হলনা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ ॥ মাধবপুরে বাবার পর না ফেরার দেশে চলে গেল মেধাবী ছাত্রী অর্পিতা
তারিখ: ১৬-সেপ্টেম্বর-২০২০
মাধবপুর প্রতিনিধি ॥

আমার বড় দাদা কয় দিন আগে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় অকালে প্রাণ হারিয়েছে। আমার ভাবীও মানসিক রোগী। অবুঝ তিনটি শিশুর ভরণপোষণে দায়িত্ব পড়ে আমার উপর। আমার বড় ভাতিজি ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী অর্পিতা কৈরী খুবই মেধাবী ছিল। তার জীবনের লক্ষ্য ছিল ডাক্তার হবে। তার স্বপ্ন পূরণের জন্য আমরা সব রকম সহযোগিতা করেছি। তার বাবা মৃত্যুর পরও লেখাপড়ায় কোন অমনযোগী ছিল না। তার বাবার ডাকে সাড়া দিয়ে অর্পিতা আজ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তার ডাক্তার হবার স্বপ্ন আজ ছাই ভষ্মে পরিণত হয়েছে। সে বায়না ধরেছিল সামনে তার জন্মতারিখ বড় করে পালন করতে হবে। আর কোন দিন অর্পিতার জন্মদিন পালন হবে না। এভাবেই বড় ভাইয়ের বড় মেয়ে অর্পিতাকে হারিয়ে ছোট কাকু বিদ্যাসাগর তার কথা বলছিলেন। মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া গ্রামের মৃত গোপাল কৈরীর মেয়ে অর্পিতা কৈরী জগদীশপুর জে.সি হাইস্কুল এন্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী গত সোমবার রাত ১০ টায় নিজ বাসায় পানির পাম্পে সুইচ অন করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পর্শে অকাল মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে সহপাঠিরা ও এলাকাবাসী রাতেই একনজর দেখতে শত শত মানুষ ভিড় জমায়। অর্পিতার পাঠশালার শিক্ষক আবু কাউছার পিন্টু বলেন, অর্পিতা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খুবই মেধাবী ছিল। আমাদের আশা ছিল অর্পিতা লেখাপড়া করে বড় মানের একজন কর্মকর্তা হবে। কিন্তু তার এভাবের মৃত্যু সংবাদ শুনে কিছুতেই মনকে বুঝাতে পারছি না। এর ৫ মাস আগে তার পিতা গোপাল কৈরী জগদীশপুর তেমুনিয়ায় মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। পিতাকে হারিয়ে অর্পিতার পরিবার খুবই কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে ছিল। প্রতিবেশী শংকর পাল চৌধুরী বলেন, অর্পিতাকে হারিয়ে তার মা ও আরো অবুঝ দুটি শিশু এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। অর্পিতার এমন অনাঙ্খাখিত মৃত্যু সবাইকে কষ্ট দিয়েছে। সাংস্কৃতিক কর্মী অসিম রায় বলেন, অর্পিতা একজন সংস্কৃতিক কর্মী ও সংগীত শিল্পী ছিল। সে খুবই সৃজনশীল ছিল। তার বহুমাত্রিক প্রতিভা ছিল। পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারলে নিশ্চিত সে দেশের জন্য সম্পদ হতে পারত। কিন্তু তার এমন মৃত্যু কারো কাছে কাম্য ছিল না। মঙ্গলবার দুপুরে তেলিয়াপাড়ায় স্থানীয় শ্মশান ঘাটে অর্পিতাকে দাহ করা হয়েছে।