নবীগঞ্জে ডেভিল হান্ট অভিযানে টাকার খেলা \ সর্বত্র আলোচনায় এসআই সুমন
তারিখ: ১৮-জুন-২০২৫
স্টাফ রিপোর্টার \

নবীগঞ্জে রেজিষ্টেশন ও ফিটনেস বিহীন একটি পুরাতন প্রাইভেট কারে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এখনো গাড়ির মালিকের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গজনাইপুর এলাকায় আলোচিত ওই ঘটনা ঘটে। গত ১৮ ফেব্রæয়ারী নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগের ডাকে নিরুত্তাপ হরতালের দিন ভোরবেলায় এ ঘটনা ঘটে। হরতাল ঘোষণার নামে অরাজকতা সৃষ্টির পায়তারাকে রুখতে ড. ইউনুস সরকার দেশ ব্যাপি ডেভিল বিরোধী অভিযানের নির্দেশ দেন। এরই জের হিসেবে অগ্নিকান্ডের ঘটনাকে পুজিঁ করে দায়েরকৃত মামলা নিয়ে শুরু হয় অভিযান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ সুমন মিয়া নবীগঞ্জ  উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করেন। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এ পর্যন্ত ২৩ জন গ্রেপ্তার করা  হয়। এ যেন নতুন রুপে পুরানো ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এ অভিযানে এসআই সুমনের বিরুদ্ধে বিস্তর মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একাই তিনি প্রায় দুই ডজন কথিত ডেভিল গ্রেপ্তার করেন। যার অধিকাংশই রাজনীতির মাঠে অচেনা ও পরিচিত মুখ। উপজেলা আওয়ালীগের নেতৃত্ব চিরচেনা ডেভিলখ্যাতদের অবাধ বিচরণ থাকলেও উল্লেখযোগ্য কাউকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ২৩ গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারকৃত পরিবারগুলোর দাবি স্থানীয় আধিপত্য, জমি এবং সিএনজি ষ্টেশন নিয়ে বিরোধের জের হিসেবে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রæয়ারী নিরুত্তাপ হরতালে একটি প্রাইভেট কারে রহস্যজনক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় পুলিশের দায়েরকৃত মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এনিয়ে অনুসন্ধানে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এসব গ্রেপ্তারের নেপথ্যে রয়েছে চুক্তি ভিত্তিক বাণিজ্য। এছাড়াও আলোচিত ওই এসআইর বিরুদ্ধে আওয়ামী ঘরনার লোকজনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাণিজ্যের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। 
এদিকে অভিযুক্ত এসআই সুমনের দাবি গাড়িতে অগ্নিসংযাগের মামলা তদন্তে প্রাথমিক তদন্তে সম্পৃক্ততার সন্দেহেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে অনেক আসামীকে। এনিয়ে অনিয়মের  কিছু নেই। সরেজমিন ও  ঘটনাস্থল অনুসন্ধানে প্রকাশ, চলতি বছরের ১৮ ফেব্রæয়ারী মহাসড়কের বালিদ্বারা বাজারনসংলগ্ন গজনাইপুর ইউনিয়নে জামেয়া ফুরকানিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার উত্তর পাশে ভোর সাড়ে ৬টায় রেজিষ্টেশন ও  ফিটনেস বিহীন একটি পুরাতন প্রাইভেট কারে অগ্নিকান্ডের অভিযোগ উঠে। রহস্যজনক ওই ঘটনায় জনসমাগম বা সংঘবদ্ধ লোকজনের কোন উপস্থিতি স্থানীয় লোকজন প্রত্যক্ষ করেনি। টহল পুলিশ ওই গাড়ির সন্ধান পায়। এ ঘটনায় স্থানীয় গোপলার বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই স্বাধীন চন্দ্র তালুকদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা লোকজনকে আসামী করে মামলা করেন। মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োজিত হন এসআই মোঃ সুমন মিয়া। এ ঘটনায় ৪ র্মাচ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের ষাটকাহন গ্রামের আব্দুল মন্নাফ চৌধুরীর ছেলে তৌফিক আহমদ চৌধুরী, একই দিনে আউশকান্দি ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রামের মৃত মন্তাজ মিয়ার ছেলে রব্বান মিয়া, ৬ র্মাচ আউশকান্দি ইউনিয়নের জিয়াদীপুর গ্রামের ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন, ৯ মার্চ ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের প্রজাতপুর গ্রামের আজিজুর রহমান, ২১ মার্চ উত্তর দেবপাড়া গ্রামের ইসকন্দর আলীর ছেলে রাসেল শরীফকে গ্রেফতার করা হয়। ২৫ মার্চ কুর্শি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য দিলবাহার আহমদ দিলকাছকে গ্রেফতার করে পুুলিশ। স্থানীয় বিরোধের জের হিসেবে জনৈক প্রবাসী তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছেন মর্মে আলোচনা রয়েছে। যুক্তরাজ্য প্রবাসী আওলাদ বেগের সাথে গ্রামের একটি সড়ক নিয়ে দৃশ্যমান বিরোধ রয়েছে। এছাড়া ২৬ মার্চ ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য  দিলবার হোসেন, ৮ এপ্রিল ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের প্রজাতপুর গ্রামের ইসমত উল্যার ছেলে সাদ মিয়া গ্রেপ্তার  হয়। সাদ মিয়ার সাথে গ্রামের বিশেষ একটি মহলের আধিপত্য নিয়ে দৃশ্যমান বিরোধ রয়েছে। একই দিনে বক্তারপুর গ্রামের মৃত আব্দুল আলীর ছেলে আবিদ আলী এবং নারায়ান্দি গ্রামের মৃত বাজিদ মিয়ার ছেলে জুনেদ মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৯ এপ্রিল আউশকান্দি  ইউনিয়নের পারকুল গ্রামের মুহিবুর রহমান নামের এক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। অবৈধ বালূ উত্তোলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কথা বলায় বিএনপির জনৈক প্রভাবশালী নেতার ইন্ধনে গ্রেপ্তারের অভিযোগ উঠে। ১০ এপ্রিল শহরের খালিক মঞ্জিলের সামনে থেকে দিনদুপুরে গ্রেপ্তার হয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহ ফয়ছল তালুকদার। ১৭ এপ্রিল ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মোস্তফাপুর গ্রামের আহাদ মিয়ার ছেলে গোলাম হায়দারকে গ্রেপ্তার করে হবিগঞ্জ ডিবি পুলিশ। পরে ওই গাড়ি পুরানোর মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। একই দিনে রিপন মিয়া নামের আরেক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই ঘটনায় পৌর এলাকার আনমনু গ্রামের কাউন্সিলর নানু মিয়াকে ২৩ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০ টায় শহরের একটি মার্কেটের সামন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০ এপ্রিল  বানিয়াচং উপজেলার তাজপুর গ্রামের  আব্দুল হামিদের ছেলে শফিকুন নুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সাথে ইমাম বাড়ী সিএনজি ষ্ট্যান্ড নিয়ে নুরুল আমিন গংদের বিরোধ রয়েছে। একই দিনে দেবপাড়া ইউনিয়নের ফুটারচর গ্রামের আবুল হাসান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পারিবারিক বিরোধের জের হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ২৯ এপ্রিল ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যসমেত গ্রামের কনা মিয়ার ছেলে আনসার চৌধুরীকে গ্রেপ্তার হয়। ৭ মে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের মৃত আব্দুল বাছিত চৌধুরীর ছেলে ছালেহ আহমদ চৌধুরী এবং পিরোজপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে কামাল আহমদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়াও দেবপাড়া ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের মৃত ফুলবাহার মিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীনকেও জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ লোকজন তাকে ধরিয়ে দেন এবং আউশকান্দি ইউনিয়নের চৈতন্যপুর গ্রামের মৃত মখলিছুর রহমানের ছেলের সৈয়দ শামসুর রহমান আতিককে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিটি গ্রেপ্তারের নেপথ্যেই রয়েছে অর্থনৈতিক বাণিজ্য। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ফ্যাসিবাদের প্রতিচ্ছবি হিসেবে অভিহিত করেন সুশীলসমাজসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।