এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণে হাতিয়ে নিচ্ছেন টাকা!
তারিখ: ২৩-জুন-২০২৫
আখলাছ আহমেদ প্রিয় \

আগমী ২৬ জুন থেকে হবিগঞ্জসহ সারাদেশে শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এর মধ্যে শহরতলীর জালালাবাদে অবস্থিত আলেয়া-জাহির কলেজে ৮০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের কথা রয়েছে। তবে পরীক্ষা শুরুর আগেই ওই কলেজের অধ্যক্ষ পার্থ প্রীতম দাসের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণের নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে  আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে প্রবেশপত্র বিতরনের মাধ্যমের অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এছাড়া যে সব শিক্ষার্থীরা এখনো টাকা দেয় নাই তাদের প্রবেশ পত্র দেয়া বন্ধ রেখেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, দ্রæত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র নিতে চাপ প্রয়োগ করছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 
স্থানীয় সূত্র জানায়, কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই অনিয়ম-দূর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন পার্থ প্রীতম দাস। তার বিরুদ্ধে কলেজে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময় তিনি শিক্ষার্র্থীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এবছরও এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর আগেই তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া শুরু করেছেন। ৮০ জন শিক্ষার্থী এবার ওই কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ জনের কাছ থেকে তিনি প্রবেশ পত্র বিতরণের মাধ্যমে জনপ্রতি ৭০০ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এ কাজে সহযোগিতা করছেন কলেজের প্রভাষক সরওয়ার আহমেদ। 
অভিযোগ উঠেছে তারা শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে এসব টাকা নিচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী টাকা না দিলে তাদেরকে প্রবেশপত্র দিচ্ছেন। ফলে অনেক গরীব শিক্ষার্থীরা টাকা না থাকায় এখনো প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেননি। 
অপর একটি সূত্র জানায়, এসএসসি’র টেস্ট পরীক্ষার পর পরীক্ষার্র্থীদের বিশেষ ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে বিভিন্ন সময় ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৩ মাসে শিক্ষকরা অনেক টাকা খরচ করেন। শিক্ষকদের খরচ তুলতেই পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। 
কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, ‘পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র দেওয়ার জন্য টাকা আদায় করা হচ্ছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে নিচ্ছেন অধ্যক্ষ পার্থ প্রীতম  দাস। এখন পর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থীরা টাকা দিতে পারেননি তাদের মধ্যে প্রবেশপত্র বিতরণ বন্ধ রয়েছে’। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলেয়া জাহির  কলেজের এক শিক্ষক বলেন, ‘প্রবেশপত্র দেওয়ার সময় কোনো অর্থ নেওয়া বিধান নেই। এমনকি সেটা যদি পূর্বের বকেয়া হয়, তাও নেওয়া যাবে না। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ। তবুও অধ্যক্ষ ক্ষমতা দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। এতে সহযোগিতা করছেন কলেজের প্রভাষক সরওয়ার আহমেদ। বিষয়টি নিয়ে কলেজে শিক্ষকদের আলোচনা-সমালোচনা চলছে। 
এর আগেও অধ্যক্ষ পার্থ প্রীতম দাসের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে। তিনি ক্ষমতা দেখিয়ে কলেজের ২য় তলায় শিক্ষকদের রুম ভাড়া দেন। কলেজের নামে বরাদ্দকৃত সরকারী বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নিজের ব্যক্তিগত একাউন্টে জমা রেখে নয়-ছয় করেছেন। কিছুদিন পূর্র্বেও ওই কলেজে এডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হবিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার রঞ্জন চন্দ্র দে। সম্প্রতি কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। বর্তমানে কলেজে পরিচালনা কমিটি না থাকায় তিনি পুনরায় অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আলেয়া-জাহির কলেজের অধ্যক্ষ পার্থ প্রীতম দাস বলেন, ‘আমরা প্রবেশপত্র বিতরণে কোন টাকা নিচ্ছিনা। তবে টেস্ট পরীক্ষার পর পরীক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। এতে ৩ মাসে যে খরচ এসেছে তা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৭০০ টাকা করে নেয়া হচ্ছে। যে সব পরীক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নিয়েছে তার টাকা দিচ্ছে। আর যারা ক্লাস করে নাই তারাই টাকা না দিয়ে অপ্রচার চালাচ্ছে’।