সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন ॥ যুদ্ধাপরাধ মামলা থেকে বাঁচার জন্য মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া ও তার ভাই নূরুল হক ভূইয়া জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন
তারিখ: ১৬-সেপ্টেম্বর-২০২০
স্টাফ রিপোর্টার ॥

আজমিরীগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন বলেছেন মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া ও তার ভাই ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল হক ভূইয়া দিশেহারা হয়ে একেক সময়ে একেক ধরণের বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ভূল বুঝিয়ে মামলা চলাকালীন অবস্থায় মিথ্যা তথ্য প্রচার করছেন। সোমবার হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন- আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বলেছি-১৯৭১ সালে প্রকাশ্য দিবালোকে যুদ্ধপরাধ মামলার আসামী নূরুল হক ভূইয়া, তার ভাই মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া, আলী রেজা, সিদ্দিক মিয়াসহ তাদের আরো ২/৩ জন সহযোগি বিথঙ্গল গ্রামের আদম আলী, ওয়াহাব মিয়া তালুকদারকে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় তারা ওয়াহাব মিয়া তালুকদার ও আদম আলীর বাড়িতে লুটপাট করে এবং ঘর বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। এ খবর শুনে বিথঙ্গল ও আশপাশ এলাকার লোকজন এগিয়ে আসেন। এ সময় তারা তাদের ঘেরাও করলে তারা এলোপাথারি গুলি ছুড়ে এতে লক্ষন সরকার, আরাদন সরকার ও প্রমোদ রায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আসামী মিজবউদ্দিন ভূইয়া গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মলেনে হত্যার কথা স্বীকার করে বলেছেন তিনি এবং তার ভাই নুরুল হক ভূইয়া ঐ সময় বিথঙ্গল গ্রামে বৈধ বন্দুক নিয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং এলোপাতারি আক্রমনে ৬/৭ জন লোক মারা গেছে। যাহা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মিসবাহ ভূইয়াদের স্বাধীনতা বিরোধী কর্মকান্ড, বঙ্গবন্ধুর সভায় বাধা প্রদান এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরোধীতা, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা, রাজাকার লালন, পাকবাহিনীর তোষণ, লঞ্চ নিয়ে লুট-পাটের ঘটনা এবং যুদ্ধের সময় পাক বাহিনী পারাপারের জন্য খোয়াই নদীতে তিনটি নৌকা পর্যন্ত দিয়েছিল। তাদের স্বাধীনতা বিরোধী ভুমিকা বিভিন্ন বই পুস্তকে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এসব বিষয় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে অভিযোগ করায় আমাদের উপর খুব ক্ষিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন-আমরা ব্যক্তি মিসবাহ, নুরুল হক ভূইয়া, আলী রেজা ও ছিদ্দিক মিয়ার বিরুদ্ধে তাদের অপরাধের জন্য অভিযোগ করেছি। কোন দলের বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে সকল ছেলেদের ব্যবহার করে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রপাকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে তারা ৭১ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনা জানার কথা না। একমাত্র যারা প্রবীন শুধু তারা অবগত আছেন। মিজবা ভূইয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে দলকে ব্যবহার করছেন। আমি বিনীতভাবে দলের কর্মীভাইদের বলছি আপনারা ব্যক্তির জন্য দলকে ব্যবহার করবেন না। যুদ্ধাপরাধীর পক্ষ নিবেন না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ডাকে যে দল নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে সেই দলকে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে নিষেধ করছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দল আওয়ামী লীগ। এটা কারো ব্যক্তি প্রপার্টি নয়। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে থাকতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দলকে কেউ কুলসিত করবে তা হতে দিব না। শুধু তাই নয় তারা আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সনদ বাতিল করে দিবে, দেখে নিবে। আমাদের বিরুদ্ধে মিটিং মিছিল করে হুমিকি দিচ্ছে। ফেসবুকে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার করছে। সংবাদ সম্মেলনে আমাদের ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য দিয়েছে। আমরা মিজবা ভূইয়ার এ সব মিথ্যাচারের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি বিথঙ্গলের ঘটনা সরকার ঘোষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের স্বার্থে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে তদন্ত পূর্বৃক ব্যবস্থা গ্রহণের জোড় দাবি জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় ওয়াহাব মিয়া খুন হলেও এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তার ভাই মধু মিয়া বর্তমানে কারাগারে আছে, এ সময় মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান খান বাচ্চু বলেন, মধূ মিয়াকে আমি ছিনিনা। যুদ্বাপরাধ মামলা দায়েরের পর তার নাম শুনেছি। তবে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্বা আশরাফ উদ্দীন বলেন-১৯৭১ সালে মধূ মিয়ার বয়স ছিল ৯/১০ বছর। মিসবাহ ভূইয়া ২০১৭ সালে সাংবাদিক সম্মেলনে ওই ঘটনার বর্ননা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, সে ও তার ভাই অপহৃত মহিলাকে উদ্ধার করতে গেলে ৬/৭ জন মারা যায়। এতেই প্রমানীত হয় কারা তাদের হত্যা করেছিল। এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্বারা বলেন, মিজবাহ উদ্দিন ভূইয়া গত ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মলেনে ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেছেন তিনি এবং তার ভাই নুরুল হক ভূইয়া ঐ সময় বিথঙ্গল গ্রামে বৈধ বন্দুক নিয়ে উপস্থিত ছিলেন এবং এলোপাতারি আক্রমনে ৬/৭ জন লোক মারা গেছে। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। “দাস পার্টির খোঁজে” মুক্তিযুদ্বের দালিলীক বইটিকে মিসবাহ ভূইয়া অস্বীকার করছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা তৈয়বুর রহমান মিসবাহ উদ্দীন ভুইয়ার মানষিক সমস্যা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এতে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার আব্দুর রহিম জুয়েল, দাস পার্টির সেকেন্ড ইন কমান্ড ইলিয়াছ চৌধুরী, বীরমুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশিদ, বীরমুক্তিযোদ্ধা মর্তুজ আলী, আক্কেল আলী, বীরমুক্তিযোদ্ধা রমজান আলী, হরেকৃষ্ণ দাস, সুনীল দাস, মনি লাল দাস, পিতাম্বর দাস, নিখিল দাস, রাখেশ সরকার, হেমেন্দ্র মাস্টার, দিলীপ চৌধুরী, রজনী, ছোবহান মিয়াসহ ৩৫জন মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।