সমাজে বার্তা দিতে হবিগঞ্জে এক ভিন্নরকম বিয়ে \ বিয়ের মোহরানা মাত্র ৫ হাজার টাকা
তারিখ: ১৪-জানুয়ারী-২০২২
স্টাফ রিপোর্টার \

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিয়েতে মোহরানা বা ইসলামি রীতি অনুযায়ী স্ত্রীকে প্রদেয় অর্থ নিয়ে বর ও কনেপক্ষে ব্যাপক দরকষাকষি চলে। কোনো কারণে স্বামী তালাক দিলে নিজেদের মেয়ের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কনেপক্ষ বড় অঙ্কের টাকা মোহরানা চান। বরের আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে সেটা ৫ লাখ, ১০ লাখ, ১৫ লাখ বা তার বেশি টাকাও হতে পারে। কিন্তু এত টাকা মোহরানার পরও সংসার সুখের হওয়ার গ্যারান্টি থাকে না।
স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হলে কাবিনের অর্থের জন্য অনেক সময় জোর করে বিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয় স্বামীর। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বামীর অত্যাচারে স্ত্রী তালাক দিতে বাধ্য হতে পারেন। এ ধরনের বাস্তবতায় মোহরানার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না।
সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এমন রীতি বদলাতে চেয়েছেন সৈয়দ আয়েশা ফাউন্ডেশন-এর কর্ণধার সানজানা শিরিন ও ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্ম মিস্টার ট্রাভেলার-এর প্রতিষ্ঠাতা মো. ইসমাইল শিকদার। হবিগঞ্জ ও বগুড়ার এ দুই বাসিন্দা গত ৭ জানুয়ারি বিয়ে করেছেন। হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় অনুষ্ঠিত বিয়েতে মোহরানা হিসেবে সানজানাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন ইসমাইল।
বর্তমানে বিয়েতে যেখানে মোটামুটি অবস্থাসম্পন্ন ছেলের কাছ থেকেও ৫ লাখ টাকার মতো মোহরানা দাবি করেন মেয়েপক্ষের লোকজন, সেখানে ৫ হাজার টাকায় কীভাবে বিয়ে সম্ভব হলো, তা জানতে চাওয়া হয় ইসমাইলের কাছ থেকে।
জবাবে সেন্টমার্টিন থেকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিয়েটা হয়েছে পারিবারিকভাবে। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ তার (সানজানা) সঙ্গে আমার পরিচয় হওয়ার পর বিয়ের প্রস্তাবটা দিই। পরে পারিবারিকভাবে গত ৭ জানুয়ারিতে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। কম টাকায় কাবিনের প্রস্তাবটা আমার ওয়াইফের দিক থেকেই আসে।’
কম মোহরানায় বিয়ের কারণ ব্যাখ্যা করে মিস্টার ট্রাভেলারের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘আমাদের সমাজে একটা টেনডেন্সি (প্রবণতা) চলে আসছে বেশি টাকা কাবিনের (মোহরানা)। মেয়েদের যেন তালাক দিতে না পারে, সে জন্য এ টাকাটা অনেকটা ছেলেদের গলায় বেড়ি পরানোর মতো। এত টাকার বিনিময়ে যেন মেয়েকে ছাড়তে না পারে।
‘কিন্তু মেয়ের সুখ-অসুখ কি এই টাকার ওপর নির্ভর করে? করে না। অনেক সময় বেশি টাকা কাবিনে বিয়ে করে বনিবনা না হলে ছেলের পক্ষ থেকে মেয়েকে টর্চার করা হয়। একপর্যায়ে মেয়ে বাধ্য হয় তার স্বামীকে তালাক দিতে। আমরা চেয়েছি এ অবস্থার বিপরীতে সমাজে একটি মেসেজে দিতে।’
বিয়েতে পাঁচ হাজার টাকা মোহরানার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নেট ঘেঁটে বা এ সংক্রান্ত পড়াশোনা করে যতদূর জেনেছি, ইসলামে সর্বনিম্ন মোহরানা ১০ দিরহাম। এ অর্থ দিয়ে যে রূপা কেনা হয়, বাংলাদেশি মুদ্রায় এর দাম তিন হাজার ১০০ টাকার বেশি। আমরা সে বিষয়টি মাথায় রেখে ৫ হাজার টাকা কাবিনে বিয়ে করেছি।’
‘এ পোস্ট দেখে অনেকে পজিটিভ কমেন্ট করেছেন। কেউ কেউ আবার নেগেটিভ কমেন্ট করেছেন যে, আমরা ভাইরাল হতে চেয়েছি। আসলে আমাদের এমন কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিয়েতে শুধু কাবিনের খরচই কম করিনি; অনুষ্ঠানের অন্যান্য সব খরচই কম করেছি। জমানো টাকা থেকে পুরো আয়োজন শেষ করেছি আমরা।’