অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় ২১ জনকে খালাস ॥ বানিয়াচঙ্গ ও আজমিরীগঞ্জে দুটি হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদন্ড
তারিখ: ১১-অক্টোবর-২০১৮
জাকারিয়া চৌধুরী/জাহেদ আলী মামুন ॥

হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচঙ্গে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। সেই সাথে অভিযোগ প্রমানীত না হওয়ায়  ২১ জনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তদের মধ্যে একজন পলাতক রয়েছে। এদিকে বানিয়াচঙ্গে যুবক সত্যজিৎ হত্যা মামলায় অরবিন্দু দাস (২৯) নামে এক ব্যক্তিকে ফাঁসির আদেশ হয়েছে। একই সাথে মামলার আরো ৮ আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন আদালত। গতকাল বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ মোঃ আমজাদ হোসেন এই রায় প্রদান করেন। ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত অরবিন্দু নবীগঞ্জ উপজেলার চৌকি গ্রামের মনীন্দ্র দাশের ছেলে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১১ ফেব্র“য়ারী রাতে বানিয়াচং উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের প্রবাসী নকুল দাশের ছেলে সত্যজিৎ দাশ (১৪) চৌকি গ্রামে কীর্তন দেখতে গিয়ে আর ফিরেনি। নিখোঁজের ৪ দিন পর ১৫ ফেব্র“য়ারী চন্ডীপুর গ্রামের শ্মশানের পার্শ্ববর্তী ডুবা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ উদ্ধারের পরদিন সত্যজিতের বোন অলিকা রাণী দাশ বাদী হয়ে চৌকি গ্রামের অরবিন্দু দাসসহ ৯ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি মামলায় অভিযোগ করেন- আসামীরা পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ভাইকে হত্যা করেছে।

পরবর্তীতে একই বছরের ১৩ জুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মার্কুলী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই একরামুল হক ৯ জনকেই অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলা দায়েরের দীর্ঘ ৯ বছর পর স্বাক্ষী-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত অরবিন্দু দাশের বিরুদ্ধে ফাঁসি এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন। এছাড়া বাকী ৮ আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবি হবিগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এডভোকেট সিরাজুল হক জানান, হত্যাকান্ডে জড়িত ব্যক্তির উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে। রায়ে বাদীপক্ষের পরিবারও আনন্দিত বলে জানিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা গ্রামে কৃষক বাছির মিয়া হত্যা মামলায় শাকিউর রহমান চৌধুরী (৩৫) ও গাজিউর রহমান চৌধুরী (৩৮) নামে দুই ব্যক্তির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে মামলার আরো ১৩ আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এসএম নাসিম রেজা এই রায় প্রদান করেন। ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত শাকিউর রহমান চৌধুরী শিবপাশা গ্রামের আব্দুল হাই চৌধুরীর পুত্র ও গাজিউর রহমান চৌধুরী একই গ্রামের রমিজ মিয়া চৌধুরীর পুত্র। রায় ঘোষনার সময় শাকিউর রহমান আদালতে উপস্থিত থাকলেও গাজিউর রহমান পলাতক ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৯ জুন রাত ১০ টার দিকে শাকিউর রহমান ও গাজিউর রহমান বাছিরকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এর পর থেকেই তাকে আর খুজে পাওয়া যায়নি। পরে এ ঘটনায় ১৩ জুন নিখোঁজ বাছিরের পরিবারের পক্ষ থেকে আজমিরীগঞ্জ থানায় একটি জিডি দায়ের করা হয়। জিডি দায়েরের পর পুলিশ শাকিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। পরে তার দেওয়া স্বীকারোক্তি মোতাবেক ২৪ জুন গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাওরের জমির মাটির নিচ থেকে বাছিরের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় ওই দিন রাতেই নিহতের ভাই যিশু মিয়া চৌধুরী বাদী হয়ে আজমিরীগঞ্জ থানায় উল্লেখিত দুইজনসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে আজমিরীগঞ্জ থানার তৎকালীন এসআই সাজ্জাদুর রহমান ১৫ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে চার্জশীট প্রদান করেন। মামলায় ১৯ জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১৫ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহন শেষ গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।

মামলার রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবি হবিগঞ্জ জজকোর্টের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর এডভোকেট আব্দুল আহাদ ফারুক জানান, হত্যাকান্ডে জড়িত দুই ব্যক্তির উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে। রায়ে বাদীপক্ষের পরিবারও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে তিনি জানান।

প্রথম পাতা