মাধবপুরে প্রতিপক্ষের হামলায় লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল লুট ॥ ভাংচুর
তারিখ: ১৭-এপ্রিল-২০১৪
স্টাফ রিপোর্টার ॥

মাধবপুরের ছাতিয়াইন ইউনিয়নের শিমুইলঘর গ্রামে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় ব্যাপক ভাংচুর লুটপাট করা হয়েছে। এ ঘটনায় বাড়িঘর ছাড়া একটি পক্ষের নারী ও কিশোরী মেয়েরাও লাঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাকা দালান ঘর ভেঙ্গে ইট কাঠ টিন খুলে নিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে ওই গ্রামে। অনেকটা মধ্য যোগীয় কায়দায় এ ধ্বংস যজ্ঞ চালানো হলেও প্রতিবাদ করার কেউ নেই।

জানা যায়-ওই গ্রামের বর্তমান মেম্বার আব্দুল হকের পক্ষের কালু মিয়ার ছেলে ফজলু মিয়া একজন কুখ্যাত জুয়া খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিত। ফজলু মিয়া তার স্ত্রীর স্বর্ণের হাড় বিক্রি করে পাওয়া টাকা দিয়েও জুয়া খেলেছে। ফজলু মিয়ার শশুর একই গ্রামের সাবেক মেম্বার জাহিদ মিয়ার ভাই ডুগন মিয়া। মেয়ের স্বর্ণের হাড় বিক্রি করে জুয়া খেলার ঘটনায় ডুগন মিয়া কালু মিয়ার কাছে বিচার প্রার্থী হন। এনিয়ে দুই বেয়াইয়ের মাঝে পারিবারিক দ্বন্ধ দেখা দেয়। এক পর্যায়ে কালু মিয়ার পক্ষে অবস্থান নেন বর্তমান মেম্বার আব্দুল হক এবং ডুগন মিয়ার পক্ষে অবস্থান নেন তার ভাই সাবেক মেম্বার জাহিদ মিয়া। একান্ত পারিবারিক বিষয়টি দুই মেম্বারের লোকজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ফজলু মিয়ার জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে দুই মেম্বারের লোকজন গত ৪ এপ্রিল সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সংঘর্ষে আব্দুল হক মেম্বারের পক্ষে মতি মিয়া নামের এক ব্যক্তিসহ ৭জন আহত হন। অপর দিকে জাহিদ মেম্বারের পক্ষে ১৮জন লোক আহত হন। আহতদের প্রাথমিকভাবে চিকিৎসাও দেয়া হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে মতি মিয়াও বাড়িতে ফেরেন। এর দুই দিন পর মতি মিয়াকে পুনরায় মাধবপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এক পর্যায়ে তাকে বি-বাড়িয়া স্থানান্তর করা হয়। গত ৮ এপ্রিল মতি মিয়া মারা যান। এব্যাপারে ৪৮জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে দুই মেম্বারের আধিপত্যকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন যাবৎ জাহিদ মেম্বারের পক্ষের অন্তত ১৫/২০ জন লোকের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাংচুর লুটপাট চালায় আব্দুল হক মেম্বারের পক্ষের লোকজন। আব্দুল হক মেম্বারের লোকজনের হাত থেকে রেহাই পায়নি জাহিদ মেম্বারের পক্ষের নারী ও শিশুরা। বাধ্য হয়ে জাহিদ মেম্বারের পক্ষের নারী পুরুষ সকলেই গ্রাম থেকে পালিয়ে যান। তারা বর্তমানে আশপাশের গ্রামগুলোতে অবস্থান নিচ্ছেন। গতকাল সরেজমিনে শিমুইলঘর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মধ্য যোগীয় বর্বরতা চিত্র। বিরান বাড়িঘর যে যার মতো পারছে লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৩৫ লাখ টাকায় সদ্য নির্মিত ডুগন মিয়ার দালান ঘরটি দাড়িয়ে আছে অসহায় অবস্থায়। ইট বালু রড আসবাব পত্র খুলে খুলে নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। তাছাড়া জাহিদ মেম্বারের টিনের ঘর, টেনু মিয়ার টিনের ঘর, ছোটু মিয়া, আলমগীর মিয়া, কামাল হোসেন, লাবু মিয়া, ফালু মিয়া, লটকর মিয়া, এরশাদ উল্লাহ, ছেনু মিয়ার টিনের ঘরের কোনো অস্তিত্বই অবশিষ্ট রাখেনি আব্দুল হক মেম্বারের লোকজন। আবু সুফিয়ানের আদা পাকা ঘরটিও ভেঙ্গে চুরমার করা হয়েছে। এসব বাড়ি থেকে কয়েকশ মন শরিষা, ডাল, আদা, পেয়াজ, রসুন, ধান, গমসহ ফলানো বিভিন্ন জাতের ফসল লুট করে নিয়ে গেছে তারা। এসব বাড়ির গরু ছাগল হাস মুরগী জবাই করে ভুরিভোজ করেছে আব্দুল হকের লোকজন। লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্রিজ, টিভি, সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান, রান্নার সরঞ্জামাদীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র। সরেজমিনে গিয়ে জাহিদ মেম্বারের পক্ষের কাউকে খুজে পাওয়া যায়নি। তবে আব্দুল হক মেম্বারের লোকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন- কারা এসব বাড়িঘর ভাংচুর লুটপাট করা হয়েছে এসবের কিছুই জানেন না তারা। তবে এখনও আব্দুল হক মেম্বারের লোকজন সশস্ত্র পাহাড়া বসিয়ে জাহিদ মেম্বারের লোকজনকে খোজাখুজি করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

প্রথম পাতা