নিজামপুরে ‘ভরাং খাল উপ-প্রকল্প’ যেন এক অভিশাপ ॥ সরকারী অর্থ লুটপাটের অপচেষ্টা করছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল
তারিখ: ২৭-ডিসেম্বর-২০১৪
স্টাফ রিপোর্টার ॥

হবিগঞ্জ সদর উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘ভরাং খাল উপ-প্রকল্প’ এলাকাবাসীর কাছে উন্নয়ন নয়, যেন এক অভিশাপে পরিণত হয়েছে। এনিয়ে এলাকার একটি স্বার্থান্বেষী মহল করছে সরকারী অর্থ লুটপাটের অপচেষ্টা। ভূয়া সমবায় সমিতি গঠন করে অপরিকল্পিতভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুসে উঠছেন স্থানীয় জনতা। স্থানীয় সূত্র জানায়, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সী (জাইকা) এর অর্থায়নে ভরাং খাল পুনঃখনন ও স্লুইস গেট নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে হবিগঞ্জ এলজিইডি। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ১কোটি ৩৪ লক্ষ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বাকী ৪৪ লাখ টাকা খাল খনন বাবদ স্থানীয় সমিতির মাধ্যমে ব্যয় করা হবে।

সূত্র জানায়, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়নের জন্য এডিবি, ইফাদ ও জাইকা এর অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকারের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কিছু শর্ত সাপেক্ষে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট ও ফরিদপুরে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। শর্তগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অবকাঠামো সমূহ, চুক্তিমূলে খালের ব্যবহারিক মালিকানা, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়-দায়িত্ব স্থানীয় সমিতির উপর ন্যাস্ত থাকবে। সমিতি কর্তৃক কৃষি কাজের জন্য ভূ-পরিস্থ পানি সরবরাহ/বেচা-কেনা, মৎস্য উৎপাদন/মাছ চাষ এবং বাঁধে বৃক্ষ রোপন করা হবে। তবে সমিতিকে অবশ্যই সমবায় আইন-২০০১ অনুযায়ী সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক নিবন্ধিত হতে হবে। সমবায় অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এলাকায় সভা করে স্থানীয় জনগণের মধ্য থেকে ১২০০-৫০০০ লোক নিয়ে সমিতি গঠন করতে হবে এবং সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে সমান সংখ্যক শেয়ার প্রদান করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে যাদের জমির ক্ষয়-ক্ষতি হবে তাদেরকে জমির মূল্য পরিশোধ করতে হবে অথবা জমির মালিকদের সম্মতি নিতে হবে। সমিতি পরিচালনায় মহিলাদেরও অংশগ্রহণ থাকতে হবে। কিন্তু ভরাং খাল প্রকল্পে এধরনের কোন নিয়মই মানা হয়নি। ওই প্রকল্প পরিচালনার জন্য “ভরাং খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি (পাবসস) লিঃ” নামে যে বায়বীয় সমিতির উল্লেখ করা হয়েছে, এলাকায় এর কোন অস্তিত্বই নেই।

হবিগঞ্জ জেলা সমবায় কার্যালয় সূত্র জানায়, ভরাং খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি (পাবসস) লিঃ নামে কোন সমবায় সমিতি নিবন্ধিত নয়। তাছাড়া ‘সমবায় সমিতি লিঃ’ শব্দটি নিবন্ধন ব্যতিরেকে ব্যবহার করা সমবায় আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরণের কোন সংগঠনের অবৈধ কাজের দায়িত্ব সমবায় অফিস বহন করবে না। প্রকল্প এলাকার স্থানীয়দের সাথে কথা বললে অধিকাংশ মানুষ জানান, তারা এ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরোধি। তারা ক্ষোভের সুরে জানান, সরকারের অর্থ লোটপাটের উদ্দেশ্যে এলাকার গুটি কয়েক স্বার্থান্বেষী লোক অতি গোপনে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এলাকার জনসাধারণ এ ধরণের অনৈতিক কর্মকান্ড কোন ভাবেই সমর্থন করেননা। স্থানীয় লোকজন জানান, খালের ম্যাপ করা হয়েছে ১৯৫৪ সালের রেকর্ড অনুযায়ী। ফলে অনেকের কৃষি জমি, কবরস্থান, গো-চারণ ভূমি খালের ভেতর চলে যাবে। তাছাড়া যে স্থানে স্ল­ুইস গেট নির্মাণের নকশা করা হয়েছে সেখানে স্লুইস গেট নির্মিত হলে খড়া মৌসুমে অর্থাৎ বোরো ধান আবাদের সময় ভাটি এলাকার মানুষ পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে উজান এলাকার জমি অতিরিক্ত পানির কারণে তলিয়ে যাবে। এলাকাবাসী জানান, ইতিপূর্বে ভরাং খালের উপর আমিনপুরে সরকারী অর্থায়নে একটি একটি স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু এলাকার কৃষকরা এর মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে একপর্যায়ে তারা নিজেরাই ভেঙ্গে ফেলেন। তাই ভরাং খাল এলাকার জনগণ মনে করেন বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পটি তাদের কাছে অভিশাপ এর মত। এর বিরুদ্ধে ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠছেন স্থানীয় জনতা।

প্রথম পাতা