স্থানে-স্থানে পিকেটিং ॥ খন্ড-খন্ড বিক্ষোভ মিছিল ॥ ফারুকী হত্যার প্রতিবাদে জেলায় সুন্নী জনতার নজিরবিহীন হরতাল
তারিখ: ১-সেপ্টেম্বর-২০১৪
দিদার এলাহী সাজু ॥

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শায়েখ আল্লামা শহীদ নুরুল ইসলাম ফারুকীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে এবং হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে গতকাল রবিবার সুন্নী জনতার ডাকে দেশব্যাপী অর্ধদিবস হরতাল হবিগঞ্জ জেলায় নজিরবিহীন ভাবে পালিত হয়েছে। হরতালে স্বতঃস্ফূর্ত জনতার অংশগ্রহণে অচল হয়ে পড়ে সমগ্র জেলা। স্থানে-স্থানে কড়া পিকেটিংয়ের কারণে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। মহাসড়ক থেকে আঞ্চলিক সড়ক পর্যন্ত সর্বত্রই ছিল যানশূন্য। কোথাও চলাচল করেনি হালকা থেকে ভারী যানবাহন। হরতালের সমর্থনে বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন হবিগঞ্জ শহরে করেছে বিক্ষোভ মিছিল। হয়েছে প্রতিবাদ সমাবেশ। শহরের প্রায় সবকটি পয়েন্টেই ছিল হরতালকারীদের সরব উপস্থিতি। ব্যস্ততম প্রধান সড়ক ছিল ফাঁকা। পথচারী ছাড়া ছিলনা কোন যানবাহন। সকাল ১১টার আগে মোটর সাইকেল, রিকসা ও টমটমের মত হালকা যানবাহনকেও চলাচল করতে দেখা যায়নি শহরে। তবে জেলাজুড়ে হরতাল ছিল শান্তিপূর্ণ। কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে, শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এলাকায় সকাল থেকেই অবস্থান নেয় হরতাল সমর্থকরা। কড়া পিকেটিং-এর কারণে  সেখানে তখন আটকা পড়ে শত শত দুরপাল্লার বাস ও ভারী যানবাহন। দুপুরে হরতালকারীরা গোল চত্ত্বর এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করে টায়ার জ্বালিয়ে। পরে অনুষ্ঠিত হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। এ ছাড়াও শায়েস্তাগঞ্জ পুরান বাজার, রেলওয়ে স্টেশন, চুনারুঘাট, মীরপুর, বাহুবল, পুটিজুরী, পানিউমদা, ফুলতলী বাজার, আউশকান্দি, নবীগঞ্জ, ইমাম বাড়ী, হবিগঞ্জ শহরতলীর উমেদনগর, লাখাই, সুতাং-শাহজী বাজার, নোয়াপাড়া, মাধবপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হরতালের সমর্থনে পিকেটিং, বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের কলিমনগরে গাছের গুড়ি ফেলে সকাল থেকেই কড়া পিকেটিং করে হরতালকারীরা।

এদিকে, হরতালের সমর্থনে জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার নেতা-কর্মীরা খন্ড খন্ড বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করেছে। বিক্ষোভ মিছিল শেষে চৌধুরী বাজার চৌরাস্তার মোড়ে ছাত্রসেনা জেলা সভাপতি মোঃ নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে  অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা অধ্যক্ষ এ.টি.এম নূর উদ্দিন জঙ্গী, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সচিব মাওলানা অধ্যক্ষ সোলায়মান খান রাব্বানী, জেলা সহ-সভাপতি মাওলানা আজিজুল ইসলাম খাঁন, সাধারণ সম্পাদক-অধ্যক্ষ গোলাম সরওয়ার, মাওলানা সাইফুল মোস্তফা, মাওলানা আবুল খায়ের শানু, জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ মোঃ ফারুক মিয়া, মাওলানা এম.এ জলিল, মুফতি আশরাফুল ওয়াদুদ, ডাঃ এস.এম সরওয়ার, মুফতী তাহির উদ্দিন ছিদ্দিকী, মাওলানা নাছির উদ্দিন, মাওলানা আব্দুল আলীম, যুবসেনা আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান, সদস্য সচিব মাওলানা আবু তাহের, ছাত্রসেনা জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ বায়েজিদ আহমদ খাঁন, তাজুল ইসলাম, শেখ আইয়ূব আলী, আলহাজ্ব বুলবুল চিশ্তী, মাওলানা রেদোয়ানুল হক আশরাফী, মাওলানা মঈন উদ্দিন আশরাফী প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন-“আজকের হরতাল সুন্নী জনতার সফল হরতাল। এ হরতালে যানবাহন শ্রমিক-মালিক সমিতি, ব্যবসায়ী সমিতি, কর্মচারী, সাংবাদিক, প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সকল সহযোগীতাকারীদের ধন্যবাদ জানাই।” তারা বলেন, “এ আন্দোলন শেষ আন্দোলন নয়, যতদিন পযর্ন্ত শহীদ ফারুকীর হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়া হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনার ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।” সমাবেশে দোয়া পরিচালনা করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সভাপতি মাওলানা এম.এ মোহিত।

এদিকে,  শায়েস্তাগঞ্জ ষ্টেশন, কলিম নগর, নতুন ব্রীজ, পুরান বাজার এলাকায় পিকেটিং শেষে নতুন ব্রীজে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট জেলা সভাপতি অধ্যাপক শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সচিব মাওলানা আলী মোহাম্মদ চৌধুরী, মাওলানা সাহাব উদ্দিন, হারুনুর রশিদ, আব্দুল ওয়াহিদ বাচ্ছু, মাওলানা আব্দুল কাদির বিপ্লবী, ছাত্রসেনা জেলা সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ্ আলম প্রমুখ।

শেষ পাতা