নির্দিষ্ট সময়ের আগে বেবি বেগমের সিজার করা হয় ॥ নবীগঞ্জের মেডিকা হসপিটালে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
তারিখ: ২৩-জুন-২০১৮
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি ॥

নবীগঞ্জ শহরে অবস্থিত মেডিকা হসপিটাল নামের একটি প্রাইভেট হসপিটালের চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় নবীগঞ্জ শহরজুড়ে বইছে সর্বত্র আলোচনা। গত ২৯ জুন রেবি বেগম নামে এক মহিলার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় হওয়ার পূর্বেই সিজার তার সিজার করে হসপিটালের চিকিৎসক। ফলে পরেরদিন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে সিজারের কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন নবজাতকের পিতা। এছাড়াও সিজারের পর থেকে রেবি বেগমের অবস্থায়ও আশংকাজনক বলে জানান তিনি। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় নিহত নবজাতকের পিতার সাথে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া যায়। সূত্র জানায়, গত ৪ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে নবীগঞ্জের শেরপুর সড়কের বাংলা টাউনে মেডিকা হসপিটাল নামে এই প্রাইভেট হসপিটালটি যাত্রা শুরু করে। খবর পেয়ে উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের ঘোলডুবা শ্যামলী গ্রামের আলমগীর হোসেনের গর্ভবতী স্ত্রী রেবি বেগম কিছুনি রোগে আক্রান্ত হন। এ সময় তিনি রেবি বেগমকে ওই হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ভর্তি করেন। তিনি জানান,  গত ৯ জুন তিনি রেবি বেগমকে হসপিটালে ভর্তি করলে সুদীপ্তা চৌধুরী তার স্ত্রীর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরিক্ষার পরামর্শ দেন। তার পরামর্শমতে মেডিকা হসপিটালেই আলট্রাসনোগ্রামসহ বেশ কিছু পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্ট দেখে ডাক্তার সুদীপ্তা ১৫দিন পর রেবি বেগমের  সিজার করতে হবে বলে তাকে জানান। কিন্তু সিজারের সময় হওয়ার আগে গত ১৯ জুন রেবি বেগমের কিছুনী দেখা দিলে স্বজনরা বিকেল ৩টায় আবারো মেডিকা হসপিটালে নিয়ে আসেন।  এ সময় হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে দ্রুত সিজারের পরামর্শ দেন। তাদের কথামতো রেবি বেগমকে মেডিকা হসপিটালে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে ভর্তি  করেন তার স্বামী আলমগীর হোসেন। কিন্তু হসপিটালে কোন ডাক্তার না থাকায় কর্তৃপক্ষ নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ আব্দুস সামাদসহ বেশ কয়েকজন ডাক্তারকে মোবাইল ফোন করে। এতে করে  কোন ডাক্তার না আসায় হবিগঞ্জ থেকে ডাক্তার যেতে যেতে কয়েক ঘন্টা সময় চলে যায়। পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে হবিগঞ্জের জনৈক ডাক্তার ও তার সহযোগীরা রেবি বেগমের সিজার করেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন আলমগীর হোসেনর কাছ থেকে সাথে সাথে নগদ ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। ওই দিন রাতেই নবজাতকের অবস্থার অবনতি হলে সিলেটের মা ও শিশু হাসপাতালে প্রেরণ করে মেডিকা হসপিটাল কর্তৃপক্ষ । পরের দিন বিকেল ৫টায় ওই সিলেট হাসপাতালে  নবজাতকের মৃত্যু হয়। এদিকে, হসপিটাল সূত্র জানায়, গত ১৯ জুনই ওই হসপিটালে ঘোলডুবার রেবি বেগম ও উপজেলার এনাতাবাদ গ্রামের রুমি বেগমের সিজার সম্পন্ন হয়। তবে হাসপিটাল কর্তৃপক্ষ শুধু রুমি বেগমের সিজারের খবরটি স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ করে।  এতে করে সচেতন মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, রেবি বেগমের সিজার কি তাহলে সফলভাবে সম্পন্ন হয়নি? এ ব্যাপারে হসপিটালের ম্যানেজার কানাই লাল দাশ (কানু) প্রতিনিধিকে জানান, সফলভাবে সিজার সম্পন্ন হওয়ায় রুবি বেগমের সিজারের খবরটি পত্রিকায় দেওয়া হয়েছে। রেবি বেগমের সিজার কি সফলভাবে হয়নি এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে এড়িয়ে যান। হসপিটালের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর শেখ শাহানুর আলম ছানু প্রতিনিধিকে বলেন রুমি বেগমের সিজার সফল ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে রেবি বেগমের সিজার কোন ডাক্তার করেছে তা তিনি অবগত নন। এমনকি তিনি নবজাতক নিহতের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান।

প্রথম পাতা