পবিত্র কাবা শরীফকে অবমাননা করে ফেসবুকে ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করার ঘটনায় ক্ষোভে-বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়েছে নবীগঞ্জ। দফায় দফায় হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল। জানা যায়, গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে বিভিন্ন গ্রাম থেকে থেমে থেমে কয়েকটি মিছিল নিয়ে কয়েক হাজার বিক্ষুদ্ধ জনতা ইনাতগঞ্জ বাজার প্রদক্ষিন করে রজত রায়ের ফাঁসি দাবীতে এ বিক্ষোভ মিছিল করে। এক পর্যায়ে মিছিলকারীরা মধ্যসমেত গ্রামস্থ রজত রায়ের বাড়ীর দিকে গিয়ে ওই গ্রামের ৪টি বাড়িতে ঢিল ছুড়ে। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এর পূর্বে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ। দুপুর ২টার দিকে বিক্ষুদ্ধ জনতাদের নিয়ে স্থানীয় হাই স্কুল মাঠে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। এতে বক্তব্য রাখেন, সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, পুলিশ সুপার জয় দেব কুমার ভদ্র, বিজিবির কর্নেল সাজ্জাদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উপ-সচিব) সফিউল আলম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার, সহকারী কমিশনার ভূমি জীতেন্দ্র কুমার নাথ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, থানার ওসি এসএম আতাউর রহমান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বজলুর রশীদ, মুহিবুর রহমান হারুন, সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমেদ জিহাদী, আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান প্রমুখ। এ সময় বিক্ষোভকারীরা মিছিলে ঢিল নিক্ষেপকারী নারায়নের গ্রেফতারের দাবী জানান। পরে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অপরাধী যেউ হোক আইনের উর্ধ্বে কেউ নয়। ঘটনার পরপরই দোষী রজত রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং প্রচলিত আইনে তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে’।

তিনি বিক্ষোভকারীদের আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘অপরাধ করেছে একজন। তার শাস্তি হবে নিশ্চিত। কিন্তু আপনারা কেউ আইন নিজের হাতে নিয়ে অপরাধী হবেন না। এ সময় বিক্ষোভকারীরা প্রচলিত আইনে দোষী রজতের শাস্তি না দিয়ে তাকে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তার বিচারের দাবী জানান’।

এদিকে, ফেইসবুকে পোষ্টের পর বিক্ষোভ মিছিলের খবর পেয়ে রজত রায়কে রবিবার বিকেলে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাতেই নবীগঞ্জ থানার এস আই মোবারক হোসেন বাদী হয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও ইনাতগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইনাতগঞ্জ বাজার ও আশপাশ এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটুন র‌্যাব, দশ প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তৎপর রয়েছেন। তারা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে এবং হিন্দু বাড়ি ঘরের আশ পাশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন। জানা যায়, ধৃত রজতের ফাঁসির দাবীতে নবীগঞ্জ উপজেলা সদর, কাজির বাজার, বড় ভাকৈরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। থানার ওসি এসএম আতাউর রহমান জানান, গ্রেফতারকৃত রজত স্বীকারোক্তি দেয়ায় গতকাল সোমবার সকালে রিমান্ড আবেদন না করেই আদালতের মাধ্যমে তাকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়। বর্তমানে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অপরাধীকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর রয়েছে’।