জে কে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত
তারিখ: ২৫-ফেব্রুয়ারী-২০২২
কাজল সরকার \

শহরের জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল ও কলেজের ৩২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও অফিস সহকারি মো. আক্তার মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্কুল পরিচালনা কমিটি। গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুল পরিচালনা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে হবিগঞ্জ জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল ও কলেজে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। এর বছরখানেক পর থেকে স্কুলের আয়ের প্রধান উৎস সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড ভাড়া, দোকান ভাড়া ও পুকুর লীজের টাকা আত্মসাৎসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ ওঠতে থাকে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারিদের বেতন-ভাতা অনিয়মিত হয়ে পরে। এতে শিক্ষক-কর্মচারিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে শিক্ষক-কর্মচারিরা বিষয়টি পরিচালনা কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানান। পরিচালনা কমিটি
বিষয়টি তদন্তের জন্য সহকারি প্রধান শিক্ষক শাহ্ মোহাম্মদ আবুল হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ সময় তদন্ত কমিটি ২০১৮ ও ২০১৯ সালের ১৭ লাখ টাকা গরমিলের সত্যতা পায়। প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুলের আয়-ব্যায়ের হিসেবে চাইলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসককে জানান। এ সময় ২০১৮-১৯ সালের ১২ লাখ ৭৮ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে দেন।
এদিকে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট প্রতীক মন্ডলকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক। তদন্ত কমিটি গেল বছরের ৭ আগস্ট তদন্ত শুরু করে। এ সময় ২০১৪ থেকে ২০১৭ ও ২০২০ সালে স্কুলের বিভিন্ন খাতের আয়ের ৩২ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৫ টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে তসরুপের সাথে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও অফিস সহকারি মো. আক্তার মিয়া জড়িত থাকার সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। গত বছরের ২৬ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরে গতকাল বৃহস্পতিবার স্কুল পরিচালনা কমিটির সভায় প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম ও অফিস সহকারি মো. আক্তার মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এ ব্যাপারে স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক শাহ্ মোহাম্মদ আবুল হাসান বলেন- ‘সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড ভাড়া বাবদ বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার, দোকান ভাড়া বাবদ বছরে ১৩ লাখ, পুকুর লীজ বাবদ ২ লাখ ও শিক্ষার্থীদের বেতন থেকে ৬০ লাখ টাকা আয় হয়। এর মধ্যে একটি অংশ ব্যাংকে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারি আত্মসাৎ করেছেন। জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি বিষয়টি সত্যতা পেয়েছেন।’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন- ‘যে তদন্ত করা হয়েছে সেটি সঠিক হয়নি। কারণ যে পরিমাণ আয় দেখানো হয়েছে তাতেও অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে। এছাড়া এই আয় থেকে স্কুলের বিভিন্ন খাতে ব্যায় করা হয়। একটা অংশ স্কুলের সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বণ্ঠন করা হয়। অথচ এগুলোও তসরুপ দেখানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পুণরায় তদন্ত হওয়া দরকার।’
ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন- ‘প্রথম অবস্থায় স্কুলের শিক্ষকদের দিয়ে একটি তদন্ত করানো হয়। এ সময় টাকা তসরুপের প্রমাণ পাওয়ায় আমি বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানাই। জেলা প্রশাসক যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেই কমিটিও টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে। এ কারণে বৃহস্পতিবার পরিচালনা কমিটির সভায় প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম ও অফিস সহকারি মো. আক্তার মিয়াকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন- ‘দ্রæত সময়ের মধ্যে তসরুপ হওয়া টাকা ফেরত দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপাতত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন সহকারি শিক্ষক শাহ্ মোহাম্মদ আবুল হাসান।

প্রথম পাতা