২০১৩ সালের নিয়োগ আদেশ ২০১৭ সালে এসে কার্যকরের উদ্যোগ ॥ হাইকোর্টে ২টি রিট নিস্পত্তি না হওয়ার পরও নোয়াপাড়া ইউনিয়নে কাজী নিয়োগের অভিযোগ
তারিখ: ২৪-জুলাই-২০১৭
স্টাফ রিপোর্টার ॥

মাধবপুর উপজেলার ৯নং নোয়াপাড়া ইউনিয়নের তালাক ও নিকাহ রেজিষ্ট্রার (কাজী) পদটি শূণ্য ঘোষিত হয় ২০১৪ সালে। ওই ইউনিয়নে কাজী নিয়োগের জন্য জরুরী বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয় তখন। কাজী নিয়োগ পাওয়ার জন্য একাধিক ব্যক্তি আবেদন করেন। ২০১৪ সনের ৬ জুন তারিখে যেসব নিকাহ রেজিষ্ট্রার প্রার্থীর নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয় তাদের মধ্যে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ইসলামাবাদ গ্রামের কাজী সালাহ উদ্দিনের পুত্র বাহাউদ্দিন আহমেদ একজন। তিনি নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হননি। ২০১৪ সালের ৬ জুন তারিখে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কাজী নিয়োগ পরীক্ষায় মেধা অনুসারে যে ৩ জন প্রার্থীর নাম ঘোষনা করে নির্বাচন বোর্ড তাদের মধ্যে বাহাউদ্দিনের নাম নেই। ওই পরীক্ষার ফলাফলে স্বাক্ষর করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট মাহবুব আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ শাহজাহান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশেদুল ইসলাম, সাব রেজিষ্ট্রার শাহ জামাল মোল্লা, নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ আলমগীর। ক্ষুব্দ হয়ে ২০১৪ সনের ৪ সেপ্টেম্বর তারিখে বাহাউদ্দিন নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের জন্য এবং তাকে অস্থায়ী কাজী হিসাবে নিয়োগের জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশিন দায়ের করেন। রিটি পিটিশন নং ৬২১২। এদিকে কাজী নিয়োগ পরীক্ষায় ১ নম্বর সিলেকশনে থাকা ইটাখলা গ্রামের শাহ মোঃ আব্দুল বাকী’র পুত্র শাহ মোঃ আবিদুর রহমান ২০১৫ সনের ১৩ আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে তাকে নিয়োগ দেয়ার আবেদন জানান। রিট পিটিশন নং ৭৮৪৯। ২০১৭ সালে এসে দুটি রিট পিটিশনই চূড়ান্ত শুনানীর জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। আবেদনকারী বাহাউদ্দিনের পিতা কাজী সালাহ উদ্দিন ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কাজী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সরকারের নির্ধারিত বয়স সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাকে বাদ দেয়া হয়। এরপরই চলে সেখানে কাজী নিয়োগের প্রক্রিয়া। কাজী হিসাবে বিদায় নেয়ার পর কাজী সালাহ উদ্দিন ২০১৪ সালের ২৫ জুলাই তারিখে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে একটি দরখাস্তে তার পুত্র বাহা উদ্দিনকে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কাজী হিসাবে নিয়োগ দানের আবেদন করেন। উপরুক্ত বাহাউদ্দিনকে ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর তারিখে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কাজী হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মর্মে আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ হেমায়েত উদ্দিন এক পত্রের মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলা রেজিষ্ট্রারকে অবগত করেন বলে জানা যায়। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর তারিখের কথিত নিয়োগ আদেশের ফলে ২০১৭ সালের ১৬ জুলাই তারিখে বাহা উদ্দিনকে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের অস্থায়ী কাজী হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরপূর্বে ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজী জুনায়েদ আহমেদ লস্করের কাছ থেকে তালাক ও নিকাহ সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র বুঝে নেন জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস। যে ব্যক্তি ২০১৪ সনে কাজী নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন, নিয়োগ না পেয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশনের মাধ্যমে অস্থায়ী কাজী হিসাবে তাকে নিয়োগের আবেদন করেছেন, তিনি কিভাবে ২০১৩ সালে একই ইউনিয়নের কাজী হিসাবে নিয়োগ পান? এমন প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। তাছাড়া মহামান্য হাইকোর্টে ২টি রিট পিটিশন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া স্বত্বেও বাহা উদ্দিনকে তড়িগড়ি করে কাজী হিসাবে নিয়োগ দেয়ায় মহামান্য হাইকোর্টের নিষ্পত্তির জন্য অপেক্ষমান ২টি রিটের প্রতি অবজ্ঞা করা হয়েছে বলেও মনে করেন কেউ কেউ। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর তারিখে আইন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হেমায়েত উদ্দিন স্বাক্ষরিত নিয়োগ আদেশে কোনোরুপ নিষেধাজ্ঞা ও স্থগিতাদেশ থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে না বলেও উল্লেখ করেন। জেলা রেজিষ্ট্রার অফিস হাইকোর্টে অপেক্ষমান ২টি রিট পিটিশনের অন্যতম পক্ষ হওয়ার পরও নোয়াপাড়া ইউনিয়নে কাজী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে রিট পিটিশনকারী ও কাজী নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকারী শাহ মোঃ আবিদুর রহমান জানান- ২০১৩ সনে নোয়াপাড়া ইউনিয়নে কাজী নিয়োগের প্রশ্নই আসে না। কারণ তখন কাজী সালাহ উদ্দিন ওই ইউনিয়নের কাজী ছিলেন। তাকে ২০১৪ সালে অব্যাহতি দেয়া হয়। একজন কাজী দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে আরেকজনকে কাজীকে নিয়োগ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। সম্পুর্ণ জালজালিয়াতির মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। তাছাড়া যে ব্যক্তি ২০১৪ সালে তার পুত্রকে অস্থায়ী কাজী হিসাবে নিয়োগ দানের আবেদনই করেন, তার পুত্রকে কিভাবে ২০১৩ সালে নিয়োগ দেয়া হয়? বিষয়গুলো জালজালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে। যে সচিবের নিয়োগ আদেশ দেখানো হয়েছে তিনি অনেক পূর্বেই অবসরে চলে গেছেন বলে জানান শাহ আবিদুর রহমান। তিনি জানান-মহামান্য হাইকোর্টে ২টি রিট পিটিশন নিষ্পত্তির অপেক্ষমান আছে। এমতাবস্থায় ওই রিট পিটিশন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে কাজী নিয়োগ হতে পারেনা। আমরা বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিআর, জেলা প্রশাসক, জেলা রেজিষ্ট্রারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছি। বিষয়টি আমরা মহামান্য হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চেও লিখিত আকারে অবহিত করব। এ ব্যাপারে নতুন নিয়োগ পাওয়া বাহাউদ্দিন আহমেদ এর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান। এরপর অন্তত ১০ বার তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এ ব্যাপারে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত কাজী জোনায়েদ আহাম্মদ লস্কর এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাহাউদ্দিন আহমেদ এর অনুরুপ আচরণ করেন। তবে তিনি জানান-আমাকে একটি চিঠির মাধ্যমে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিষ্ট্রার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। আবার একটি চিঠির মাধ্যমে আমার দায়িত্ব বুঝে নেয়া হয়। এর বাহিরে আমি কিছু জানি না। তিনি কত তারিখ, কত নম্বর স্বারকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তাও বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জেলা কাজী সমিতির সভাপতি কাজী মাওলানা আব্দুল জলিল জানান- অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিকাহ রেজিষ্ট্রারের উত্তরসুরীকে নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে হয়তো তাই করা হয়েছে। জেলা রেজিষ্ট্রার সৈয়দা রওশন আরার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়- ম্যাডাম অসুস্থ্য। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসের একটি সূত্র জানায়- নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কাজী নিয়োগে ছলছাতুরির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

প্রথম পাতা