চুনারুঘাটের মোজাফফর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের ষড়যন্ত্র
তারিখ: ৭-জানুয়ারী-২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার \

 চুনারুঘাট উপজেলার গণেশপুর আলহাজ্ব মোজাফফর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাকের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা নানান ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই চক্রটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শফিকুল ইসলামকে পদচ্যুত করে একই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মোঃ আবুল খায়েরকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ নিয়ে বিদ্যালয়ে চলছে উত্তেজনা।
এলাকাবাসী সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালে গণেশপুর আলহাজ্ব মোজাফফর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পর বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন শফিকুল ইসলাম। পরবর্তীতে তিনি বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৫ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান শফিকুল ইসলাম। তিনি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব তিনি নেওয়ার পর ফলাফল অর্জনের দিকে আরো একধাপ এগিয়ে যায় বিদ্যালয়টি। শুধু ফলাফল অর্জন নয়, বিদ্যালয়ের উন্নয়নেও তিনি বলিষ্ট ভ‚মিকা রাখেন। ওই উন্নয়ন মূলককাজ ও অবৈধ নিয়োগে বাধা প্রদান করতে গিয়ে তাকে পড়তে রোষানলে। অভিযোগ রয়েছে সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শামসুজ্জামান শামীম বিদ্যালয়ের ১০১ শতক ভ‚মি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভোগ দখলে রেখেছেন। ওই জায়গা থেকে শামীমকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিলে শামীম গং তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। শুধু তাই নয়, পাইকপাড়া গ্রামের আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল হাই’র ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আব্দুর রউফ স্ত্রীকে বিদ্যালয়ের আয়া পদে এবং বড়ধুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক মোমিন এর ভাইকে বিদ্যালয়ের শেখ রাসেল ল্যাবের জন্য ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট পদে নিয়ম বর্হিভ‚তভাবে নিয়োগদানের জন্য প্রধান শিক্ষকের উপর চাপ প্রয়োগ করেন। এতে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম রাজি না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সাবেক চেয়ারম্যান শামীমের সাথে বিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থ’ী শিক্ষকরাও একজোট হন। 
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম পারিবারিকভাবে বিএনপি পরিবারের সন্তান। তাকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে সরানোর জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শামীম, সহকারি শিক্ষকসহ আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা ষড়যন্ত্রের সাথে লিপ্ত হয়েছিলেন। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তার বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন। বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক মোঃ আবুল খায়ের সতং বাজারের একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসা দেখাশোনা কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে নিয়মিত স্কুলে এসে ক্লাস করাতে পারেন না। এতে প্রধান শিক্ষক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললে তিনিও প্রধান শিক্ষকের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। মোঃ আবুল খায়ের ব্যক্তি জীবনেও এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও পাইকপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারী হওয়ার কারণে ক্ষমতার দাপটে সবকিছু থেকে পাড় হয়ে গেছেন তিনি। আওয়ামীপন্থী বিদ্যালয়ের ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষক মোঃ শামছুর রহমান শিক্ষকতার পাশাপাশি দেওরগাছ ইউনিয়নের নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের (কাজী) এর দায়িত্বও পালন করেন। এলাকার কোথাও বিয়ে শাদী হলে স্কুলের ক্লাস রেখে সেখানে ছুটে যান তিনি। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেন কৃষি শিক্ষক মোঃ রফিকুল ইসলাম। রফিকুল ইসলামের একটি কোচিং সেন্টার রয়েছে। এর সকল ফার্নিচারও স্কুল থেকে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তার উপর শিক্ষার্থীদের সাথে অনৈতিক আচরণ করার অভিযোগও রয়েছে। এসব শিক্ষকদের অনিয়মের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক সোচ্চার হলে, তারা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এরই প্রেক্ষিতে সাবেক চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান শামীমকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের চক কষেন তারা। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে নিজেদের পছন্দের লোকদের দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রধান বিরুদ্ধে ভ‚য়া ও ভুল তথ্য দিয়ে অপপ্রচার শুরু করেন। এতে বিদ্যালয়ের অভিভাবকসহ এলাকার সচেতন মহলের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কবির মিয়া জানান, প্রধান শিক্ষক অনেক সুনামের সাথে শিক্ষকতা করছেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর স্কুলের অনেক উন্নয়নও হয়েছে। বিদ্যালয়ের ১০১ শতক জায়গা অবৈধভাবে সাবেক চেয়ারম্যান শামীম দখল করে রেখেছেন। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে শামীমের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সাবেক চেয়ারম্যান শামীমসহ আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের কথামত অবৈধ নিয়োগ প্রদানের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক একমত না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তারা। এর অংশ হিসেবে প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে সরানোর জন্য তারা নানা ষড়যন্ত্র করছেন। আমি একজন অভিভাবক হিসেবে বলবো প্রধান শিক্ষক একজন ভালো শিক্ষক। তিনি কখনো দুর্নীতির সাথে জড়িত হতে পারেন না। তাকে সরানোর জন্যই এসব ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মাগুরুন্ডা গ্রামের বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন- প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বিদ্যালয়টিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর ফলাফল অর্জনের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু যাদের স্বার্থহাসিল হচ্ছে না, তারাই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপ-প্রচার করছেন। আমরা তাকেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দেখতে চাই।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, আমি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজের সন্তানের মত দেখি। তাদের উজ্জল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই আমি সরকারি নিয়ম মেনে সঠিকভাবে ক্লাস করানোর জন্য শিক্ষকদের চাপের মুখে রাখছি, যার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অনেকটা উন্নত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানেরও আমি উন্নয়ন করেছি। কিন্তু একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যালয়ে ঢুকে অনিয়ম করে যাচ্ছেন। তাদের অনিয়মে আমি প্রতিবাদ করায় তারা আমাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছেন। এ ব্যাপারে আমি সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

প্রথম পাতা