আজ শনিবার (৬ আগষ্ট) বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম এডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদের ২৬তম মৃত্যু বার্ষিকী। এ উপলক্ষে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ ও বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে। মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকেও মিলাদ মাহফিল, কাঙ্গালীভোজ ও অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে অর্থ বিতরণসহ খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালে শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপি যখন মৃত্যু বরণ করেন তখন তাঁর একাউন্টে মাত্র ১০ হাজার টাকা ছিল। এ সময় জননেনত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপির লাশ দাফন-কাফনের টাকা বহন করেন। পাশাপাশি তার পরিবারের সকল দায়িত্ব নেন এবং তার ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া করানোসহ সমস্ত খরচ ব্যয়ভার গ্রহন করেন।
স্থানীয়রা জানান, একজন ন¤্র, ভদ্র, আদর্শবাদী শিক্ষক ও মানতবাদী মানুষ ছিলেন বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনের সংসদ শরীফ উদ্দিন আহমেদ। সর্বোপরি তিনি একজন সংগঠক, সংসদ সদস্য, সমাজ সংস্কারক ও পর দুঃখে কাতর আত্মমর্যাদা সম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন। মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপি থাকা অবস্থায় আইন পেশায় ছিলেন এবং তিনি যখন এমপি ছিলেন না তখনও আইন পেশায় থাকা অবস্থায় মানুষকে বিনা টাকায় সেবা দিতেন। শুধু তাই নয়, তিনি এলাকার মানুষের হবিগঞ্জে আসা-যাওয়ার ভাড়াও বহন করতেন। তিনি দল ক্ষমতায় না থাকার পরও তাঁর সাধ্যের মধ্যে দলীয় কর্মীসহ সাধারন মানুষকে সহযোগিতা করতেন। তাদের সন্তানের মত, ভাইয়ের মত ভালবাসতেন। তাই আদর্শ, সততা, ত্যাগ এই সবের জন্য তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে প্রিয় মানুষ ছিলেন। একজন আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে আজও হবিগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশে তিনি সফল পরিচিতি মানুষ। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার মাত্র ১ মাস ২৪ দিন পর তিনি ইন্তেকাল করেন। তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ১ মাস ২৪ দিনের মধ্যে বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ সড়ক নির্মানের দাবী করেছিলেন। তাঁর দাবীর প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মৃত্যুর পর সড়কটি অনুমোদন দেন। এবং সেই সড়কটি মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপি সড়ক নামে অনুমোদন করেন।
তাঁর ছেলে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইন সম্পাদক এডভোকেট ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল জানান, মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপির ৩৬তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ ও বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে। তাছাড়াও মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপি স্মৃতি গ্রন্থাগার আগামীকাল রবিবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। পরিবারের পক্ষ থেকেও মিলাদ মাহফিল ও কাঙ্গালীভোজ এবং অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে অর্থ বিতরণ ও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
এদিকে, মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ এমপি’র স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এল.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্র বলেন-‘একবার তিনি আমাদের অষ্টম শ্রেণির ক্লাসে এসেছিলেন। তখন তিনি সবে মাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তিনি ক্লাসের শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘তোমাদের কার কার দুইটি করে ফুলপ্যান্ট আছে দাঁড়াও, তখন মাত্র ১৭ থেকে ১৮ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়েছিল’। আবার বললেন, ‘কার কার তিনটি ফুলপ্যান্ট আছে, তখন মাত্র ৬ থেকে ৭ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়েছিল’। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘শোনো তোমাদের বলি, আমি যখন ৮শ শ্রেনী থেকে ১০শ শ্রেনী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি তখন আমার একটি মাত্র ফুলপ্যান্ট ছিল। ছাত্র জীবনের একটি ফুল প্যান্ট-এর অধিকারী হয়ে আজ আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। তোমাদের প্রত্যেকেরই একের অধিক ফুলপ্যান্ট আছে। তোমরা আমার চেয়ে প্রত্যেকেই ভালো অবস্থানে যাওয়ার মানসিকতা অর্জন করতে হবে’। এ সময় তিনি আরো শিক্ষামূলক কিছু উপদেশ দিয়ে আমাদের ক্লাস করান।
উল্লেখ্য ,মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ ১৯৯৬ সালের ৬ আগষ্ট মৃত্যুবরণ করেন। সৎ জীবন যাপন ও আদর্শিক রাজনীতির জন্য আজও তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টামত্ম হয়ে আছেন। মরহুম শরীফ উদ্দিন আহমেদ বানিয়াচং উপজেলার যাত্রাপাশা গ্রামে ১৯৪২ সালে ৭ই মার্চ জনগ্রহন করেন। তিনি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক এবং বানিয়াচং এল.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এ্যান্ড রিসার্স থেকে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ সালে সম্মানের সাথে এলএলবি পাশ করেন। এলএলবি পাশ করার পূর্বে তিনি বানিয়াচংয়ের ঐতিহাসিক এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে কয়েক বছর সুনামের সাথে শিক্ষকতা করে ছাত্রদের পরম আত্মার আত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন। পরে আইন পেশার পাশাপাশি রাজনীতি ও মানুষের সেবাকে কর্ম হিসেবে গ্রহন করেছিলেন। জাতীয় সংসদ চলাকালে ১৯৯৬ সালের ৬ আগষ্ট আকস্মিক ভাবে তিনি মুত্যুবরণ করেন।