাপারে পৌর কাউন্সিলর ও পৌর প্যানেল মেয়র দিলিপ দাস জানান, ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব কাউকে দেয়া না হলেও, নিয়ম অনুযায়ী প্যানেল মেয়র হিসেবে তিনিই পালন করছেন দৈনন্দিন দাপ্তরিক কাজ।   

স্থানীয় অনেক সচেতন নাগরিক আক্ষেপ করে জানান, শনিরদশা চলছে হবিগঞ্জ পৌরসভায়। এমনিতেই প্রধান প্রকৌশলীসহ বিভিন পদ শূন্য রয়েছে। এরই মাঝে মেয়র পদ নিয়ে একের পর এক দেখা দিচ্ছে বিভ্রাট। ইতিপূর্বে জি.কে গউছ কিবরিয়া হত্যা মামলায় আদালতে আত্মসমর্পনের মাধ্যমে কারান্তরীন হলে দীর্ঘদিন অভিভাবকহীন ছিল হবিগঞ্জ পৌরসভা। সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে কারাগার থেকে আবারো বিজয়ী হন জি.কে গউছ। পরে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মেয়র হিসেবে শপথ নিলেও কিছু দিন পরই আইনী কারণে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত হন তিনি। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে উচ্চ আদালতে আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে স্বপদে বহাল হন। এসব ঘটনা প্রবাহে অনেকাংশেই বিঘিœত হচ্ছে নাগরিক সেবা।  হুচট খাচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা।