১ কোটি টাকার জমি আত্মসাত করতে জাল দলিল ॥ বাহুবল উপজেলা বিএনপির সভাপতি বাবুল ও তহশিলদার আবিদ আলীসহ ৪ জনকে জেলে প্রেরণ
তারিখ: ১৭-অগাস্ট-২০১৭
স্টাফ রিপোর্টার ॥

১ কোটি টাকার জমি আত্মসাত চেষ্টা ঘটনার সাথে জড়িত বাহুবল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকাদ্দছ মিয়া বাবুল, তহশিলদার আবিদ আলী, মিরপুর গার্লস স্কুলের শিক্ষক হাবিবুর রহমান, জাল দলিলের স্বাক্ষী সৈয়দ জিসান আহমেদকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। ১ কোটি টাকার জমি আত্মসাত করতে জাল দলিল সৃষ্টিকারী চক্রটি পবিত্র কোরআ্ন শরিফের দোহাই দিয়েছিল। গতকাল বুধবার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শম্পা জাহান তাদের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। মামলার অন্যান্য আসামী শহরের দক্ষিন অনন্তপুরের সৈয়দ আব্দুস ছালাম, নবীগঞ্জের সদরঘাট গ্রামের সৈয়দ আব্দুল মতিন, বাহুবল সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক নুর উদ্দিন, দক্ষিন অনন্তপুর গ্রামের সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন, বাহুবল সাব রেজিষ্ট্রার অফিসের দলিল লেখক আমির হোসেনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে। জালজালিয়াতির মাধ্যমে দলিল সৃষ্টি, প্রতারণা, সরকারী চাকুরীজীবী হওয়া স্বত্বেও উৎকোচ গ্রহনের অভিযোগে ৯ জনের বিরুদ্ধে স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন জমির মালিক সৈয়দ আমিনা বেগমের পুত্র মোঃ আব্দুল আজিজ চৌধুরী। মামলাটি তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন হবিগঞ্জ এর উপ পরিচালক বরাবরে প্রেরণ করা হলে ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিক সত্য হিসাবে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজী দেন বাদী পক্ষ। মামলাটি পাঠিয়ে দেয়া হয় বাহুবলের কগনিজেন্স কোর্টে। এ পর্যায়ে মামলাটি তদন্তের জন্য পুণরায় প্রেরণ করা হয় বাহুবল থানায়। বাহুবল থানা ৯ আসামীর বিরুদ্ধেই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা রয়েছে বলে প্রতিবেদন দেন। আসামীদের বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করা হলে ৪ আসামী গতকাল আদালতে হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করেন। আদালত শুনানী শেষে প্রত্যেকের জামিন না মঞ্জুর করে জেলে প্রেরণ করেন। প্রায় ২৩ বছর আগে রেজিষ্ট্রি দলিল সম্পাদন হওয়া কোটি টাকার জায়গা আত্মসাতের চেষ্টা করে আসামীরা। এ জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়- বাহুবল উপজেলার তিতারকোনা মৌজার ১৩৪ নং জেএল এর ১৯৪ খতিয়ানের ৪৫৩ নং দাগের ১৬শতক জায়গার এস এ রেকর্ডীয় মালিক ছিলেন তিতারকোনা গ্রামের রইছ উল্লা। রইছ উল্লার মৃত্যুর পর ওই জায়গার বৈধ মালিক হিসাবে তার পুত্র রুশন আলী একই গ্রামের মৃদ আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী সৈয়দা আমিনা বেগমের কাছে ১৯৯৩ সালের ২২ নভেম্বর তারিখে ২৬৯৯নং রেজিষ্ট্রি দলিলের মাধ্যমে ১৬শতক জায়গা বিক্রি করেন। বিক্রিত জায়গাটি ঘেষে ঢাকা-সিলেট নতুন মহাসড়ক এর অবস্থান হলে জায়গার মূল্য বহুগুন বেড়ে যায়। জায়গার প্রতি লোভ জন্মে বাহুবলের একটি প্রভাবশালী চক্রের। বিক্রির ২৩ বছর পর একটি ভ্রম সংশোধন দলিল করে তা ৩ জন প্রভাবশালীর কাছে বিক্রি করে করা হয়। এবার ১ কোটি টাকা মূল্যের জায়গার ক্রেতা সাজেন বাহুবল উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকাদ্দস মিয়া বাবুল, পশ্চিম জয়পুর গ্রামের তহশিলদার হাজী আবিদ আলী ও এক্ই গ্রামের স্কুল শিক্ষক হাবিবুর রহমান। রেজিষ্ট্রি দলিল ৭১৭/১৬। আকাদ্দস মিয়া বাবুলসহ ৩জন জায়গাটি ২৯/২/২০১৬ ইং তারিখে ক্রয় করার ৭ দিনের মাথায় তারা আবারও জমিটি বিক্রি করে দেন। নামজারী করতে না পেরে এবার তারা আশ্রয় নিয়েছেন ভিন্নপথ। আকাদ্দস মিয়া বাবুলসহ ৩ জন ৪ ব্যক্তির নামে হেবা বিল এওয়াজ দলিল করে জায়গাটি হস্তান্তরের চেষ্টা করেন। হেবা বিল এওয়াজ দলিল এর গ্রহীতারা হলেন-বাহুবলের পশ্চিম জয়পুর গ্রামের সামসু মিয়া, একই গ্রামের কদর আলী, আব্দুল মতিন ও দৌলতপুর গ্রামের আলাউদ্দিন। খোজ নিয়ে জানা যায় হেবা দলিল দাতা এবং হেবা দলিল গ্রহীতারা কেউ কারও আত্বীয় নন। হেবা দলিলে উল্লেখ করা হয়েছে “ আপনারা দলিল গ্রহীতাগন আমাদের পরম আত্বীয় হন। আমাদের মৃত্যৃর পর আমাদের বিদেহী আত্মার সৎগতির নিমিত্তে আমাদেরকে ৩ খানা পবিত্র কোরআ্ন শরিফ দান করিয়াছেন। আপনাদের এই অমূল্য দানের কিয়দাংশ ঋণ পরিশোধার্থে আপনাদের এই মহামূল্যবান দান আমরা সানন্দে গ্রহণ করিয়া আপনাদের ভবিষ্যত জীবনের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের ভূমি (১ কোটি টাকার আলোচিত ভূমি) আপনাদেরকে হেবা বিল এওয়াজ দলিল মূলে আপনাদের দখলে সমজাইয়া দিলাম”। হবিগঞ্জ ডিডরাইটার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাজুল ইসলাম জানান- হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পাদনে সরকারের আর্থিক কোনো ক্ষতি হয় না। তবে ক্রেতার নামজারী করতে সমস্যা হলে হেবা বিল এওয়াজ দলিল সম্পাদন করে জায়গা রেজিষ্ট্রি সম্পাদন করতে পারেন। এক বছরে সারা জেলায় এ ধরনের দলিল ৫/৭টাও হয়না। জাল দলিল সৃষ্টির সাথে জড়িত প্রভাবশালী ৪ ব্যক্তিকে জেলে প্রেরনের বিষয়টি ছিল আলোচিত বিষয়। বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডভোকেট মোহিত আহমেদ চৌধুরী।

প্রথম পাতা