কার্তিকের মিঠে রোদে তাহার সাথে জলাবনে
তারিখ: ২২-নভেম্বর-২০২০
মোশাহেদ মিয়া, বানিয়াচং ॥

হাওরের বুকে প্রকৃতি আপন হাতে সৃজন করিয়াছে আশ্চর্য এক জলাবন। নাম তার ‘লক্ষিবাওর’। বানিয়াচংয়ের উত্তরের হাওরের বুক ফুড়ে সটান দন্ডায়মান এক প্রাকৃতিক জলাভূমি। বর্ষায় অথৈ জলরাশির বুকে হাজার হাজার পাখি আর বিভিন্ন প্রজাতির প্রানীর এক নিরাপদ আশ্রয়ের নাম লক্ষীবাওর জলাবন। স্থানীয়ভাবে লোকজন হরতির জংলা বলে ডাকে। হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার ২নম্বর উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত ঘেষা এই অপরুপ জলাবনটিতে বর্ষাকাল ও হেমন্তে ঘুরতে আসেন অসংখ্য দেশী ও বিদেশী পর্যটক। দেশের উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্টানের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগণ আসেন বনভোজন করতে।

শনিবার সকাল ১১টায় বানিয়াচং উপজেলার নির্বাহী অফিসার মাসুদ রানা’র ব্যবস্থাপনায় ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের আমন্ত্রণে জলাবনটি দেখতে আসেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. নূর-উর রহমান ও তার সহধর্মিনী। এ সময় প্রকৃতির এরকম একটি বিস্ময়কর উপহার দেখে সাবেক এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বিমোহিত হয়ে যান। তিনি জলাবনটির কোনরকম ক্ষতি না করা ও পাখি শিকার না করার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।

মধ্যাহ্ন ভোজন শেষে সচিব সাহেব ও তার দল যখন চলে যাচ্ছিলেন তখন শেষ বিকেলের হেলে পড়া সূর্যের আলো রক্তিম রুপ ধারন করে জলাবনটির সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে তুলছিলো। ফেরার পথে নৌকায় মিঠে মিঠে রোদ পাখির কলকাকলি মাছেদের লম্ফঝম্ফ পরিবেশকে অন্যরকম এক মায়াময় মোহময়তায় আবেষ্ট করে রেখেছিলো। এই জলাবনে বিভিন্ন প্রকার সরীসৃপ, মেছোবাঘ, শিয়ালসহ বিভিন্ন প্রানীর পাশাপাশি জলাবনটি’র গাছে গাছে হাজার হাজার পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে সকাল বিকাল। আছে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ, লতা-গুল্ম ও বৃক্ষরাজি।

জৈষ্ট্য মাসে বর্ষার পানিতে জলাবনটির উঁচু ভূমি ডুবে যায়। জলাভূমির ভিতরে পানি ঢুকে জলমগ্ন হয়ে পড়ে চারদিক। পানির উপরে ভেসে থাকে তখন শুধু উঁচু উঁচু গাছ। জলাবনটিকে চারপাশ দিয়ে বেষ্টন করে রেখেছে হোগলা বন। জলাভূমির ভিতরে ও চারপাশে ছড়িয়ে আছে অনেক বিল। কার্তিক মাস থেকে বিলগুলোতে মাছের মৌসুম চলে পুরোদমে। তখন দেশীয় পাখির সাথে ঝাকে ঝাকে এসে মিশে যায় অতিথি পাখির দল। কার্তিক মাসে হাওরের বুক চিরে জেগে উঠে পুরো জলাভূমি। আপনি চলে আসবেন কিন্তু হিজল গাছে বসে ডাকতে থাকা পাখিদের গান আপনি আর কখনই ভূলতে পারবেন না।

প্রথম পাতা
শেষ পাতা