স্টাফ রিপোর্টার \ বানিয়াচংয়ে থানা ঘেরাও করে পুলিশের এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে পিঠিয়ে হত্যা করে গাছে সাথে ঝুঁলিয়ে রাখার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২২ আগষ্ট) বানিয়াচং থানার তদন্ত ওসি আবু হানিফ বাদি হয়ে ৫ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে তিনি এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। গতকাল শুক্রবার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ ও মামলা সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে উপজেলার এল আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন কয়েক হাজার লোক। পরে তাঁরা সেখান থেকে একটি মিছিল নিয়ে নতুনবাজার, বড়বাজার হয়ে বানিয়াচং থানার উদ্দেশ্যে রওয়ান দেয়। এর পূর্বে উপজেলা পরিষদের কয়েকটি ভবন ভাঙচুর চালায় তারা। আন্দোলনকারীদের মিছিলটি থানার সন্নিকটে গেলে বানিয়াচং শাহী ঈদগাহ এলাকায় যাওয়া মাত্রই পুলিশ তাদের বাধা প্রদান করে। এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়লে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ৫ জন বিক্ষোভকারী নিহত হন। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরো ৩ জন। পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়ার বিষয়টি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে আশপাশের কয়েকটি মহল্লার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে থানার সামনে একত্রিত হন কয়েক হাজার মানুষ। এ সময় উত্তেজিত জনতা বানিয়াচং থানা ঘেরাও করে। শুরু হয় ইটপাটকেল নিক্ষেপ। একপর্যায়ে থানা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। এ সময় থানার ভেতরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সহ পুলিশের ১৫ থেকে ১৬ সদস্য আটকা পড়েন। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন নেতা-কর্মী আটকা পড়েন। তারা বিক্ষোভকারীদের ধাওয়ায় থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। আগুন ধরিয়ে দিলে থানার ভেতরে থাকা বেশ কিছু গাড়ি ভষ্মিভূত হয়। এভাবে সময় গড়িয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত উত্তেজিত জনতা থানা ঘেরাও করে রাখেন। ওই দিন রাত ২টার দিকে থানার দ্বিতীয় তলায় অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠানোর সময় এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে উপস্থিত লোকজন ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। পরে সবার সামনে পিটিয়ে হত্যা করে তাকে। হত্যা করার পর লাশ নিয়ে বানিয়াচং বড় বাজার শহীদ মিনারে নেয় তারা। সেখান থেকে ভোর রাতে লাশ থানার সামনে এনে ফেলে রেখে যায়। পর দিন সকাল ১০টার দিকে উত্তেজিত জনতা এসআই সন্তোষ দাশ চৌধুরীর লাশ থানার সামনে একটি গাছে ঝুঁলিয়ে রাখেন। দিনভর হাজার হাজার মানুষ লাশ দেখতে থানা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। এদিকে গাছে লাশ ঝুঁলানোর খবর পেয়ে ৬ আগস্ট বেলা ২টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।