বাহুবলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অনাকাঙ্খিত ঘটনা...
তারিখ: ২৮-মার্চ-২০১৫
স্টাফ রিপোর্টার ॥

বাহুবলে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা শেষ মুহূর্তে এসে পণ্ড হয়ে গেল। অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ রেখেই অশ্র“সিক্ত নয়নে অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলা সভাকক্ষে অনুষ্ঠান চলাকালে কেয়া চৌধুরী এমপি’র সাথে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আহমেদ আওলাদের অসৌজন্যমূলক আচরণকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাটি ঘটে। জানা যায়, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাহুবল উপজেলা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন করে। এ উপলক্ষে সংরক্ষিত আসনের সরকার দলীয় সাংসদ এডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে সংবর্ধনাস্থল উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপস্থিত হন। এরপূর্বে দুপুর ১২টায় সংবর্ধনা স্থলে উপস্থিত হন হবিগগঞ্জ-১ আসনের এমপি এমএ মুনিম চৌধুরী বাবু। তখন তাকে উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয় মুক্তিযোদ্ধারা আসেননি তাই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নাও হতে পারে। এ সংবাদ পেয়ে এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু সংবর্ধনা স্থল ত্যাগ করেন। দুুপুর ২টায় এমপি কেয়া চৌধুরী আসার পর অনুষ্ঠান শুরু হলেও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই এতে যোগদান না করায় তা বিলম্বিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নজমুল হোসেন চৌধুরী উপস্থিত হয়ে জানান যে, ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে আলিফ-সোবহান চৌধুরী ডিগ্রি কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় কলেজ গভর্ণিং বডির সভাপতি কেয়া চৌধুরী এমপি’র অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান আসবেন না বলে জানিয়েছেন। এ অবস্থায় বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, বার বার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হোসেন চৌধুরী কলেজের ওই ঝামেলাটি নিষ্পত্তির অনুরোধ জানান। এমপি কেয়া চৌধুরী মাইক হাতে নিয়ে, কলেজের ওই ঘটনাটির ব্যাখ্যা দেন এবং বিষয়টি গভর্ণিং বডি’র সাথে আলোচনা সাপেক্ষে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে নজমুল হোসেন চৌধুরীকে অনুরোধ জানান। পরে নজমুল হোসেন চৌধুরীর অনুরোধে প্রায় দেড় ঘন্টা পর সভাস্থলে উপস্থিত হন উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই।

অনুষ্ঠানে এমপি কেয়া চৌধুরীর বক্তৃতা চলাকালে মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল হাই। এ সময় তার প্রতিবাদকে সমর্থন করে আওয়ামীলীগ নেতা শাহ আহমেদ আওলাদ উত্তেজিত হয়ে কেয়া চৌধুরী এমপিকে উদ্দেশ্য করে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন। তার এ অসৌজন্যমূলক আচরণে সভাস্থলে হট্টগোল শুরু হয়। শাহ আহমেদ আওলাদকে তেড়ে আসেন মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও অন্যান্য অতিথিরা। এ সময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল কাদির চৌধুরী সহ অতিথিরা পরিস্থিতি শান্ত করেন। পরে আবার কেয়া চৌধুরী বক্তৃতা দিতে শুরু করে বলেন, কিছুদিন পূর্বে এখানে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানগণ আমাকে বর্জন করেছিলেন। সে দিনটির সাথে আজকের দিনটিকে আমি স্মরণ রাখব। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাকে ধর্য্য ধরার ক্ষমতা দেন। এ কথা বলেই কেয়া চৌধুরী এমপি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপর কান্না জড়িত কণ্ঠে বক্তৃতা শেষ করে নিজ আসনে বসে পড়েন তিনি। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল হাই বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে শাহ আহমেদ আওলাদকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও কোন কোন অতিথি এর প্রতিবাদ করেন। এ সময় কেউ কেউ শাহ আহমেদ আওলাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে পূনরায় হট্টগোল সৃষ্টি হলে কেয়া চৌধুরী এমপি সভাস্থল ত্যাগ করেন। তিনি সভাস্থল ত্যাগ করার পর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কার্যত পন্ড হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারাও সভাস্থল ত্যাগ করেন।

প্রথম পাতা
শেষ পাতা