শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুর শিল্প এলাকায় জাল জালিয়াতি ও ভূয়া দলিল তৈরি করে নিরিহ লোকজনের সম্পদ দখল ও হয়রানী করে আসছে একটি চক্র। এমনকি আদালতের সিল ও দস্তখত জাল করিয়া নিরিহ লোকজনের নামে ভূয়া ওয়ারেন্ট সৃজন করিয়া হয়রানীও করে থাকে চক্রটি। অলিপুর এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মা হোমিও হল এন্ড লাইব্রেরীর স্বত্বাধিকারী এস এম সফিকুল ইসলাম টনু নামে এক ব্যক্তিতে ভূয়া পরোয়ানা সৃজন করিয়া পুলিশ কতৃক গ্রেফতার ও কারাগারে যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পরে আদালতে ওয়ারেন্টটি জাল প্রমাণ হওয়ায় হবিগঞ্জের সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন সফিকুল ইসলাম টনুকে জামিন দিলে সে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যজিস্ট্রেট আমল আদালত-১ এ একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে ঘটনার সাথে জড়িত ব্রাক্ষণর্ডু্ াগ্রামের মৃত কুকু মিয়ার ছেলে জসিম উদ্দিন আহমেদ, কেশবপুরের মৃত আবু আলী চৌধুরীর ওরপে মধু মাস্টারের ছেলে জামাল চৌধুরী ও সুরাবই গ্রামের ছমির আলীর ছেলে সৈয়দ ফোরকান আলীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। বুধবার দুপুরে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট এর আদেশ প্রদান করেছেন।আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের দায়রা ৫১৭/২১ নম্বরের একটি মামলার পরোয়ানায় গ্রেফতার করা হয় সফিকুল ইসলাম টনুকে। পরে হবিগঞ্জের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার পক্ষে জামিন চাইলে ভারপ্রাপ্ত বিচারক জাকির হোসাইন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই নাম্বারের কোন মামলাই নেই বরগুনা আদালতে। পরে তাকে জামিন প্রদান করেন বিজ্ঞ বিচারক। সফিকুল ইসলাম টনু জামিনে মুক্তি পেয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় খবর নিয়ে জানতে পারেন সে গ্রেফতার হওয়ার আগে জসিম, জামাল ও ফোরকান থানায় গিয়ে বরগুনা থেকে একটি ওয়ারেন্ট এসেছে কিনা তার সন্ধান করেন। এর মাঝে জসিম উদ্দিনের পক্ষে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সফিকুল ইসলাম তার পক্ষে কাজ করেননি বলে শত্রæতা ছিল। জামাল ও ফোরকান তার সহযোগী ছিল। এই সূত্র ধরে সফিকুল ইসলাম টনু হবিগঞ্জের সাবেক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ বিচারক হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমানকে তদন্তের আদেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফখরুল ইসলাম তদন্তকারী অফিসারকে তলব করেন। তদন্তকারীর উপস্থিতিতে শুনানী শেষে পুনরায় বিস্তারিত অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য একই অফিসারকে আদেশ প্রদান করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান বরগুনা আদালত থেকে তথ্য যাছাই ও বিস্তারিত অনুসন্ধান শেষে জসিম, ফোরকান ও জামালের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে বুধবার বিজ্ঞ বিচারক তিনজনের নামে ওয়ারেন্ট এর আদেশ প্রদান করেন। ওই আদালতের পেশকার খালেদ আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেন। মামলার বাদী এস এম সফিকুল ইসলাম টনু বলেন, আসামীরা বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে নকল করে ও ভুয়া নামজারী সৃজন করিয়া জাল দলিল সৃষ্টি করে প্রতারণা করে আসছে। অলিপুর এলাকার অনেক নিরিহ লোকজনকে তারা হয়রানী ও শর্বশান্ত করে আসছে। এই অপরাধ চক্রের প্রধান হোতা জসিম। তার নেতৃত্বে একটি চক্র সেখানে কাজ করছে। সে নিরিহ লোকজনের জমি নিজের নামে অথবা অন্য কারও নামে রেজিস্ট্রারী করে প্রতারণা করে আসছে। বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শাহ ফখরুজ্জামান জানান, এক সময় ভূয়া ওয়ারেন্ট সৃজন করিয়া অনেক নিরিহ লোকজনকে হয়রানী করা হত। কিন্তু এখন অনেক আধুনিকায়নের পরও এধরনের হয়রানী দুঃখজনক। মূলত সফিকুল ইসলাম টনু এলাকার সমাজের কল্যালকর কাজে জড়িত। সকল অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলায় দুষ্টু চক্রের শিকার হন তিনি। তাকে ভূয়া পরোয়ানায় হয়রানী করায় জসিম, ফোরকান ও জামালের বিরুদ্ধে মামলা করায় তাকে রাস্তায় পেয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখমও করে। এই ঘটনায়ও জসিম গং এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন সফিকুল ইসলাম টনু।