বানিয়াচঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের টালবাহানা ॥ দীর্ঘ ২১ বছরেও কার্যকর হয়নি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ
তারিখ: ১২-অক্টোবর-২০১৮
স্টাফ রিপোর্টার ॥

বানিয়াচঙ্গে এক ইউপি চেয়ারম্যানের টালবাহানায় দীর্ঘ ২১ বছরেও কার্যকর হয়নি উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ। কাল বিলম্ব করা হচ্ছে না-না অজুহাতে। এ অবস্থায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নিরীহ এক পরিবার। পাশাপাশি বার-বার শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ভাবে ওই পরিবারটি হচ্ছে চরম হয়রানীর শিকার। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলসহ স্থানীয় জনমনে দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ। জানা যায়, বানিয়াচং উপজেলার তাতারী মহল্লার আব্দুল রেজ্জাক নামে এক ব্যাক্তি ১৯৮৪ সালের ২৭ ফেব্র“য়ারী তৎকালীন বানিয়াচং উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একই গ্রামের সুন্দর আলীসহ তার লোকজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্য বিধির ১৪৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদী আব্দুল রেজ্জাকের স্বত্ব দখলীয় বানিয়াচং থানার জাতুকর্ণ মৌজার ৮৮৪ ও ৮৮৫ দাগের মোট ৩০ শতক ভূমি সুন্দর আলী ও তার লোকজন জোরপূর্বক দখল করে নেয়ার চেষ্টা করছে। এনিয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও শান্তি ভংগের আশংকা দেখা দিয়েছে।

মামলায় আদালত নালিশা ভূমি ক্রোকাদেশ দিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে “রিসিভার” নিয়োগ করেন। পরবর্তীতে আদালত উভয়পক্ষের সাক্ষ্য প্রমান গ্রহন করে নালিশা ভূমিতে আব্দুল রেজ্জাকের দখল স্থিরতর করে ১৯৯৭ সালের ২ ফেব্র“য়ারী চুড়ান্ত আদেশ দেন। আদেশে “রিসিভার”-কে নালিশা ভূমির দখল আব্দুর রেজ্জাককে সমজিয়ে দেয়ার জন্য উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, উক্ত আদেশের বিরুদ্ধে সুন্দর আলী দায়রা জজ আদালতে একটি “রিভিশন” মামলা দায়ের করেন। ২০০১ সালের ৭ আগস্ট “রিভিশন” শুনানীর পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ বহাল রাখেন দায়রা জজ আদালত। কিন্তু ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে সুন্দর আলী পুনরায় হাইকোর্ট বিভাগে একটি “রিভিশন” মামলা দায়ের করেন। ২০০৭ সালে হাইকোর্ট “রিভিশন”-টি না’মঞ্জুর করে দায়রা জজ আদালতের আদেশ বহাল রাখেন। পরবর্র্তীতে মামলার নথি হাইকোর্ট থেকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফেরত আসে। এরইমধ্যে বাদী আব্দুর রেজ্জাক মারা গেলে তার ছেলে আব্দুল খালেক মামলা পরিচলনার জন্য পক্ষভূক্ত হন এবং ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নালিশা ভূমির দখল তাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ৪ মে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নালিশা ভূমি আব্দুল খালেকের বরাবরে সমজিয়ে দেয়ার জন্য বানিয়াচং ৩নং ইউপি চেয়ারম্যান (রিসিভার) কে নির্দেশ দেন। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যন মোঃ হাবিবুর রহমান নালিশা ভূমির দখল বাদী পক্ষকে সমজিয়ে দিতে টালবাহানা শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি আদালতে আবেদন করে “রিসিভার”-এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন। আদালত তার আবেদন অগ্রাহ্য করে তাকে দখল কাজে সহযোগিতা করার জন্য ওসি ও সহকারী কমিশনার ভূমিকে নির্দেশ দেন। আদালতের এ আদেশ পালন না করে ইউপি চেয়ারম্যান মামলার কোন সংক্ষুুব্ধ পক্ষ না হওয়া  স্বত্তেও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে দায়রা জজ আদালতে একটি “রিভিশন” দায়ের করেন। বর্তমানে “রিভিশন”-টি শুনানীর জন্য অপেক্ষমান থাকায় আদেশ কার্যকরে বিলম্ব হচ্ছে। এ অবস্থায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নিরীহ এক পরিবার। পাশাপাশি বার-বার শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক ভাবে ওই পরিবারটি হচ্ছে চরম হয়রানীর শিকার। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলসহ স্থানীয় জনমনে দেখা দিয়েছে চাপা ক্ষোভ।

প্রথম পাতা