সৈয়দ কায়সারের আপিলের রায় আজ ॥ মৃত্যুদণ্ড রায় বহালের দাবিতে মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন ও গণমিছিল
তারিখ: ১৪-জানুয়ারী-২০২০
স্টাফ রিপোর্টার ॥

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিলের রায় আজ মঙ্গলবার। গতকাল সোমবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ মঙ্গলবারের প্রকাশিত আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় রায় ঘোষণার জন্য আপিলটি এক নম্বর ক্রমিকে রয়েছে।

এর আগে শুনানি শেষে গত ৩ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রায়ের জন্য ১৪ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন। আদালতে কায়সারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গত ১০ জুলাই এ আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়।

এদিকে, যুদ্ধাপরাধ মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সৈয়দ মো. কায়সারের রায় আপিলেও বহাল রাখার দাবিতে মাধবপুরে মানববন্ধন ও গণমিছিল করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।

গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে জেলার কয়েকশ’ মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। পরে একটি গণমিছিল মাধবপুর বাজার প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়।

এসময় বক্তব্য রাখেন- সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন কাজী কবির উদ্দিন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ফুল মিয়া, মাধবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সুকোমল রায়, চুনারুঘাট উপজেলা কমান্ডার আব্দুস সামাদ।

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৫শ’ থেকে ৭শ’ স্বাধীনতাবিরোধী নিয়ে কায়সার বাহিনী গঠন করেন। এই মুসলীম লীগ নেতা এ বাহিনীর প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে মুক্তিকামী জনগণ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর দমন অভিযান চালিয়েছেন। কায়সার বাহিনীর লোকজন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় নাসিরনগর, সরাইল, মাধবপুর, চুনারুঘাটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরিত করেন। যুদ্ধাপরাধী কায়সার ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করার আগে লন্ডনে পালিয়ে যায়। দেশে ফেরেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে  হত্যার পর। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি দেশে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৯ সালে ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিলেট-১৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি হন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শাহ আজিজুর রহমান অংশের যুগ্ম মহাসচিবও হন।

সামরিক শাসক হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের সময়ে কায়সার আবার জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) থেকে ২ বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কৃষিপ্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল-২ সৈয়দ মো. কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনাল কায়সারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, যুদ্ধশিশু আটক, মুক্তিপণ আদায়, লুটতরাজ, ধর্মান্তরিতকরণ, অগ্নিসংযোগ এবং ষড়যন্ত্রের ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরমধ্যে ৭টি অভিযোগের ফাঁসি, ৪টিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড, ৩টিতে ২২ বছরের কারাদণ্ড ও ২টি অভিযোগ প্রমাণীত হয়নি। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের আপিল বিভাগ ১৪ই জানুয়ারি সৈয়দ মো. কায়সারের আপীলের দিন ধার্য্য রয়েছে।

প্রথম পাতা