হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যেন দুর্নীতির আখড়া, টাকা না দিলে নেয়া হয় না ফরম
তারিখ: ২৩-জুন-২০২৫
শাওন খান \

হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রতীক না থাকলে নেয়া হয় না পাসপোর্টের আবেদন। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা। পাশাপাশি রয়েছে দালাল। দালাল ছাড়া ভেতরে প্রবেশ করা যায় না। পুলিশ ভেরিফিকেশন, জন্মনিবন্ধন সনদ আর সত্যায়িত করার সিল সবই আছে দালালের কাছে। দরকার শুধু টাকা। পকেট ভর্তি টাকা দিলেই হলো, পাসপোর্ট প্রস্তুত। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকরা নিয়মানুসারে আবেদন করে মাসের পর মাস অপো করেও পাচ্ছেন না পাসপোর্ট। হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের প্রতিদিনকার চিত্রই এটি। 
সরকার পরিবর্তনের পর সকল অফিসে পরিবর্তন হলেও বদলায়নি পাসপোর্ট অফিস। আগের তুলনায় সেখানে বেড়েছে হয়রানি, দুর্নীতি ও ভোগান্তি। নিজ হাতে আবেদন ফরম জমা দিতে গেলেই ঘটছে বিপত্তি। এনালগ পদ্ধতি থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তরীত হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নিত্য-নতুন স্টাইলে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। যেসব গ্রাহকরা নিজে আবেদন ফরম পূরণ করে জমা দিতে যান, তাদের পূরণকৃত ফরম সঠিক হলেও নানান ছুঁতোয় ভুল ধরে ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্করা জাতীয় পরিচয়পত্র আর অপ্রাপ্তবয়স্করা জন্মনিবন্ধন দেবেন। এরপর আবেদনপত্র দুটি সত্যায়িত করতে হয়। কিন্তু ফরমে ছাপানো এ নিয়মও মানছে না হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি সত্যায়িত করে নিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে। তাদের নিয়মানুসারে সত্যায়িত ফটোকপি নিলেও এই জন্ম নিবন্ধনের কপি রাখা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, আপনার তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তদন্ত রিপোর্ট ম্যানেজ করে তারপর আসেন। এরকম নানা অজুহাত দেখিয়ে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে হবিগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। দালালদের একটি চক্র এই অফিসের সামনে রীতিমতো স্থায়ী ঘাঁটি বানিয়ে বসেছে।
কোথাও তারা ছোট আকারে দোকানপাট ও ট্রাভেলস খুলে বৈধতার খোলসে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ও আবেদনের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও থেমে নেই হয়রানি। দালাল মারফত নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। এক্ষেত্রে অর্ডিনারির ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ হাজার ও আর্জেন্ট পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। দালাল মারফত ফরম জমা দিলে কোনো অজুহাত ও ভুলের প্রয়োজন হয় না। ভুল ফরমই জমা নিচ্ছে পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ। অতিরিক্ত টাকার মধ্যে পাসপোর্ট অফিস নিচ্ছে প্রতিটি পাসপোর্টের ক্ষেতে অফিস ১ হাজার, দালাল ৩শ টাকা নেয়। এরপর মার্কা বা প্রতীক দেয়া হলে পাসপোর্ট জমা হয়। নতুবা ভুল দেখিয়ে ফেরত দেয়া হয়। 
সরেজমিনে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরাতন পাসপোর্ট অফিস স্থানান্তর করে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপারের কম্পাউন্ডারের পাশে নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও সাধারণ গ্রাহকদের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে অফিসটি স্তানান্তর করলেও খোদ প্রশাসনের চোখের সামনেই বাড়ছে গ্রাহকদের ভোগান্তি ও দালালদের উৎপাত। সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্ব পালনরত আনসার সদস্য, ভেরিফিকেশন কর্মকর্তা ও ঐ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশে দালালরা কাজ করছেন। আর এই দালালির কাজে নিয়োজিত রয়েছে, হবিগঞ্জ ২নং পুল এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সি।
অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ ট্রাভেলস এজেন্সি খুলেছে পাসপোর্ট অফিসের দালালরাই। আবার কেউ কেউ ফটোস্ট্যাট, স্টুডিও খুলেছে। নিয়মানুযায়ী ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো ভিসা বা টিকিটের কার্যক্রম চালানোর কথা থাকলেও বাস্তবে ভিসা বা টিকিটের কাজ না করে সেখানে করা হচ্ছে পাসপোর্টের ফরম পূরণ ও ষ্টুডিওর ব্যবসা। শুধুই কি তাই, অনেক দালালদের চা স্টলসহ গাছতলায় বসে এসব কাজ করতে দেখা গেছে। ট্রাভেলস এজেন্সিগুলোর দালালরা নিজেরাই প্রথম শ্রেণীর গেজেটেট কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নকল করে ও সিল তৈরি করে ফরম ও ছবি সত্যায়িত করে দিচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।