চুনারুঘাটে আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে তিনটি পরিবার। নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন খোলা আকাশের নিচে দশজন সদস্যের ৩টি পরিবার। সহায় সম্বলহীন এসকল অসহায় মানুষের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের নিছে। খেয়ে না খেয়ে খালি হাতে পরিবার নিয়ে কনকনে শীতে স্রষ্টার দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। কেউ একজন হয়তো আসবে তাদের পাশে দাঁড়াতে। সরেজমিনে আগুনে পোড়া উপজেলার হাতুন্ডা বিলপাড় গিয়ে চোখে পরে ৩টি পরিবারের মানবেতর দৃশ্য।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অনেকেই পোরা ঘরের ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ করছেন। ঘরের এরিয়াতে পড়ে আছে ঘরের বিভিন্ন আসবাববপত্রের পোড়া অংশ। অনেকই উপরিদর্শন করে তাদেরকে শান্তা দিচ্ছেন আর ক্ষতিগ্রস্তরা ঘরের পাশে বসে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। সকলেই শূন্য হাতে তীব্র শীতে কাঁপছেন। অনেকে তাদের ছোট ছেলে মেয়েদের কোনোরকম চাদর মুড়িয়ে রেখেছেন। কথা হয় তিন অসহায় পরিবারের সদস্যদের সাথে। পরিবারের ৩ সন্তান নিয়ে থাকতেন অসহায় নারী হানিফা আক্তার মনি। তিনি বলেন, ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সময় আমি ঘরের বাহিরে ছিলাম। মাইনসে কইলো ঘরে আগুন লাগছে। গিয়া দেহি আমার ঘরটা পুইড়া যাইতাছে। আগুন নিভাইতে যাইতে চাইছিলাম কেউ যাইতে দেয় নাই। ঘরের ফ্রিজ,টিভি, কাপড়-চোপড় সোনাদানা সব পুড়ে গেছে। আমার এক ছেলে -এক মেয়ে লইয়া খালি হাতে বারাইয়া গেছি। এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে আছি, কই যামু। শুধু পড়নের কাপড়টা আছে, এই শীতের মধ্যে একটা চান্দর পেচাইয়া সন্তানদের লইয়া আছি। এমনে কয়দিন থাকমু আল্লাহ জানে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই গৃহবধূ ।
চুনারুঘাট বাজারে শীতের কাপড় বিক্রি করতেন বিল্লাল মিয়া। তিনি বলেন বাজারে কাপড় বিক্রি করতাম সন্ধ্যায় ৭টার দিকে আগুন লাগার খবর শুইনা (দৌঁড়াইয়া) বাড়িত আইছি। আইয়া দেখি ৩টি ঘরে আগুনে দাউ দাউ করে জলতাছে। তখন ফায়ার সার্ভিসের কেউ আয় নাই। তিনি জানান, বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুনে সূত্রপাত ঘটে। টেকা পইসায় জায়গার দলিলসহ সব পুড়ে ছাই। শুধু গরু দুইটা বাহির করছি। পড়নের কাপড় শুধু আছে। কেউ সহযোগীতা না করলে চলার কোন উপায় নেই। প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাজ্বী মাহমুদ হোসাইন দাখিল মাদ্রাসায় সল্প বেতনে শিক্ষকতা করেন নুর আলম শাকিল নামে এক শিক্ষক। তিনি বলেন, ঘটনার সময়ে আমি শায়েস্তাগঞ্জে ছিলাম। এসে দেখি ঘরে রক্ষিত কাঠ পালং সোফা সহ ঘরের সবকিছু পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৩টি পরিবারের অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মা,ভাই বোন সহ ৫ সদস্য নিয়ে খুবই অসহায় দিনকাটছে কেমনে কি করবো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সপ্না বেগম নামে আরেক নারী টলমলে চোখে বলেন, সব শেষ কাপড়চোপড় সহ ঘর পুইড়া গেছে। শুধু স্বপ্নাই নয়, অগ্নিকাÐে ক্ষতিগ্রস্থ তিন পরিবারের সবার কথা প্রায় একই রকম। কেউ হারিয়েছেন টাকা পয়সা সোনা গহনা আবার কেউ হারিয়েছেন মাথা গোজার ঠাঁই। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাড়িয়ে সহযোগীতা করে ঘরের টিন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র নাজিম উদ্দিন সামছু। তিনি বলেন, তিনটি পরিবার একেবারে নিঃস্ব, নেই মাথা গোজার ঠাই, তারা রাস্তায় খোলা আকাশের নিছে আছেন, চাউল ছাড়া ঘরে আর কিছুই নাই, আসুন প্রশাসন সহ যারা বিত্তবান রয়েছেন আমরা সবাই তাদের পাশে দাঁড়াই। ওই এলাকার বাসিন্দা মো: বাদল মিয়া বলেন, ৩টি ঘরই পুরে ছাই হয়ে গেছে। সবাই সহযোগীতা না করলে তারা না খেয়ে মরবে।
উল্লেখ্য গত ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হাতুন্ডা বিলপাড় তিনটি বসতঘরে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ঘটনার এক ঘন্টা পর ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট প্রায় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনটি ইটের তৈরী ঘর ছিল, কাঠ, বাঁশ আর ঘরের ফার্নিচার ও কিছু অংশ টিনের তৈরি হওয়ায় সর্বনাশা আগুনে প্রায় সব ঘরই পুড়ে যায়। চুনারুঘাট ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার মো: মানিকুজ্জামান বলেন, আগুন কিভাবে লেখেছে তদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না তবে ক্ষতির পরিমাণ তার দাবী প্রায় ৩০ লক্ষাধিক।
এবিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ঘর উপরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হচ্ছে উপজেলা পরিষদ থেকে আপাতত সহযোগী করা হবে। পরবর্তীতে জেলা থেকে তাদেরকে আরও সহযোগীতা করা হবে।