বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ১৭ জুলাই থেকে যাত্রাবাড়ির রায়েরবাগ সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলেন নাহিদ ইসলাম (২০)। পুলিশ বেশি মারমুখি ছিলো এখানে। সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে। সেই ১৯ জুলাই বিকালে রায়েরবাগ মোড়েই পুলিশের গুলিতে রক্তাক্ত হন পলিটেকনিক্যালের ছাত্র নাহিদুল ইসলাম। তবে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন তিনি। এখন উন্নত চিকিৎসার অভাবে বুলেটের ক্ষত নিয়ে কাতরাচ্ছেন। লাখাই উপজেলার জিরুন্ডা গ্রামের তাজুল ইসলামের পুত্র আহত নাহিদুল ইসলাম। পার্ক পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের শিক্ষার্থী। মাতুয়াইলের একটি মেসে থেকে তিনি লেখাপড়া করতেন।
নাহিদুল ইসলাম বলেন, তার বাবা একজন সামান্য হোটেল কর্মচারী। ৯ ভাই-বোনের যৌথ সংসারে নাহিদ ইসলাম (৫ম)। এর মধ্যে ৪ ভাই-বোন লেখাপড়া করেন। সংসারে হাল ধরার মতো বিকল্প কেউ নেই। আর্থিক অভাব-অনটনের মধ্যেই চলছে তাদের দিন। এরই মধ্যে চিকিৎসার পেছনে তার পরিবারকে ধার-দেনা করে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়েছে। সরকার কিংবা জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা পাননি নাহিদুলের পরিবার। ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বললেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। তবে জীবনে কিছু পাই বা না পাই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুতে যেমনটা ছিলাম আগামীদিনেও দেশের জন্য একই দাবিতে আছি এবং থাকব। তিনি আরও বলেন, এই সরকারের কাছে আমার একটি আবদার যদি ভালো একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে বাবা মা ও অভাব-অনটনের পরিবারের পাশে যদি দাঁড়াতে পারতাম তাহলে আমার আর কোনো দুঃখ ছিলনা। গত ১৯ জুলাই কদমতলী থানাধীন রায়েরবাগের স্পটে তিনি অবস্থান নেন। ওইদিন সকাল থেকে কয়েকশ আন্দোলনকারী রায়েরবাগের প্রধান সড়কে অবস্থান নেন। উদ্দেশ্য ছিলো কদমতলী থানা থেকে যাতে পুলিশ বের হতে না পারে। বিকাল ৪টার দিকে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় পুলিশের এপিসি গাড়ি থেকে বেপরোয়াভাবে এলোপাতাড়ি গুলি করা হয়। এতে তার মাথা, মুখ, গলাসহ শরীরে ত্রিশটি গুলি বিদ্ধ হয় নাহিদুল। তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। কয়েক জন আন্দোলনকারী তাকে উদ্ধার করে কাজলার স্থানীয় সালমান নামে একটি হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তার প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। এ সময় শরীরে বিদ্ধ অনেকগুলো ছররা গুলি বের করা হয়। আন্দোলন চলার কারণে তিনি অসুস্থ থাকলেও আর কোথাও ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়ার সুযোগ পাননি। কারণ ওই সময় বেশিরভাগ হাসপাতালে পাহারা বসিয়েছিলো আ’লীগের দোসররা। যাতে করে আন্দোলনকারীদের কেউ চিকিৎসা করাতে না পারেন। দেশ স্বাধীনের পর গত ১৮ অক্টোবর তাকে ভর্তি করা হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। সেখানে মাথায় বিদ্ধ থাকা দু’টি গুলি বের করা হয়। কিন্তু এখনো তার শরীরে রয়ে গেছে ৭টি গুলি। এর মধ্যে গলায় দু’টি গুলি থাকায় তিনি শক্ত খাবার খেতে পারেন না। আহত নাহিদের বাবা তাজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে গুলির ক্ষত নিয়ে বাড়িতে বিছানায় পড়ে থাকলেও দরিদ্র বাবা অর্থাভাবে ছেলের উন্নত চিকিৎসা না করাতে পেরে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। গলা থেকে গুলি বের করা জরুরি অন্যথায় থেমে যেতে পারে আমার ছেলের জীবনের গতি। আক্ষেপ করে বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত নিহত সিংহভাগ শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করলেও আমার ছেলেটার বেলায় তা জোটেনি। এসময় হাউমাউ করে কেঁদে তিনি আরও বলেন, আমি বর্তমানে হোটেলে দিনমুজুরি করে কোনোমতে বেঁচে আছি। এখন আবার ছেলের এই অবস্থা। ছেলের চিকিৎসায় ব্যয় মিটাতে না পেরে এখন মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে আমাকে।