জেলার বিভিন্ন স্থানে জমজমাট হয়ে উঠেছে জুয়ার আসর। হাওরের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় জুয়াড়িরা এবার আস্তানা গড়েছেন বিভিন্ন গোচরন ভুমিতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সন্ধা হলেই বিভিন্ন স্থান থেকে জুয়াড়িরা আসতে শুরু করেন। আগাগুণা বেড়ে যায় বিভিন্ন হাওরে। মাছ ধরার জন্য তৈরী করা ছোট ছোট ঘরে বসে এসব জুয়ার আসর। কোন কোন স্থানে আবার ত্রিপাল টানিয়ে রাতভর চলে খেলা। দূর দূরান্ত থেকে জুয়াড়িরা মোটরসাইকেল দিয়ে এসব আসরে অংশ নেন।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন তাদের গতিবিধি জানলেও রহস্যজনক কারণে অভিযান চালাচ্ছে না। মাঝে মধ্যে চুনুপুটি ধরলেও রাগব বোয়ালদের সাথে তাদের রয়েছে তাদের চরম সখ্যতা। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হবিগঞ্জ সদর, চুনারুঘাট, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও লাখাইয়ে সবচেয়ে বেশি জুয়ার আসর বসে। এর মধ্যে সদর উপজেলার এড়ালিয়া, মাছুলিয়া, তেঘরিয়া, খোয়াই নদীর বাঁধ, বড় বহুলা ও গুঙ্গিয়ারজুড়ি হাওরে বসে জুয়ার আসর। এসব জুয়ার আসরে নেতৃত্ব দেন এলাকার প্রভাবশালীরা। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সখ্যতা রয়েছে এমন লোকজন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরাও ওই এলাকাগুলোতে জুয়ার আসরের লিডিং দিয়ে থাকেন।
বানিয়াচং উপজেলার মধ্যে সুবিদপুর, নতুন নোয়াগাঁও, কাগাপাশা, পাতারিয়া, ইকরাম, সাঙ্গর ও বানিয়াচং সদরের বেশ কিছু এলাকায় জুয়ার আসর বসে। ওই এলাকাগুলোতে নেতৃত্ব দেন প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে সখ্যতা থাকা প্রভাবশালীরা। চুনারুঘাট উপজেলার বহরমপুর, ইছাকুটা, কালিশিরি, শানখলা, উবাহাটা, ঝিকুয়া, নোয়াগাঁও, বালিয়ারি, বাহুবলের মিরপুর, শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশন, নিজগাঁও, শাহজীবাজার, অলিপুরের কলোনি, কাশিপুর ও বিভিন্ন চা বাগান ও টিলাতে জুয়ার আসর বসে। তিন তাস, ওয়ানটেন, চক্রবোর্ড, গাফলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে রাতভর চলে জুয়ার জমজমাট আড্ডা। এছাড়া নতুনব্রীজ গোলচত্বর এলাকার বেশ কিছু বাসা-বাড়ি ও হোটেলে নিয়মিত বসে জুয়ার আসর। এসব এলাকায় শুধু স্থানীয় জুয়াড়ি নয়, পাশাপাশি হবিগঞ্জের পাশ্ববর্তী জেলাগুলো থেকেও জুয়াড়িরা প্রাইভেটকার ও সিএনজিযোগে এসে অংশ নেন।
অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় জুয়াড়িরা শুধু খেলাতেই সীমাবন্ধ থাকেন না। সেই সাথে বিভিন্ন মাদক ও অনৈতিক কর্মকান্ডও চালিয়ে থাকে তারা। এসব জুয়ার আসরে প্রতিনিয়ত যোগ দিচ্ছে নতুন নতুন কিশোর ও তরুণরা। আবার কিছু কিছু এলাকায় স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরাও জড়িয়ে পড়ছেন জুয়া ও মাদকের খড়াল গ্রাসে। এসব শিক্ষার্থীরা জুয়ার টাকা জোগার করতে জড়িয়ে পড়ছেন চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ডে। স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, বিভিন্ন সময় জুয়ার আসর বলে জানিয়ে প্রশাসনকে তথ্য দিলেও তারা কোন কর্ণপাত করে না। জুয়াড়িদের সাথে স্থানীয় প্রশাসনের আতাত থাকার কারণেই এমনটা হচ্ছে বলে দাবি করছেন তারা।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, লাখাই, হবিগঞ্জ সদর, শায়েস্তাগঞ্জ, চুনারুঘাট ও বানিয়াচংসহ বিভিন্ন উপজেলায় জুয়ার আসর বসার তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমরা জুয়াড়িদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালিয়েছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত আছে।’