মক্রমপুরে বন্দোবস্ত বাতিল করে ভূমিহীনদের জায়গা দখলের ষড়যন্ত্র ॥ ভূমিহীনদের পাশে থাকায় জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হুমায়ূন কবির রেজার বিরুদ্ধে দখলের মিথ্যাচার
তারিখ: ২২-জানুয়ারী-২০২০
স্টাফ রিপোর্টার ॥

বানিয়াচং উপজেলার ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়নের মক্রমপুর গ্রামে ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দকৃত ১৮ একর ভূমির মধ্যে ১০ একর ভূমি জোর পূর্বক দখল করে রেখেছে হিয়ালা-কচুয়ার আব্দার গ্রামের একটি প্রভাশালী মহল। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কাছে ভূমিহীনদের পক্ষে মোঃ সাবান মিয়া, মোঃ আব্দুল আজিজ, মোঃ রেতু মিয়া, মোঃ টেনু মিয়াসহ ১০ জন স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হিয়ালা-কচুয়ার আব্দা গ্রামের জ্যোতিময় দাশগং তাদের বন্দোবস্তকৃত জায়গায় পুকুর ও ঘর নির্মাণ করেছেন। এদিকে মঙ্গলবার আরডিসি মাসুদ রানার নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বন্দোবস্তকৃত সরকারি জায়গার সীমানা চিহ্নিত করেন।

ভূমিহীনরা জানান, মক্রমপুর গ্রামের ১৮ জন ভূমিহীন খাসজমি পাওয়ার জন্য আবেদন করলে ২০০০ সালে সুলতানপুর মৌজার বিভিন্ন দাগে ১৮ একর ভূমি রেজিস্ট্রি মূলে তাদেরকে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। পরে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ১৮ জন দরিদ্রকে এই জমি হস্তান্তর করা হয়। পরে ভূমিহীনরা সেই জমি তাদের নামে নামজারী করে ভোগদখল শুরু করেন। ভূমিহীনদের অভিযোগ, ১৮ একর জমির মধ্যে ১০ একর জমি জ্যোতিময়সহ প্রভাবশালী ১৫ জন অবৈধভাবে তাদের দখলে নিয়ে যায়। আর ৮ একর জায়গা ভূমিহীনদের দখলে রয়েছে। ওই জায়গায় ভূমিহীনদের মধ্যে কেউ কেউ ঘর-বাড়ি নির্মাণ করেন। আবার কেউ ঘর বাড়ি নির্মাণ করার জন্য মাটি ফেলে ভিটা তৈরী করছেন। ইদানিং ওই মহলটি তাদের নামে বন্দোবস্তকৃত জায়গা উদ্ধারের মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে লীজ বাতিল করে দখল করার পায়তারা করছে। পূর্বে জ্যোতিময় গং ১০ একক জায়গা অবৈধ দখলে নিলে তৎকালীন চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগ সভাপতি হুমায়ুন কবীর রেজা ন্যায় সঙ্গত কারনে ভূমিহীনদের পাশে দাড়ান। চেয়ারম্যান ভূমিহীনদের পাশে থাকার কারনে এলাকার সাবেক মেম্বার সফিক মিয়া হত্যাকান্ডে হুমায়ুন কবীর রেজাকেসহ ভূমিহীনদের আসামী করা হয়। হবিগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমদুল হকসহ জেলার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠকে সেই মামলার ঘটনা নিস্পত্তি হয়। সালিশে মামলার বাদীকে এবং খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য ধার্য্য করা হলে ভূমিহীনদের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় সমুদয় টাকা প্রদান করেন চেয়ারম্যান রেজা। পরে ভূমিহীনরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে তাদের নামে রেজিস্ট্রিকৃত ভূমির কিছু অংশ হুমায়ুন কবীর রেজাকে দিতে চাইলে তিনি তা না নিয়ে সেখানে ব্যক্তিগত খরচে একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা এবং এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করে দেন। এতে ভূমিহীনরা তার প্রতি আরও বেশী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং নিজেরাই মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা দেখভাল করেন। আর এর সমূদয় অর্থ প্রদান করেন হুমায়ুন কবীর রেজা ও তার পরিবার।

মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা হওয়ায় জ্যোতিময় গংরা অবশিষ্ট ভূমি গ্রাস করতে পারবে না বলে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠে। তারা ভূমি মন্ত্রণালয়ে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করে। ভূমিহীনদের নামে রেজিস্ট্রি কবালা থাকার পরও সেই ভূমি নতুন করে নেয়ার জন্য তথ্য গোপন করে তারা এই আবেদন করে।

ভূমিহীন সাবান মিয়া, আব্দুল আজিজ, রেতু মিয়াগং জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদনে তাদের বেদখল ভূমি উদ্ধার এবং সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুনক কবীর রেজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিকারের দাবি জানান।

এদিকে মঙ্গলবার সরজমিনে মক্রমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভূমিহীনদের নামে বন্দোবস্তকৃত জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হচ্ছে। রাস্তার সাথে থাকা জমিতে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা। সাথেই একটি পুকুর। সেখানে অনেক শিশু লেখাপড়া করছে। মসজিদে আশ পাশের এলাকার লোকজন নামাজ পড়তে আসেন। সেখানে দেখা হয় ভূমিহীন সাবান মিয়া, আব্দুল আজিজ, রেতু মিয়া টেনু মিয়াগংদের সাথে। তারা জানায়, সরকার তাদেরকে জমি রেজিস্ট্রি করে দিলে তারা এর একটি অংশ ভোগ দখল করছেন। কিন্তু বন্দোবস্তকৃত ভূমির বেশী অংশ রয়েছে জ্যোতির্ময় দাসগং এর দখলে। আমরা ভূমিহীন ও তারা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কিছুই করতে পারছি না। আমাদেরকে হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করলে সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর রেজা আমাদের পাশে না দাড়ালে আমাদের অস্থিত্ব বিলীন হয়ে যেত। চেয়ারম্যান মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা দেয়ায় আমরা আনন্দিত ও তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা এখন নামাজ পড়ার জায়গা পেয়েছি। বাচ্চারা লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে।

তারা আরও বলেন, আমাদের অবশিষ্ট যায়গা দখল করার ষড়যন্ত্র থেকেই হুমায়ুন কবীর রেজার নামে মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচার করছে একটি মহল। আর আমাদের কোন জমি না থাকায় সরকার আমাদেরকে এই জমি প্রদান করেন। বাড়ী থেকে জমি দূর হওয়ায় আমরা সব সময় আতংকের মাঝে বসবাস করি। ভূমিহীনরা জানান, ওই জায়গা ছাড়া তাদের মাথাগুজার ঠাই নাই। তারা তাদের জায়গার দখল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আহ্বান জানান।

এ ব্যাপারে সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রেজা জানান, আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমাকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হয়রানী করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। আমি শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য ভূমিহীন ও এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা করি। এখানের এতিম বাচ্চাদের সমস্ত খরচ বহন করে আসছে আমার পরিবার।

প্রথম পাতা
শেষ পাতা