থমথমে অবস্থা, জনশূন্য নবীগঞ্জ বাজার
তারিখ: ৯-জুলাই-২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার \

নবীগঞ্জ বাজারে সংঘর্ষের পর থেকে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। জনশূন্য হয়ে পড়েছে বাজারটি। বন্ধ রয়েছে বেচা-কেনাও। সংঘর্ষ এড়াতে প্রশাসনের ১৪৪ ধারা বহাল রয়েছে। আজ বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রনে তৎপর ভূমিকা পালন করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংঘর্ষে জড়িত থাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। পাশাপাশি এখনো নবীগঞ্জ বাজারে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। 
গতকাল মঙ্গলবার সকালে নবীগঞ্জ শহরে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশে থমথমে পরিবেশ। শহরের প্রধান সড়কজুড়ে ছিল ধ্বংসের স্ত‚প। দেখে মনে হয়, শহরটির ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বড় ধরনের এক ঝড়। সকাল ১০টার দিকে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী সড়ক থেকে ভাঙা দোকানের ধ্বংসাবশেষ সরাচ্ছিলেন। এ সময় নবীগঞ্জ হাইস্কুলের সামনে মুদি ব্যবসায়ী রিন্টু দাশ বলেন, ‘আমি গরীব মানুষ, ঐ ঘটনার সাথে জড়িত নয়। তবু আমার ঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে ’
নিহত ফারুকের চাচা সাবেক পৌর কাউন্সিলর আলাউদ্দিন বলেন, ‘এ সংঘর্ষের কারণে আমাদের গ্রামের আমার আত্মীয় ভাতিজা হয় ফারুক প্রাণ হারিয়েছে। এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। সবাই একটু সংযত থাকলে হয়তো এ সংঘাত এড়ানো যেত।’ নবীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নবীগঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আহŸায়ক ছাবির আহমেদ চৌধুরী বলেন, সংঘর্ষে নবীগঞ্জ শহরের দেড় শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়। হাসপাতাল-ক্লিনিকও রক্ষা পায়নি। 
এর আগে গত সোমবার উপজেলার ইনাতগঞ্জের বাসিন্দা আশাহীদ আলী আশা ও পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের খসরু মিয়ার মধ্যে বাক-বিতÐা ও হাতাহাতির জের ধরে  কয়েকটি গ্রামের লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধে। এতে অর্ধশতাধিক দোকানপাটে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নবীগঞ্জ বাজার। 
স্থানীয়রা জানান, নবীগঞ্জে যে কোন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে গোষ্টিগত দ্ব›দ্ব ও হতাহত থামছে না। এর আগেও কয়েকবার দাঙ্গা হয়েছে। গত ২৫ বছরের ৪ বার গোষ্টিগত বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পৃথক দুটি খুনসহ আহত ও পঙ্গু হয়েছেন প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ। সর্বশেষ গত সোমবার ইনাতগঞ্জের বাসিন্দা আশাহীদ আলী আশা ও পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের খসরু মিয়ার মধ্যে বাক-বিতÐা ও হাতাহাতির জের ধরে  এলাকাভিত্তিক দুই স¤প্রদায়ের গোষ্টিগত দ্ব›েদ্বর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষে জড়িয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ। এতে তিমির গ্রামের বাসিন্দা এ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া নিহত হন। আর আহত হন অর্ধশতাধিক লোকজন। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৫ টা ৪০ মিনিটে ফারুক মিয়া তালুকদারের জানাজার নামাজ তিমিরপুর প্রাইমারী স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।এদিকে, প্রথম খুনের ঘটনা ঘটে ২০০১ সালে। নবীগঞ্জ শহরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় তছকির নামে একজন নিহত হন। আর আহত হন অনেকে। এর পর ২০১৪ সালে শহরের সিএনজি ষ্টেশন নিয়ে ২য় বার সংঘর্ষে জড়ান এলাকাবাসী। ২০২৪ সালে নবীগঞ্জ শহরে রাজা কমপ্লেক্সে ভাংচুর নিয়ে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এতে শতাধিক লোক আহত হন। ২৫ বছরে ব্যবধানে এ পর্যন্ত প্রাণহানী হয়েছে দুই জনের। স্থানীয়দের মতে এসব হত্যাকাÐের নেপথ্যে রয়েছে রাজনৈতিক দ্ব›দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারের জের। এর পাশাপাশি জমিজমা নিয়ে বিরোধ, গোষ্ঠীদ্ব›দ্ব, পারিবারিক কলহসহ নানা তুচ্ছ বিষয়। সংঘর্ষ বন্ধে প্রশাসনের তৎপর ভূমিকা ও জনসাধারনের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজন। 
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। তবে আমরা আমাদের মতো করে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ ঘটনায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর অভিযানে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সংঘর্ষে এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর ভূমিকা পালন করছে।