ডিসি অফিসের সরকারী কর্মচারী নয়ন সরকারের সুদের ব্যবসা
তারিখ: ৭-নভেম্বর-২০২৪
স্টাফ রিপোর্টার \

হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভবন দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সেই অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে এবার সুদের ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। সাধারণ মানুষকে দ্বিগুন সুদে টাকা দিয়ে থাকেন অফিস সহায়ক নয়ন চন্দ্র সরকার। আর এই সুদের টাকা লেনদেনে গ্রাহকদের সাথে ষ্ট্যাম্পের মাধ্যমে চুক্তিনামাও করেন তিনি। এতে টাকার পরিমাণ দ্বিগুন লেখার পাশাপাশি গ্রাহকদের কাছে থেকে স্বাক্ষরকৃত সাদা চেক রাখেন নয়ন চন্দ্র সরকার। মাস শেষে লাভের টাকা না দিলে আদালতে করেন চেক ডিজঅনার মামলা। যে কারনে তার রোষানলে পড়ে ভুক্তভোগির শিকার হচ্ছেন রাসেল সরকার নামে এক অসহায় দরিদ্র ব্যক্তি। তিনি নয়ন চন্দ্র সরকারকে দেড় বছরে লাভের প্রায় আড়াই লাখ টাকা দিলেও রোষানলের শিকার হচ্ছেন তিনি। তাকে চেক ডিজঅনার মামলা দিয়ে করা হচ্ছে হয়রানী। এমনি একটি তথ্য এসেছে দৈনিক হবিগঞ্জ সমাচার প্রতিবেদকের কাছে।
ভুক্তভোগির অভিযোগ, প্রায় ২ বছর পূর্বে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস সহায়ক নয়ন চন্দ্র সরকারের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১৪ হাজার টাকা লাভে ২ লাখ টাকা নেন চৌধুরী বাজার এলাকার জঙ্গি সরকারের ছেলে রাসেল সরকার। এ সময় তার কাছ থেকে স্বাক্ষরকৃত সাদা স্ট্যাম্প ও টাকার অংক বিহীন একটি চেক রাখেন নয়ন চন্দ্র সরকার। এর বিনিময়ে দেড় বছরে লাভের প্রতি মাসে ১৪ হাজার করে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন নয়ন। গত ৫ মাস ধরে পারিবারিক অস্বচ্চলতার কারণে লাভের টাকা দিতে পারেননি ভুক্তভোগি রাসেল সরকার। নিরুপায় হয়ে করেছেন কান্নাকাটি। তবুও মন গলেনি সুদি ব্যবসায়ী নয়নের। সরকারী চাকুরীর প্রভাব দেখিয়ে দেন হুমকি-ধামকি। 
এদিকে, লাভের টাকা না দেয়ায় নয়ন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন নয়ন চন্দ্র সরকার। প্রায় ৩ মাস পূর্বে রাসেল সরকারের স্বাক্ষরকৃত চেক ও স্ট্যাম্পে ৪ লাখ টাকা বসিয়ে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করেছেন চেক ডিজঅনার মামলা। যার মামলা নং-৭৫৫। এতে চরম ভ‚ক্তভোগির শিকার হচ্ছেন দরিদ্র এই সুদের গ্রাহক। নয়নের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত হয়রানীর শিকার হচ্ছেন তিনি। আদালতে তাকে দিতে হচ্ছে হাজিরা। সুদের টাকা দিয়েও নয়নের রোষানলে পড়ে তিনি এখন প্রতারণা মামলার আসামী। অভিযোগ রয়েছে, শুধু রাসেল সরকার নয়, অফিসের স্টাফসহ অনেককেই টাকা দিয়ে নয়ন চালিয়ে আসছে তার সুদের ব্যবসা। 
এছাড়া নয়নের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও অনেক অভিযোগ। সরকারী কর্মচারী হয়েও তিনি নিজে বাদি হয়ে আদালতে মামলা দেয়ার পাশাপাশি প্রভাব বিস্তার করছেন। আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্র-ছায়ায় রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের পানি, বিদ্যুৎ ও ভবন ব্যবহার করে রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করছেন। নয়নের এমন কার্যকলাপে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। 
ভুক্তভোগি রাসেল সরকার বলেন, ‘আমি তার কাছে থেকে সুদের বিনিময়ে ২ লাখ টাকা নিয়েছি। প্রতি মাসে খুব কষ্ট করে ১৪ হাজার টাকা দিয়েছি। এতে দেড় বছরে লাভের ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিলেও তিনি আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। আমি টাকা নেয়ার সময় স্বাক্ষর করে একটি সাদা চেক দিয়েছিলাম। এতে তিনি ২ লাখ টাকার পরিবর্তে ৪ লাখ টাকা বসিয়ে দিয়েছেন। তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমি মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার হচ্ছি’। 
এ ব্যাপারে নয়ন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না, এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। সুদের টাকা না পেয়ে মামলা দিয়েছেন এমন অভিযোগ সত্য কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন এ বিষয়ে কথা বলতে পারবো না, আমি সরাসরি কথা বলব’।