হবিগঞ্জে থামছেই না ‘টপ সয়েল’ বিক্রি, উর্বরতা হারাচ্ছে কৃষি জমি
তারিখ: ২৪-জানুয়ারী-২০২৫
জাকারিয়া চৌধুরী

বছরের এই সময়টা এলেই কৃষি জমির উপর যেন এক ধরণের থাবা পড়ে। এক্সেভেটরের বড় বড় থাবা যেন ক্ষত বিক্ষত করে তুলে জেলার হাওরাঞ্চলের কৃষি জমিগুলোকে। কোন মতেই যেন থামানো যাচ্ছে না জমির উপরিভাগ ‘টপ সয়েল’ বিক্রি। পরিবেশ আইন আমান্য করে ও প্রশাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে যার মতো করে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ কম দামে জমির উর্বর এই মাটি কিনে বিক্রি করছে বেশি দামে। ফলে কৃষি জমিতে উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ভেঙ্গে যাচ্ছে এলাকার রাস্তা-ঘাট। অভিযোগ রয়েছে, একদল অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃষকদেরকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব মাটি কিনে পাচার করছে ইটভাটা, ভিট তৈরীসহ বিভিন্ন স্থানে। যদিও প্রশাসন বলছে, জমির উপরিভাগের মাটি কাটা অবৈধ। যারা অবৈধভাবে মাটি কাটবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে। 
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, বাহুবল, লাখাই ও মাধবপুর ও সদর উপজেলায় দেদারছে চলছে কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাওরের বিভিন্ন জমিতে লেগে আছে ট্রাক ট্রাক্টরের দীর্ঘ লাইন। ফসলি এসব জমি থেকে এক্সেভেটরের মাধ্যমে মাটি কেটে সেগুলো পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরের মাধ্যমে। আর এসব মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বতসভিটা। একই সাথে যাচ্ছে ইট ভাটায়। আর এসব কাজের সাথে জড়িত রয়েছে অসাধু সিন্ডিকেট চক্র। যারা কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রির জন্য সাধারণ কৃষকদের নানা ভাবে প্রলোভন দিয়ে আসছে। প্রতি ট্রাক্টর মাটি তারা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে হাজার থেকে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। আর এতে করে অধিক মুনাফা আদায় করে নিচ্ছে চক্রটি। 
যদিও কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, জমির উপরিভাগের ছয় থেকে দশ ইঞ্চিতে জৈব পদার্থ বিদ্যামান থাকে। উপরিভাগ কাটার ফলে জমির ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই সেগুলো কাটা অথবা বিক্রি করা যাবে না। তবুও অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে সামান্য কিছু টাকার জন্য জমির উপরিভাগের মাটি কাটার অনুমতি দিচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। সাধারণ কৃষকদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, কিছু কিছু জমি পলি মাটি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে সেইগুলো জমি থেকে উপরিভাগের মাটি কাটতে দিচ্ছেন তারা। তারা বলেন, এতে করে একদিকে যেমন কিছু টাকা পাওয়া যায় একইভাবে আবার জমিও কিছুটা নিচু হয়। যে কারণে জমিতে বেশি সেচ দিতে হয় না। কৃষকরা জানান, আমাদের জমি তো আমাদেরই থাকছে তা হলে জমির মাটি বিক্রি করে কিছু টাকা পেলে ক্ষতি কিসের। 
এদিকে, কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে মাধে মধ্যে অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা করছে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন। তবে তাদের এই অভিযান কোন কাজেই আসছে না। সকালে অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা দিলেও বিকেলেই একই জায়গা থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে মাটি। অথবা রাতের আধারে ট্রাক ট্রাক্টরের মাধ্যমে কৃষি জমির মাটি পাচার করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। এমতাবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এবং এলাকার রাস্তা ঘাট রক্ষায় প্রশাসনের আরো কঠোর নজরদারি কামান করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসি। 
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জুল সোহেল বলেন- আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষির উপর নির্ভরশীল। আর এই কৃষি কাজের অন্যতম মাধ্যম হল জমি। জমিতে যদি উর্বরতা না থাকে তা হলে পর্যাপ্ত পরিমান ফসল উৎপাদন হবে না। তাই সামান্য কিছু টাকার জন্য প্রতারণার ফাদে পড়ে জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি না করার জন্য সকল কৃষকদের প্রতি আহবান জানান। একই সাথে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যব¯’া গ্রহনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এই পরিবেশবিদ।   
’এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাশেম বলেন, জমির উপরিভাগের মাটি কাটার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন বেশ তৎপর রয়েছে। খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন- যারাই অবৈধ এসব কর্মকান্ড করবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাস অনুপ বলেন- ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয়েছে। অভিযান চলমান থাকবে। জেলা প্রশাসক ড. মোঃ ফরিদুর রহমান জানান- ইতোমধ্যে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগে ৯টি মামলা হয়েছে। অভিযান চলমান থাকবে।